somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুক রিভিউ : নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর 'নন্দিত নরকে'

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'ভোর হয়ে আসছে। দেখলাম চাঁদ ডুবে গেছে। বিস্তীর্ণ মাঠের উপরে চাদরের মতো পড়ে থাকা ম্লান জ্যোৎস্নাটা আর নেই।'

আচ্ছা, জ্যোৎস্না কি কখনো ম্লান হয়?

হয়, প্রায়ই হয়। আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের নানা সংঘাতে অনেক সময় সুন্দর জ্যোৎস্নাও ম্লান হয়। 'নন্দিত নরক' এ আমরা তেমনি একটি ম্লান হয়ে যাওয়া জ্যোৎস্নার গল্প দেখতে পাই।

গল্পটা একটা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। গল্পটা মধ্যবিত্ত জীবনের সংগ্রাম, আনন্দ, বেদনা, হতাশা ও যৌনতার। আপনি যদি মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠেন তাহলে গল্পটা আপনার, গল্পটা আমার।

উত্তম পুরুষে লেখা মাত্র ৭৮ পৃষ্ঠার একটি উপন্যাস। যদিও প্রথম সংস্করণে এটি ছিল মাত্র ৭০ পৃষ্ঠার। তারপরও একমাত্র হুমায়ূন আহমেদ বলেই হয়তো এই সীমিত পরিসরে উপন্যাসের আবহ তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল।

১৯৭০ সাল। হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র। থাকেন মহসিন হলে। এ সময়েই তিনি লিখে ফেলেন ‘নন্দিত নরকে’। কিন্তু পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এটি আর বই আকারে প্রকাশিত হয়নি।

দেশ স্বাধীনের পর ‘নন্দিত নরকে’ প্রথমে ‘মুখপত্র’ নামে একটি সংকলনে প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসটি পড়ে আহমদ ছফা মুগ্ধ হন। তিনিই এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের শেষ দিকে খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি থেকে ‘নন্দিত নরকে’ বই আকারে প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়। বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট গবেষক ড. আহমদ শরীফ। উপন্যাসটি প্রথমে যে প্রচ্ছদে বের হয়েছিলো সে প্রচ্ছদ করেছিলেন লেখকের ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ভাস্কর শামীম শিকদার।

কিন্তু বইয়ের প্রচ্ছদ ভালো না হওয়া ও নতুন লেখক বলে বইয়ের বিক্রি ভালো হচ্ছিল না। পরবর্তীতে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর হাতে নতুন প্রচ্ছদ পায় বইটি।

নতুন প্রচ্ছদে শোভিত হওয়ার পর নন্দিত নরকে নতুন করে আলোচনায় আসে। এ উপন্যাস নিয়ে সে সময়ে ‘দেশ’ পত্রিকায় ‘সনাতন পাঠক’ ছদ্মনামে লিখেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। লিখেছেন শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমানসহ আরো অনেকে।

নন্দিত নরকের ক্ষুদ্র পরিসরে হুমায়ূন আহমেদ অনেক মানুষের ভিড়, বহুজনের বিদ্যুৎ-দীপ্তি এবং খন্ড খন্ড চিত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে মধ্যবিত্ত জীবনের সামগ্রিক স্বরূপ ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।

উপন্যাসের গল্প কথক হুমায়ূন, ডাকনাম খোকা। তারই পরিবারের গল্প এটি। পরিবারের সদস্য ভাই-বোনদের মধ্যে রয়েছে অপ্রকৃতস্থ এক বছরের বড় বোন রাবেয়া , ছোট বোন রুনু, বাবা আর মা, বাবার বন্ধু মাস্টার কাকা আর বাবার প্রথম ঘরের সন্তান মন্টু । এছাড়াও প্রতিবেশী শিলু, হারুন ভাই ও নাহার ভাবীর দেখা পাই আমরা।

গল্পে মুখ্য বা কেন্দ্রীয় চরিত্র বলে কাউকে শনাক্ত করা কঠিন। তবে মূলত গল্পটি কেন্দ্রীভূত হয়েছে রাবেয়াকে ঘিরে।

চৈত্র মাসের এক দুপুরে হারিয়ে যায় বাইশ বছর বয়সী অপ্রকৃতস্থ রাবেয়া। একসময় খোঁজ মেলে তাঁর। এর কিছুদিন পর রাবেয়ার শারীরিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সন্তান সম্ভবা হয়ে ওঠে রাবেয়া। মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় বাবা। একসময় গর্ভপাত ঘটাকে গিয়ে মারা যায় সে।

ওদিকে মন্টুর হাতে খুন হয় মাস্টার কাকা। বিচারে ফাঁসির আদেশ হয় তাঁর। কিন্তু কেন?

মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পগুলো এমনই। এখানে পাশের বাড়ির শীলু'র প্রতি খোকার মত ছেলেদের ভালোবাসা গোপনই থেকে যায়। এখানে মায়েরা ছেলের ঘরে সুন্দরী,লক্ষ্মী বউয়ের স্বপ্ন দেখে। এখানে রুনু'র মত বোনেরা ভাইয়ের কাছে আবদার করে, প্রথম বেতন পেলে তাকে যেন দশটি টাকা দেয়। রুনু'র মত বোনগুলোর লেখা কবিতাগুলো গোপন থাকে পরম যত্নে। এখানে ভাইয়েরা স্বপ্ন দেখে প্রথম বেতন পেলে আদরের বোনটিকে সবুজ জমিনের উপর সাদা পাড়ের শাড়ি কিনে দেওয়ার। মধ্যবিত্ত জীবনে ভাইয়েরা কষ্ট হলেও ছোট বোনের আবদার পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।

কিন্তু মাঝেমাঝে কোন এক ঝড়ো হাওয়ায় সে স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়। ভরা জ্যোৎস্না ম্লান হয়ে আসে। তারপর আবার স্বপ্ন বুনে, জীবনের পথে এগিয়ে চলে।

আমার বই পড়ার অভ্যাসটা গড়ে দিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তারপরও আমি কোনদিন ওনার কোন বইয়ের রিভিউ লিখিনি। কারণ ওনার লেখা গল্পগুলোর বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ, একই সাথে হৃদয়স্পর্শী। মনে হয় যেন গল্পগুলো আমারই। আর সেসব গল্পের প্রতিক্রিয়া জানানোর মত ভাষা ও সাহিত্য জ্ঞান আমার মত নগণ্য পাঠকের নেই।

এই বইটি সম্পর্কেও হয়তো কিছুই বলতে পারিনি। তবে একটা কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, হুমায়ূন আহমেদ এর অন্যতম সেরা সাহিত্যকর্ম এটি। একটি অনবদ্য, অপূর্ব, হৃদয়ছোঁয়া গল্প।

সবাইকে পড়ার আমন্ত্রণ রইল। হ্যাপি রিডিং!

~

বইঃ নন্দিত নরকে
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশনীঃ অন্যপ্রকাশ
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৭৮
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৮০ টাকা।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×