আকাশে পাখির মত ওরার স্বপ্ন মানুষের বহুকাল আগে থেকে। তবে তার বাস্তবায়ন শুরু হয় এই শতাব্দির শুরু থেকে। এখন আমরা বিশাল সব এরো প্লেন ব্যবহার করছি যাত্রি বহন হতে শুরু করে একটা আস্ত ট্রেন বহন করার জন্য। ব্যবহার করছি যুদ্ধে। তবে এটাকি শেষ?? নাকি সামনে আরো আছে?? কি হতে পারে প্লেন টেকনোলজির??
চলুন দেখে নেয়া যাক এধরনের ১০ টি ভবিষ্যৎ টেকনলজির।
১০) The Airbus Transparent Plane
২০৫০ সালের একটা পরিকল্পনা। ইউরোপের বিমান নির্মান কোম্পানি এটা পরিকল্পনা কারি। মুলত যাত্রিদের বিশেষ কিছু সুবিধা দেবার জন্য এটি নির্মান করা হবে। এখানে প্লেনের মুল ডিজাইন বার স্ট্রাকচার ঠিক থাকবে কিন্তু চেঞ্জ হবে ভিতরের অনেক কিছু। যেমন বিমানে প্রবেশ করার সময় একটি টাচ স্ক্রিনে তাদের হাতের তালু প্রেস করলে তার চেকইন হবে। সিট গুলো এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে যাত্রির সাইজ এবং ওজন অনুসারে এটি প্রসারিত বা সংকুচিত হতে পারে। এছারা এটি সকল যাত্রির শরিরের টেম্পারেচার কন্ট্রোল করবে।
এর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল যাত্রিরা খোলা আকাশ এবং চারপাশের পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন। স্বচ্ছ দেয়াল এবং ছাদ থাকার ফলে আকাশে স্কাই ডাইভিং এর রিয়াল অভিজ্ঞতা পাবেন এর যাত্রিরা।
০৯) The Green-Airways Flying Saucer
ফ্লাইং সসার। পৃথীবির মানুষ ভিন গ্রহের বা এলিয়েন যান মানেই মনে করে এটাকে। ঠিক এই জিনিষটাকেই বাস্তবে রুপ দিতে চাচ্ছে গ্রিন এয়ারওয়েজ। ডেলফ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক Etnel Straatsma এটা নিয়ে বর্তমানে কাজকরছেন। যদিও তার ডিজাইন এখনো কাগজে কলমে আছে। তবে ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির সহকারি অধ্যাপক সুব্রত রয় দাবী করেছেন তিনি একটি ওয়ার্কিং মডেল তৈরি করেছেন। এবং সেটি এবছরের শেষের দিকে টেস্ট করবেন। তিনি যে থিওরিতে কাজ করছেন সেটিতে যদি সফল হয়ে যান তবে এরোস্পেস এর সকল হিসাবনিকাশ বদরে যাবে।
০৮) The Skylon Surface-To-Orbit Plane
পৃথীবি থেকে অরবিটে যেতে এখনো আমদের বিশাল ইঞ্জিনের থ্রাস্ট দ্বারা অভিকর্ষ বলকে পরাজিত করতে হয়। যখন এই আকর্ষনের বাইরে রকেট গুলো চলে যায় তখন একটা ছোট ইঞ্জিনই পুরো যানটিকে চালাতে পারে। কিন্তু এই বার আর তা লাগবে না। স্কাইলনের এই স্পেসশিপটি বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনকে তার জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে প্রচন্ড থ্রাস্ট সৃস্টি করবে এবং পৃথিবির বাইরে অরবিটে চলে যাবে। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে এর জন্য বারবার নতুন ইঞ্জিন এবং জ্বালানি রিফুয়েলিং এর প্রয়োজন পরবে না। এটি চালু হয়ে গেলে পৃথিবির অর্বিটে বিশাল বিশাল স্টেশন নির্মান করা খুব সহজ হয়ে যাবে। এবং আকাশ যুদ্ধের সুত্রপাত হবে। মজার ব্যপার হল এর কাজ প্রায় ৯০% সম্পন্ন হয়েগেছে। অর্থনৈতিক মন্দা না থাকলে এই প্রযেক্টের কাজ এতদিনে শেষ হয়ে যেত।
