somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কখনো বলা হয়নি,কিন্তু আজ বলব-আম্বিয়া আপা-আপনাকে ধন্যবাদ!!!

১৫ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগের কথা বলছি,সেই ১৯৯৭ সাল।ভিকারুন্নিসা স্কুল এর ধানমণ্ডি শাখায় ১ টা করে সেকশন বাড়ানো হয়েছে,এর জন্য ছাত্রী ভর্তি করান হবে।বাংলাদেশের সব বাবা-মাদের মাঝে যেন আনন্দ ও আশার বন্যা বয়ে গেল।যারা নিজেদের মেয়েদের ক্লাস ১ এ ভর্তি করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন,তারা ফর্ম কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পরলেন।ছোট ছোট মেয়ে গুলার উপর পড়াশোনার ষ্টীম রোলার চালানো হল।চান্স পেতেই হবে!!আমার বাবা ভোর ৫ টায় গিয়ে লাইনে দাঁড়ালেন,ফর্ম পেলেন দুপুর ১২টায়!!!যাই হোক,নির্দিষ্ট দিনে এই ছোট্ট আমির হাত ধরে আমার বাবা মা আমাকে পরীক্ষা দেয়াতে নিয়ে গেলেন।গিয়ে দেখি-ওরে বাবা!!!মানুষের মাথা মানুষ খায়!!!ভয় পেয়ে গেলাম।আমাকে অভয় দিয়ে আমার আব্বু আমাকে ঢুকিয়ে দিলেন হলে।পরীক্ষা দিলাম।রেজাল্ট দিল,চান্স পেলাম!আমার বাবা-মা সব আত্মীয়- স্বজন আর পাড়ার মধ্যে মিষ্টি বিতরন করলেন।সবাই বাসায় এসে, ফোন করে আব্বু আম্মু কে অভিবাদন দিয়ে গেল।ভিকারুন্নিসায় মেয়ে চান্স পেয়েছে, চাট্টিখানি কথা নাকি???
এই হল আমাদের স্কুল-ভিকারুন্নিসা-a legendary school in Bangladesh!!ঐতিহ্যে সাফল্যে গর্বে মহিমান্বিত!প্রতি বছর এই স্কুল-কলেজ থেকে এস.এস.সি,এইচ.এস.সি তে অসাধারন ফলাফল!!পেপার গুলাতে,টিভি চ্যানেলগুলাতে দেখায় হাজার হাজার মেয়ে আকাশী নীল ইউনিফর্ম পরে ভিকট্রি সাইন দেখাচ্ছে!কারন টা কি??কারন টা হল এই স্কুল এর ডিসিপ্লিন আর এই স্কুলের টিচাররা।তারা আমাদের হাতে ধরে আলক বর্তিকার পথে নিয়ে গেছেন,ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করা শিখিয়েছেন,শিক্ষিত হবার পাশা পাশি একজন ভাল মানুষ হতে শিখিয়েছেন।এই স্কুলেই আছে আম্বিয়া আপার মত সিনিয়র শিক্ষিকা,যিনি বছরের পর বছর প্রিন্সিপাল এর পদের জন্য না করে এসেছেন।দেখেছি হামিদা আলি আপার মত শিক্ষিকা,যার শক্ত হাত ধরে এই স্কুল উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল।দেখেছি মহসিন স্যার,শুভাস স্যার,মাহমুদ স্যার,হাস্নাত স্যার এর মত শিক্ষক,যারা ছিলেন আমাদের পিতার সমান।মনে আছে একদিন হাস্নাত স্যার আমাক জিজ্ঞেস করেছিলেন-গতদিন ক্লাস এ আসনি কেন।স্যার কে বললাম-জ্বর ছিল।স্যার পরম মমতায় এগিয়ে এসে কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে বল্লেন,তাহলে আজকে আসলা কেন?সুস্থ না থাকলে কেমনে এ+ পাবা???দুই বোর্ড পরীক্ষায় গোল্ডেন এ+ পাবার পর স্যার,আপা দের যখন সালাম করতে যাই,পা ছুঁতে পারিনা।তার আগেই বুকে টেনে নেন,চোখে জল,মাথায় আশীর্বাদের হাত।ইন্টারে গোল্ডেন এ+ পাবার পর যখন আম্বিয়া আপার সাথে দেখা করতে যাই,আপা ২ হাত দিয়ে আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে বললেন-“রোল ১০০,ভাল মানুষ হইস মা!দেখিস এই গোল্ডেন এ+ যেন পোকায় না কাটে!”
