somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার সাইড এফেক্ট। -ছোট গল্প।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিলিমা আর হাবিব।
হাবিবুর রহমান হাবিব।
ফুটফুটে নীলাকে নিয়ে ৩ জনের সুখের সংসার। নীলার বয়স আড়াই বছর। নিলিমার সাথে মিল রেখে হাবিব নিজেই তার মেয়ের নাম রেখেছে নীলা।
প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে মোটামুটি ভালই কেটে যাচ্ছিলো হাবিবের সুন্দর সংসার। কিন্তু হটাত ভালবাসার সাইড এফেক্টে বড় অসহায় হয়ে যায় হাবিব।
গ্রামে বড় হয়ে শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করলেও হাবিব এখনো অনেকটা লাজুক। অপরদিকে নিলিমা শহুরে ব্যাবসায়ীর আধুনিক মেয়ে।
সংসার দেখাশুনা, বাচ্চার লালন পালন এবং বাকি সময় ফেসবুকে বন্ধুবান্ধবের সাথে চ্যাট করে ভালই টাইম পার হয়ে যায় নিলিমার।
হাবিব অফিস থেকে এসে নিলিমার সাথে খেলাধুলা করে হাসি খুশি সময় পার করেন। কিছুদিন আগে নিলা তাকে ফেসবুকে এক্টা একাউন্টও খুলে দিয়েছে। মাঝে মধ্যে ফেসবুকেও ঢুকে হাবিব। কিন্তু বেশি বন্ধু না থাকায় মজা খুঁজে পায় না।
হাবিব অফিসে থাকাবস্থায় নিলিমা ইদানীং ইনবক্সে তার সাথে টুকটাক চ্যাট করে। খোঁজখবর নেয়।
একদিন চ্যাটিং এর সময় নিলিমা হটাত লিখে আই লাভ ইউ। লাজুক হাবিব রেস্পন্স করতে না পেরে হাসির ইমো দেয়। আর তাতেই বেধে যায় যত বিপত্তি।
প্রতিদিনের মত স্বাভাবিক ভাবে বাসায় ফিরলেও আজ নিলিমাকে স্বাভাবিক মনে হলো না। কথা নাই বার্তা নাই, খাওয়া শেষে তরিঘরি করে ঘুমিয়ে যায় নিলিমা। সকালে নিজে নিজে নাস্তা খেয়েই অফিসে চলে যায় হাবিব।
কাজের ফাঁকে ফাকেঁ ফেসবুক চেক করে, কিন্তু নিলিমা আজ কোন নক করে না।
এদিকে নিলিমা অভিমান শেয়ার করে তার বান্ধবীদের সাথে। বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করে হাবিব কি তাহলে আমাকে ভাল বাসে না? সে কি অন্য কাউকে ভালবাসে? এমনটা হলে তো সর্বনাশ। একবান্ধবী বললো: সহজ সরল হাবীবের মনে এত প্যাঁচ সেটা কে জানতো, তাকে দেখে সেটা বুঝাই যায় না।
হাবিব অফিস শেষে বাসায় ফিরে দেখে নিলিমা আগের মতই গোস্বা হয়ে আছে। টেবিল থেকে নিজ হাতে খাবার বেড়ে খেয়ে নিলিমার পাশে এসে বসে। জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? কাল থেকে এমন করে আছো কেনো? নিলিমা কথা বলে না। অনেক অনুরুধের পর নিলিমা মুখ খুলে। হাবিবকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি আমাকে ভালবাসো? লজ্জা পেয়ে হাবিব থতমত খেয়ে যায়। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পরে। কোন উত্তর দিতে পারে না। নিলিমা কিছু না বলেই শুয়ে পরে।
সকালে ঘুম থেকে নিলিমা উঠে না। হাবিব বাহিরে নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে যায়। হাবিব চিন্তায় পরে যায় নিলিমার হটাত কি হলো? বিয়ের এতদিন পর নিলিমা এমন আচরন করছে কেনো?! অফিসের কাজে মন বসে না তার। দুপুরে ফোন দিয়ে বাচ্চার সাথে কথা বলতে চায়, কিন্তু নিলিমা ফোন রিসিভ করে না।
অফিস শেষে চা খেয়ে চিন্তা করতে করতে বাসায় ফিরে সে। নিলিমার ভাবমূর্তি আজ আরো খারাপ। গোসল করে নি, বাচ্চাকে গোসল করায় নি। রান্না ও করে নি। ফ্রিজের বাসি খাবার খেয়েই নিলিমা শুয়ে পরে। হাবিব কথা বলতে চাইলেও নিলিমা কথা বলে না। অনেক্ষন বাচ্চাকে নিয়ে খেলাধুলা করে, না খেয়েই শুয়ে পরে।
এভাবেই কথা বন্ধ করে চলতে থাকে দশ বারো দিন। অযত্নে উভয়ের চেহাড়াই মলিন হয়ে যায়।
