somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মের চাদরে অদৃশ্য মওলানা ভাসানি

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মওলানা ভাসানীর পরিচয় নতুন করে দেবার খুব একটা প্রয়োজন নেই বরং দেয়াটাই বোকামী। কারণ তার সম্পর্কে জানাশোনা লোকের অভাব এই বাংলায় নেই। তিনি যেমন মওলানা ছিলেন তেমনি ছিলেন মজলুমেরও নেতা। তার সুনির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শ ছিল এবং তার মানসপটে আঁকা ছিল ভবিষ্যত বাংলাদেশের নীল নকশা। নীল নকশা শব্দটি যদিও আমরা বেশ নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করি কিন্তু এখানে শব্দটি আমি ইতিবাচক ও বহৎ অর্থেই ব্যবহার করেছি। কারণ বৃটিশ ভারত থেকে শুরু করে পাকিস্তান হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি যেমন পাকিস্তানের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশেও বিস্তার করে গেছেন গভীর রাজনৈতিক প্রভাব। অবশ্য স্বাধীন দেশে বিচরণের খুব একটা সময় মৃত্যু তাকে দেয়নি। (আওয়ামী লীগের ইতিহাস, আবু আল সাইদ, পৃষ্ঠা: ৬৬)

মওলানা ভাসানী একজন উঁচু মাপের নেতা হলেও তারও কিছু নেতিবাচক দিক ইতিহাসে স্পষ্ট হয়ে আছে। আওয়ামী লীগ গঠন, শেখ মুজিবের সাথে দ্বন্দ্ব এবং শেষ পর্যন্ত নিজ প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগে ভাঙ্গন সৃষ্টিতে তিনি নিজেও যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। হতে পারে নিজ বিবেচনায় কিংবা হতে পারে তাকে ঘিরে থাকা কথিত তাত্ত্বিকদের প্ররোচনায়। তাছাড়া ভাসানী সম্পর্কে এ কথাও বলা যায়, তার এক ধরণের রহস্যময় অবহেলার কারণেই শেখ মুজিবর রহমান আওয়ামী লীগের কান্ডারি হতে উঠেছিলেন। কারণ শেখ মুজিব যখন পূর্ব পাকিস্তানের জনপদ থেকে জনপদে ঘুরে বেড়িয়েছেন সে দিনগুলোতে মওলানা ভাসানী অজানা কারণে অবস্থান করেছেন বিদেশে। ১৯৫৫ সালের নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভা পিছিয়ে দিয়ে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দাওয়াত কবুল করেছিলেন করাচিতে অনুষ্ঠিত কাশ্মির সংক্রান্ত একটি আলোচনা সভার। ভাসানীর এমন সিন্ধান্তের প্রতিবাদ করে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ইত্তেফাকে লিখেছিলেন, ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং-এ যাওয়ার চেয়ে সর্বদলীয় কাশ্মীর সংক্রান্ত সংলাপ কোন ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়।’ তাছাড়া শেখ মুজিবর রহমানের সাথে তার যে দ্বন্দ্ব চলছিল তা এক অর্থে শেখ মুজিবর রহমান নিজেই মিটিয়ে ফেলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে মুজিব নিজে সন্তোষ গিয়ে ভাসানীর সাথে কথা বলেন এবং যুক্ত বিবৃতি প্রদান করে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের ব্যপারে ঐকমত্যে পৌঁছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত থেকে বের হয়ে মওলানা ভাসানী নতুন বিবৃতি দিয়ে এককভাবে কমিটি সংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষনা করেছিলেন। যা আওয়ামী লীগকে ক্ষত-বিক্ষত করে প্রচন্ডভাবে। যা শেষ পর্যন্ত সমাপ্ত হয় ভাঙনের মধ্য দিয়ে। (আওয়ামী লীগের ইতিহাস, আবু আল সাইদ, পৃষ্ঠা: ৮৪-৮৫)

যাই হোক, জীবিত মওলানা ভাসানী সে সময় আবৃত ছিলেন বামপন্থী তাত্ত্বিকদের দ্বারা। এসব তাত্ত্বিকেরাই তাকে বুঝাতেন, পরামর্শ দিতেন এবং মূলত তাদের কারণেই তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন মূল ধারার রাজনীতি থেকে। তার বামপন্থী উপদেষ্টারা নাস্তিক্যবাদী হলেও ভাসানীর মধ্যে আধ্যাত্তিকতাও ছিলো। ধর্মের প্রতি তিনি ছিলেন অনুরক্ত। লোকে বলে, তার মধ্যে কিছু কিছু অলৌকিক নিদর্শনও নাকি বিভিন্ন সময় লক্ষ করা গেছে। মানুষ অলৌকিকতা পছন্দ করে। আর এই মেকি পছন্দই দিনে দিনে গ্রাস করেছে ভাসানীকে, তার রাজনীতিকে। বাস্তবতায় মওলানা ভাসানী এখন আর কোন রাজনীতিবিদ নন। জনতা ও তার এ যুগের কিছু অনুসারী তাকে পীর বানিয়ে ছেড়েছে। মৃত মওলানা ভাসানী এখন হয়ে উঠেছেন পীর সাহেব; তাদের ভাষায় হুজুর। ভাসানীর মৃত্যু দিবস ছাড়া অন্য সময়ে কেউ যদি টাঙ্গাইলে যান তবে দেখবেন ভাসানী কোন রাজনৈতিক নেতার নাম নয়, খুঁজে পাবেন না তার রাজনৈতিক কোন দর্শন। মনে হবে, মওলানা ভাসানী একজন আদর্শ পীর বাবা। তার ওরশ হয়, তার দাড়ি-টুপিওয়ালা কিছু ভক্ত আছে, যাদের মধ্যে ধর্মের লেশ মাত্র নেই আছে শুধু পীর ভাসানীর (!) প্রতি অগাধ অনুরাগ। এই সব ভক্তদের মুড়ে দেওয়া চাদরে প্রকৃত ভাসানী আজ তিরোহিত। দুদিন আগে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও লেখক ফরহাদ মাজহার এসেছিলেন কাগমারীতে। ভাসানী, তার রাজনীতি ও ধর্মের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে ফরহাদ মাজহার খুব চমৎকার ভাষণ দিয়েছেন। পরে আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ধর্মের চাদরে ভাসানীকে আবৃত করা নিয়ে আপনার অভিমত কী? তিনি বলেছিলেন, এ সমস্যা দূর করতে টাঙ্গাইলবাসীকেই অগ্রনী ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ সমস্যাটার সূত্রপাত এখান থেকেই।

তাই টাঙ্গাইলবাসীদের প্রতি আহ্বান, আসুন মওলানা ভাসানীকে ধর্মীয় নেতা হিসেবে নয় তুলে ধরি রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। আমাদের মনে রাখা উচিত, ভাসানী একজন কিংবদন্তি।
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×