এখন আসি বর্তমান ভিকারুন্নিসার কথায়।আজকাল মনে হয় ঢাকার অর্ধেক মেয়েই ভিকারুন্নিসায় পরে।অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে একের পর এক ব্রাঞ্ছ।শিক্ষার মান নেমে এসেছে,নেমে এসেছে পড়াশোনার স্ট্যান্ডার্ড,টিচারদের স্ট্যান্ডার্ড।এখন এই স্কুলে পরিমলের মত শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়,যে কিনা তার সন্তান-সম ছাত্রী কে ধর্ষণ করে,আর ধর্ষণের কারন হিসাবে বলে-মেয়ে টি স্কারট টপস পরে ক্লাস করতে আসে!!পরিমলের কাছে আমার প্রশ্ন-“তর মেয়ে যদি তোর সামনে এই পোশাক পরে আসে,তাহলে কি তুই তাকে ধরেও রেপ করবি নাকি?তর ছাত্রীরা তো তোর মেয়ের মতই!”এই স্কুলে এমন অধ্যক্ষাকে বসানো হয়,যে কিনা ধর্ষককে সমর্থন করে!দিনের পর দিন উন্নয়নের কথা বলে ছাত্রী দের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়,কিন্তু উন্নয়ন আর হয়না!টিচার দের বাসায় কোচিং করতে বাধ্য করান হয়।সেই রকম কোচিং গুলা তে আবার পরিমলের মত জানোয়াররা ধর্ষণ লীলা চালায়!
এই কয়েকদিন ভিকারুন্নিসায় কি হল,না হল,তা সারাদেশ জেনে গেছে।সেসব নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না।আমি শুধু এটাই বলতে চাই,ভিকারুন্নিসা কোন পলিটিকাল স্কুল না। কোন কালেই আমরা কেউ পলিটিকস এর সাথে জড়িত ছিলাম না।এতদিন ভিকারুন্নিসার জন্য অতীত ও বর্তমান ভিকিরা যে আন্দোলন করে আসল,তা কেবলমাত্র ভালবাসার খাতিরে।ভিকারুন্নিসা আমাদের মাএর মত।মায়ের ইজ্জত যখন ভূলুণ্ঠিত হয়,তখন সন্তানরা এগিয়ে আসবে,এটাই স্বাভাবিক। ভিকারুন্নিসা আমাদের অনেক দিয়েছে,সময় এসেছে আমাদের প্রতিদান দেয়ার। আম্বিয়া আপার মত মানুষরাই আমাদের শিখিয়েছেন,ক্ষমতা বড় নয়,ভাল মানুষ হওয়াই আসল।সেই আপাকে যখন একটা ঘৃণ্য রাজনৈতিক দলের লোক বলে অপবাদ দেয়া হয়,তখন আমরা ভিকিরা প্রতিবাদ করবই।নাহলে আপাদের দেয়া শিক্ষাই যে বৃথা হয়ে যায়!
কাল রাত পর্যন্ত আমাদের স্কুলের পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।মঞ্জু আরা আপা আমাদের নতুন প্রিন্সিপাল।আমরা সবাই খুবই খুশি।সেই সাথে আম্বিয়া আপাও খুশি। আপার সাথে অনেক বড় অন্যায় করা হয়েছে,যে আপা এত বছর পর প্রিন্সিপাল হন শুধু আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে,সেই আপা কে রীতিমতো অপমান করে অপসারন করা হল। সেই আপা কেই দেখি হাসিমুখে নতুন প্রিন্সিপাল আপাকে মিষ্টি খাওয়াতে।সব মিডিয়া এসে আমাদের প্রশ্ন করে,আমরা আগের ভিকিরা কেন এত আন্দোলন করছি?আমরা আন্দোলন করছি,কারন আম্বিয়া আপার মত শিক্ষিকারা আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্তের বীজ বপন করে দিয়েছেন।আজ ভিকারুন্নিসা থেকে পাস করে বের হবার ৫ বছর পরেও আম্বিয়া আপা আমাদের শিক্ষা দিয়েই চলেছেন-শিক্ষা দিচ্ছেন কিভাবে এতটা নির্লোভ হওয়া যায়,কিভাবে ত্যাগ স্বীকার করা যায়।অসীম সমুদ্রের সামনে দাঁড়ালে নিজেকে অনেক ক্ষুদ্র বলে মনে হয়!আজ আম্বিয়া আপার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুবই ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে।কখনো বলা হয়নি আপা,কিন্তু আজ বলব-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপা!