০৭) The X-51A Waverider
বিংশ শতকের শুরুর দিকে লন্ডন থেকে নিওয়র্ক যাইতে সময় লাগত ৩ দিনের মত। আটলান্টিক পারি দেবার জন্য তখন থেকে দ্রুত কিছু পরিবহনের চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছিল। এখনকার পেসেঞ্জার প্লেন গুলো সর্বনিম্ন ৭-৮ ঘন্টা সময় নেয় আটলান্টিক পারি দেবার জন্য। তবে বোয়িং এর এই যাত্রিবাহি বিমানটি এখন সময় নেবে এক ঘন্টারও কম সময়। কারন এর স্পিড থাকবে ম্যাক-৬ এর কাছাকাছি। তার মানে প্রায় ৪,০০০ মাইল প্রতি ঘন্টা। কিছুদিন আগে এটা এক টেস্টে ম্যাক-৫ কে ছারিয়েছে।
০৬) The Aeroscraft Dirigible Airship
কল্পনা করেন একটা আস্ত জাহাজ আকাছে উরতেছে। কি মনে হয়?? অসম্ভব?? ওনারা এটা অলরেডি বানানো শুরু করে দিছে। এটা একটা পন্যবাহি এয়ারশিপ। মোটামুটি ৪০০ টন ওজন বহন করতে পারবে। হিলিয়াম গ্যাস ব্যবহার করবে ফুয়্যেল হিসাবে। তবে এটির সম্পর্কে কম্পানিটি অনলাইনে খুব কম তথ্যই সরবরাহ করেছে।
০৫) The QUEIA 2058 Concept Craft
ভবিষ্যত মিলিটারি প্লেন সম্পর্কে জানাটা আসলেই খুব দুঃসাধ্য কাজ। এই কনসেপ্ট টি ডিজাইন করেছেন মায়ামি ইউনিভার্সিটি ছাত্ররা নাসার একটা ডিজাইন প্রতিযোগিতায়। তাদের এই বিমানটিতে রয়েছে এক্সট্রা কিছু পাথনা, রয়েছে অসম্ভব স্পিড। এটির ডিজাইন এমন ভাবে করা হয়েছে যে এর বানানোর খরচ অনেক কম হেব এবং মেইনটেনেন্স খরচ হবে খুব লো। এছারা এটি ওরার জন্য খুব জায়গা নেবে এবং ভার্টিক্যলি ল্যান্ড করতে পারবে। অস্ত্র সম্পর্কে তেমন ধারনা পাওয়া যায়নি। যেই টিমটি এটির ডিজাইন করেছিল তারা এখন নাসা, বোয়িং সহ বেশকিছু বিমান নির্মান কোম্পানিতে কাজ করছে।
০৪) The MagLev Air Urban Transport
এই ডিজাইনটি এখনো ধারনাগত পর্যায়ে আছে। তিনজন বিজ্ঞানি এই প্রযেক্টটির ডিজাইন করেছেন এবং এর উপর বেশ কিছু সফল টেস্ট করেছেন। এর মধ্যেই বেশ কিছু মেগা সিটির নগর পরিকল্পনাবিদদের মাথায় এটা নিয়ে একটা নারাচারা শুরু হয়ে গেছে। মুল ব্যাপারটি হল এমন একটা সিস্টেম যেটা ছোট ছোট উরন্ত গারিকে কে উরার জন্য সাহাজ্য করবে। অনেকটা স্পেস সাটল এর মত। তবে এটি এক ধরনের মেগনেটিক সিস্টেম ব্যবহার করবে যাতে শব্দ অনেক কম হবে।
