কূটনৈতিক প্রতিবেদক
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর লক্ষ্যে চলতি মাসেই নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। প্ল্যান্টেশন খাতে কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে দেশটি শিগগিরই ৩০ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদা জানাবে। তার পরপরই জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ওয়েবসাইটে অনলাইনে কর্মীদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে। দেশের সব জেলা থেকে মালয়েশিয়ায় গমনেচ্ছু কর্মীদের সুষম সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংখ্যাতাত্তি্বক পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিটি জেলার কোটা নির্ধারণ করে 'আগে এলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। নিবন্ধনের সময় জেলা কোটা পূরণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই জেলার নিবন্ধন বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রাজধানীর ইস্কাটনে অবস্থিত প্রবাসীকল্যাণ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এ সময় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান, বিএমইটির মহাপরিচালক শামসুন নাহারসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত ২৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায়
দেশটিতে সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রফতানি-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার পর প্ল্যান্টেশন কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বৃহৎ এই শ্রমবাজার পুনরায় চালু হচ্ছে। জনশক্তি রফতানিতে কতিপয় রিত্রুক্রটিং এজেন্সির প্রতারণা ও অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া ২০০৮ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ বন্ধ করে দেয়।
মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, পর্যায়ক্রমে মালয়েশিয়া ম্যানুফ্যাকচারিং, নির্মাণ, কৃষি ও সেবা খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ করবে। প্ল্যান্টেশন খাতে নিবন্ধনে আগ্রহী কর্মীদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব, কৃষিকাজে অভিজ্ঞতা, বয়সসীমা ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, গ্রাম এলাকার প্রকৃত বাসিন্দা, উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট, শরীরের ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি, সর্বনিম্ন ২৫ কেজি ওজনের মালামাল হাতে করে বহনের ক্ষমতা প্রভৃতি যোগ্যতা থাকতে হবে। যে কোনো স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকে এ নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের জন্য কোনো ফির প্রয়োজন হবে না। তিনি এ ব্যাপারে কোনো দালাল, মধ্যস্বত্বভোগী কিংবা রিত্রুক্রটিং এজেন্সিকে টাকা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সম্পূর্ণ সরকারি পর্যায়ে লোক পাঠানো হবে।
মন্ত্রী বলেন, সফলভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট কর্মী সঙ্গে সঙ্গেই নিবন্ধন নম্বরসহ একটি কার্ড পাবেন। ওই কার্ডে কর্মী বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত টেকনিক্যাল সেন্টারের (টিটিসি) নাম, স্থান ও তারিখ উল্লেখ থাকবে। সারাদেশে ১৩টি টিটিসিতে এই বাছাই কার্যক্রম চলবে। প্রতিটি বাছাই কেন্দ্রে যুগ্ম সচিব অথবা উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, ডিইএমওর সহকারী পরিচালক এবং টিটিসির অধ্যক্ষকের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি বাছাইকালে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। কর্মী বাছাইয়ের সময় শারীরিক যোগ্যতা ও দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট কাগজ যাচাই-বাছাই করা হবে। সে সঙ্গে কর্মীর ছবিসহ ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করা হবে এবং মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম মেডিকেল টেস্ট করবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত কর্মীরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে যাতে কোনো সমস্যায় না পড়েন এবং সে দেশের আইন সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত থাকেন, সে লক্ষ্যে তাদের সংশ্লিষ্ট টিটিসিতে ১০ দিনের ওরিয়েন্টেশন দেওয়া হবে। এ প্রশিক্ষণে মালয়েশিয়ার ভাষা, খাবার, সংস্কৃতি, আইন ও কাজের ধরন সম্পর্কে কর্মীদের প্রয়োজনীয় ধারণা দেওয়া হবে। নির্বাচিত কর্মীদের নিয়ে একটি ক্লিন ডাটাবেস তৈরির পর ওই ক্লিন ডাটাবেস মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তর করা হবে। পর্যায়ক্রমে ক্রমানুসারে মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা ওই ডাটাবেস থেকে কর্মীদের চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করবেন এবং মালয়েশিয়া সরকার তাদের বরাবর ভিসা অ্যাডভাইস ইস্যু করলে ঢাকায় মালয়েশিয়া দূতাবাস থেকে ভিসা সংগ্রহ করে বিএমইটি কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করবে।
মন্ত্রী উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কর্মীর মেডিকেল চেকআপ, প্রশিক্ষণ ফি, ভিসা ফি, কল্যাণ ফি, বিমান ভাড়া ইত্যাদি বাবদ অভিবাসন ব্যয় আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা হবে। কর্মীদের সপ্তাহে ছয় দিন আট ঘণ্টা কাজ করার বিনিময়ে বেতন কমপক্ষে প্রতি মাসে ২৫ হাজার (৯০০ রিঙ্গিত) টাকা। ওভারটাইমের জন্য আলাদা পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। কর্মীদের থাকা ও খাওয়ার খরচ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বহন করবে। কর্মীদের প্রথমে দু'বছর পরে আরও দু'বছর এবং শেষে এক বছর_ পর্যায়ক্রমে মোট পাঁচ বছর মেয়াদে ভিসা ইস্যু করবে। কর্মীদের চাকরি শেষে দেশে ফেরার বিমানভাড়া নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বহন করবে।
তথ্য সূত্রঃ সমকাল