হাবিব অফিসের কাজে মনোনিবেশ করতে পারে না। এদিকে নিলিমা বিষয়টি নিয়ে তার বান্ধবীদের নিয়ে মিটিং এ বসে। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত দেয় তুই হাবিবকে চাপে রাখ। চোখে চোখে রাখ। পিছনে লোক লাগা। বিষয়টি কিছুতেই হাল্কা ভাবে নেয়া চলবে না। ভালবাসলে সেটা বলতে সমস্যা কোথায়। আজকাল তো সিনেমা, নাটক, গল্প উপন্যাস এমনকি বাস্তব জীবনেও প্রেমিক প্রেমিকা একে অপরকে কথায় কথায় আই লাভ ইউ বলে। তাহলে হাবিবের সমস্যা কোথায়? ভালবাসি বলতে সেই ভয় পায় যে ভালবাসে না, বা অন্য কাউকে ভালবাসে। কাজেই হাবিবকে বিশ্বাস করা যায় না। তোর বয়স এখনো কম। কাজেই যা করার এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বেশী দেরী হলে আম ছালা দুইটাই যাবে।
হাবিব রাত করে বাসায় ফিরে। আসা মাত্রই নিলিমা জিজ্ঞেস করে তোমার জীবনে কি আর কেউ আছে? তুমি কি আমাকে ভালবাসো? নাকি অন্য কাউকে ভালবাসো? সিরিয়াস উত্তর দিবা।
হাবিব নিজেকে সংযত করে ঠান্ডা মাথায় বলতে থাকে: এখানে ভালবাসা না বাসার কি হলো? আমি কি আমার মন প্রাণ সম্পুর্ণ সংসারের দিকে দিচ্ছি না? আমি কি তোমার যত্ন ঠিক ঠাক করছে না? বাবুর টেককেয়ার করছি না? আমার আয় রোজগার সব দিয়ে সংসার গোছাচ্ছি না? তুমি কেন এখানে সন্দেহ নিয়ে আসছো?
তুমি হয়তো বাধ্য হয়ে যত্ন করছো, বিয়ে করে ফেলছো তাই বাধ্য হয়ে সংসার করছো। আর টাকা পয়সা খরচ করা মানে ভালবাসা নয়। ভালবাসা সম্পুর্ণ আলাদা বিয়য়। যা তুমি আমাকে করো না। হয়তো তুমি অন্য কাউকে করো। জবাবে নিলিমা এই উত্তর দেয়।
এভাবেই কথা চালাচালি চলতে থাকে দীর্ঘক্ষন। পরে দুজনেই না খেয়ে শুয়ে পরে।
সকালে উঠে হাবিব অফিসে চলে যায়। চিন্তায় নাস্তা করে না, লাঞ্চ ও করে না। বিকেল বেলা বাবুর সাথে কথা বলার জন্য অনেকবার ফোন দেয় কিন্তু নিলিমা ফোন উঠায় না।
দুর্বল শরীর আর মলিন মুখ নিয়ে বাসায় ফিরে হাবিব। বাসায় ফিরে দেখে দড়জায় বড় তালা ঝুলানো। কিন্তু হাবিব তো চাবি নিয়ে অফিসে যায় নাই। অনেকবার ফোন দিতে দিতে তার মুবাইলের চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে নিলিমা বাচ্চাকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতে চলে গেছে। কিন্তু শ্বশুরের দেয়া ফ্ল্যাটের দড়জার চাবি যে তার কাছে নেই। কোন মুখে সে চাবি আনতে শ্বশুর বাড়ি যাবে। আর শ্বশুরবাড়িও কম দূরে নয়। মধ্য রাত হয়ে যাবে। এত রাতে বেহায়ার মত শ্বশুর বাড়ি যাওয়াটা তার ব্যাক্তিত্বে মানায় না।
কি করবে, কোথায় যাবে? এই মলিন মুখ নিয়ে কোন বন্ধুর বাসায় ও যাওয়া যাবে না। কিংবা গেলেও ভাল লাগবে না। তাই রওনা দেয় গ্রামের দিকে, তার নিজ মায়ের কোলের দিকে।
দূর জেলার গ্রামে মায়ের কাছে পৌছতে পৌছতে হাবিবের পরের দিন দুপুর হয়ে যায়। অফিসের পোশাক আর অফিসের ব্যাগ কাঁধে ঝুলানো হাবিবকে দেখেই হাবিবের মা ঘটনা বুঝতে পারে। তারাতারী গোসল করিয়ে সামনে ভাত দিয়ে হাতপাখা নিয়ে বাতাশ দিতে থাকে তার মা। হাবিবের হাপুশহুপুশ ভাত খেতে দেখে মায়ের চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে। অথচ এই মায়ের কথার অবাধ্য হয়েই নিলিমাকে বিয়ে করেছিলো হাবিব। খাওয়া শেষে বাড়ির উঠানে খেজুরের পাতার পাটি বিছিয়ে দিয়ে তালপাতার এক হাত পাখা নিয়ে পাশে বসে মা। কেউ কোন কথা বলে না। হাবিবের মা বাতাশ করতে থাকে আর হাবিব চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে থাকে ভালবাসা আসলে কোনটা? হাত পাখার বাতাস, নাকি এসির ঠান্ডা হাওয়া?


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×