মনে করেন আপনি সকাল বেলায় অফিসের জন্য রেডি হয়ে স্টেশনে আসলেন আপনার জন্য নির্ধারিত গারিটিতে উঠলে। গারিটি এ রকম একটা সিস্টেম এর মাধ্যমে আকাশে আপনাকে উরাল দিল এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনাকে নির্ধারিত গন্ত্রব্যে পৌছে দিবে কোন জ্যাম ছারা।
০৩) Lockheed Martin’s SkyTug Hybrid Airship
আমেরিকার বিখ্যাত বিমান নির্মান প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন এটার ডিজাইন করছে। দেখতে কিছুটা দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ারক্রাফ্ট কেরিয়ার এর মত। এর ফিচার গুলো হল অবশ্যই বিশালত্ব। একটা আর্মি ইউনিট এক সাথে বহন করতে পাররবে তাদের সকল ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া যান সহ। এটি ভার্টিক্যালি টেক অফ এবং ল্যান্ড করতে পারবে। এটি যেকোন সময় যেকোন স্থানে ল্যান্ড করতে এবং টেক অফ করতে পারবে। এছারা এটি মাটি থেকে সামান্য উপরে ভাসমান অবস্থায় উরতে পারবে যার ফলে এটি চালানোর জন্য কোন চাকার প্রয়োজন হবে না। একটা ভিডিও দেখুন এর উপরে
০২) The DARPA/Boeing DiscRotor
ভার্টিক্যাল ভাবে বিমানের উড্ডয়ন এবং অবতরনের চিন্তু ভাবনা দির্ঘদিন ধরে চলছে। এটাকে বলা হচ্ছে এই পরিকল্পনার একটা বিশাল প্রাপ্তি। এর মুল ফিচার হল এর ডিস্করোটর টি। এটি একটি বিমান কে হেলিকপ্টার এর মত উড্ডয়ন করাবে তার পর নির্দিস্ট উচ্চতায় গেলে সেটি ভাজ হয়ে পাখার আকার ধারন করবে এবং বিমানটির গতি বর্ধনে সহোযোগিতা করবে। নির্দিস্ট উচ্চতায় উঠার পর এর জেট ইঞ্জিনগুলো থ্রাস্ট দিবে এবং এটি তার আপন গতিতে চলতে শুরু করবে। হেলিকপ্টারের সাথে এর পার্থক্য হচ্ছে এটি হেলিকপ্টারের ব্লেড এর বদলে ডিস্করোটর ব্যবহার করবে এবং এর স্পিড হেলিকপ্টর এর থেকে অনেক বেশি হবে এবং অনেক ক্ষেত্রে একটা যাত্রি বাহি বিমানের কাছাকাছি হবে। একটা পরিক্ষা দেখুন এই মডেলটির।
০১) The Icon A5
এই বিমানটা বর্তমান প্রজন্মের একটা স্বপ্ন বলে বিবেচিত হচ্ছে। কারন এটির ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন শুরু হবে আগামি বছরে মাঝামাঝি সময়ে। আমরা প্রায় বিভিন্ন মুভিতে উরন্ত গারি দেখি। এটি তার বাস্তবিক প্রয়োগ। এটির দুটি পাখা আছে যা ভাজ করে রাখা যাবে এবং খুব অল্প রানিং এ উরতে পারবে। দুই আসনের এই উরন্ত গারিটি আপনি যে কোন সময় আপনার গ্যরেজে রাখতে পারবেন এবং যে কোন সময় বের করে উরাতে পারবেন। খালি পাখা দুটি ভাজ করা এবং খুলতে হবে। এর দাম ও হবে অনেক কম। একটা পোরশে ৯১১ টারবো গারির চেয়ে এটির মুল্য অনেক কম হবে। মাত্র এক লক্ষ চল্লিশ হাজার ডলার। চিন্তা করেন আপনে ঢাকার সকল জ্যামকে পাশ কাটিয়ে আকশের উপরদিয়া অফিসে উরে যাচ্ছেন আবার অফিস শেষে বাসায় আসছেন। এ সংক্রান্ত ভিডিওটি দেখলে আরো জানতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১৯