আজকাল দেশে গনতন্ত্রের গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে।দেশের মিডিয়া,সংবাদপত্র,মানুষ কারোরই স্বাধীনতা নেই। ভিকারুন্নিসা আমাকে শিক্ষিত করেছে,আজ আমি একজন ডাক্তার।অসীম সম্ভাবনা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।ইচ্ছা করছে এই দেশ ছেড়ে চলে যাই।কিন্তু যাবনা।কারন সব কিছুর পরেও আমি আমার দেশ কে ভাল বাসি।এই শিক্ষাও আমাদের আমার স্কুলই দিয়েছে।এখন আপনারাই বলুন,যারা দেশ কে ভালবাসে,তারা কি জামায়াতপন্থি হতে পারে??
তবুও আমরা আশাবাদি।মঞ্জু আরা আপার হাত ধরে ভিকারুন্নিসা আবার আগের অবস্থানে এগিয়ে যাবে। আবার দেশের সব মেয়ের বাবা মা রা মেয়েকে ভিকারুন্নিসায় ভর্তি করার স্বপ্ন দেখবে।আম্বিয়া আপার মত মানুষেরা মেয়েদের শিক্ষা দিয়ে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন।একটা কথা বলে রাখি,যত যা কিছুই হোক, আমরা ভিকি আছি,ভিকি থাকব।আমাদের পুণ্যভূমি ভিকারুন্নিসার উপর কোন আঘাত আসলে আমরা ঝাপিয়ে পরব।আমাদের পলিটিকাল বলে অপবাদ দেয়া হক,বা বেয়াদব বলে গালি দেয়া হক,আমাদের কিছুই আসে-যায় না।
আজকাল দেখতে পাচ্ছি কিছু মানুষ বলছে-এক হাতে নাকি তালি বাজে না!আমাদের ভিকারুন্নিসার মেয়েদের নাকি দোষ আছে।আমরা নাকি উগ্র।তাদের উদ্দেশে বলব-অবশ্যই আমরা উগ্র!উগ্র না হলে কি আর এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোদে পুড়ে,বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলন করি আমাদের স্কুলের জন্য?এদেশের নারিশিক্ষা আকাশ ছুঁয়েছে ভিকারুন্নিসার হাত ধরে।আজ আমরা ছেলেদের চেয়ে কোন অংশে কম না!আজ আমরা ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,আর্কিটেক্ট,আর কত কি!!!এসব তো অবশ্যই উগ্রতা! মেয়ে দের তো উচিত ঘরে বসে থেকে শুধু ঘরের কাজ করা,তাই না?আচ্ছা,আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো? সৌদি আরবের সব মেয়েরা তো বোরখা পরে, তাহলে ওখানে কেন রেপের ঘটনা ঘটে?? কয়েকদিন আগে পেপারে পরলাম মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে এক মাদ্রাসার শিক্ষক রেপ করেছে।মেয়েটা তো বোরখা পরা ছিল!! ধর্ষণ এর কারন আসলে পোশাক আর উগ্রতা নয়,কিছু অমানুষের নিয়ন্ত্রনের অভাব! যারা এসব কথা বলছেন,তাদের জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে যে আপনারা ভিকারুন্নিসার মত স্কুলে পরার সুযোগ পাননি। পেলে হয়ত এই ধরনের মানুসিকতা নিয়ে বড় হতেন না।
যাই হোক,আমরা আজ সব ভিকিরা অনেক আশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি।আশা করব পরিমলের মত মানুষরা যেন দ্রুতই শাস্তি পায়।তখন একবার স্কুলে গিয়ে আম্বিয়া আপা কে সালাম করে আসব।নতমস্তকে বলব-“আপা,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!”
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×