প্রিয়তমেষু,
সম্বোধনটা কিভাবে করবো বুঝতে পারছি না। কিংবা বলতে পারো প্রিয়তমেষু বলার অধিকার রাখি কিনা। "কেমন আছো তুমি?", ম্যাসেন্জারে তোমার ছোট্ট মেইলটি পেয়ে এ চিঠিটি লিখতে বসলাম। অামি ভালো আছি বা বলতে পারো সবসময়ই ভালো থাকি। ঠিক যেমনটিই ছিলাম যখন তুমি পাশে ছিলে। খুব আটপৈাড়ে জীবন আমার.... ৯টা ৫টার ছোট একটা চাকরী, সন্তানদের পড়াশুনা দেখা, ওদের প্রিয় কিছু রান্না.........। তারপরও অনেক ভালো আছি, কোন দু:খবোধই নেই আমার বা বলতে পারো কখনই ছিল না। ইউনিভার্সিতে যখন তোমার পাশে ছিলাম তখন যেমন প্রতিটি উইকএন্ডে তোমার চিঠির অপেক্ষা থাকতাম কিংবা টিএসসিতে তোমার পাশে থাকার সে ভালেঅবাসার আকুলতার মাঝে ও এক ধরনের ভালো ছিলাম অাবার এখম মা হিসেবে প্রতিদিন যখন ছেলেটি ও মেয়েটা জড়িয়ে ধরে চুমো দেয় আর বলে আই লাভ ইউ মম, ইউ আর দা বেস্ট মম ইন দা হোল ওয়ার্ল্ড......... তখন মনে হয় এর চেয়ে ভালো কোন কালেই ছিলাম না। আমার যে সত্যিই ভালো থাকার রোগ আছে, প্রিয়তমেষু। আসল সত্যি কি জানো? অামি সবসময়ই ছাকনি দিয়ে ছেঁকে দু:খগুলোকে সিন্দুকে ভরে রাখি আর সুখগুলোকে নিয়ে বেচেঁ থাকার চেস্টা করি। তারপর............ যখন ইচ্ছে হয় তখন সিন্দুকের ঢালা খুলে সে দু:খগুলোকে বের করে আপন মনে কতক্ষন কাঁদি, নিরবে, নির্ভৃতে ..........।
১৫ বছর, দীর্ঘ সময়..... কেমন আছে লাবন্য ও তোমার ছেলে? ফেইসবুকে তোমাদের সুখি সুখি চেহারার ছবিগুলো দেখে খুব ভালোলাগে। ফেইসবুকটা সত্যিই অনেক কাজের, না চাইতেই তোমাকে খুজেঁ পেয়েছি। আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি সুহ্রদ। যদিও তুমি আমার কাছে কখনো ক্ষমা চাওনি বা হয়তো চাওয়ার প্রয়োজন মনে করোনি। কিন্তু তারপর বলি আমি তোমাকে সত্যিই ক্ষমা করে দিয়েছি সুহ্রদ। কারন আমি বিশ্বাস করি লাবন্যই তোমার জন্য যোগ্য.... ছোট্ট সুন্দর ফুটফুটে একটি মেয়ে। তোমার মনে আছে, যেদিন তোমাকে আমার স্কুলের বন্ধুর ছোট বোন লাবন্যকে তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম কি চমৎকার প্রানবন্তভাবে হেসেছিল মেয়েটি? তুমি বার বার জিজ্ঞেস করছিলে, এই মেয়ে এতো হাসো কেন? লাবন্য খুব রেগে বললো, আমার নাম মেয়ে না লাবন্য। ও কি এখনো ওরকম হাসে, ঠিক আগের মতো? আমি সত্যিই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি প্রিয়তমেষু। তোমার বিয়ের কার্ডটি যখন আমার বন্ধু হাতে দিয়ে বললো, "এতো ভালো পাত্র হাত ছাড়া করতে চাইনিরে দোস্ত, তাই প্রস্তাব পাওয়া মাত্রই বিয়ের আয়োজন করতে হলো"। বিশ্বাস করো তখনো আমি ভালো ছিলাম.... নিজেকে প্রবোধ দিলাম, তুমি তোমার সত্যিকারের পছন্দের কাউকেই বেছেঁ নিয়েছো। অামার চেয়ে অনেক বেশী ভালোবাসার কাউকে তুমি পেয়েছো তাই ভালোবাসার মানুষ হিসেবে এ সেক্রিফাইসটুকু আমার করা উচিত। তারপর ও কেন যেন মাঝে মাঝে সিন্দুকে ভরে রাখা দু:খগুলোকে নিয়ে হিসেব নিকেশ করতে বসি কিন্তু আবার সেটার ঢালা বন্ধ করে রেখে দেই, ভাবি, থাক্ না কি দরকার ঢালাটা খোলার .............।
আমি প্রায় তোমাকে চিঠি লিখি কিন্তু সেটা কখনই কাগজে ফুটে উঠে না। মনে মনে লিখা ঠিক আগের দিনগুলোর মতো.....। সারাটি সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম কখন সপ্তাহটি শেষ হবে, তুমি একটি নীল খাম আমাকে দিয়ে বলবে, অনেক রাতে পড়ো কিন্তু। জানো তুমি, তোমার সে কোন ছন্দময় কবিতা বা কোন গদ্য কবিতা লিখা চিঠিগুলো আমাকে রাতে একটু ও ঘুমাতে দিতো না, সারারাত সে চিঠি খুলে শুধু পড়তাম আর পড়তাম। প্রতিটি শব্দকে আলাদাভাবে অনুভব করতাম, আলাদাভাবে ভালোবাসতাম। মাঝে মাঝে রুমমেটদের টেবিল ল্যাম্পের আলোয় ঘুম ভেঙ্গে গেল খুব রাগ করতো, তখন বারান্দার আলোতে পড়তাম। তোমার মনে পড়ে আমি কি রাগ করতাম, কেন তুমি রাত জেগে আমাকে লিখো। কিন্তু সত্যি বলতে আমি মনে মনে সারাক্ষনই তোমার সে চিঠির অপেক্ষায় থাকতাম, সেটা যে আমার গভীর ভালোলাগা ছিল, গভীর ভালোবাসা....। আর তাইতো তোমার এ্যাসাইনমেন্টগুলো রাত দিন জেগে আমি করে দিতাম যাতে তুমি সময় করতে পারো আমাকে লিখার।
তুমি কি তখন খুব আশ্চর্য্য হয়েছিলে কিংবা আশ্চর্য্য হবার চেস্টা করেছিলে, কেন আমি হঠাৎ ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়ে গ্রামে ফিরে গেলাম। ক্লাসের সেরা ছাত্রী আমি, কেন এভাবে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। অনেকের কাছে জানতে চেয়েছো, কিন্তু তুমি কখনই সরাসরি আমার কাছে জানতে চাওনি। কেন তুমি জানতে চাওনি? কেন বলতে পারো? একটি প্রশ্ন কি তোমার কাছে আমি আশা করতে পারি না? আমি রাত দিন তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, কখন তুমি আসবে আর আমার কাছে জানতে চাইবে......... "কেমন আছো তুমি?" না, তুমি আমার কাছে আসো নি বা একটি বার ও জানতে চাও নি আমার কাছে। আমি তোমার অপেক্ষায় থেকে থেকে দিন রাত পার করেছি, সারাক্ষন বারান্দায় বসে থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম, কখন তুমি আসবে আর আমাকে একটা ধমক দিয়ে বলবে, যাও পরীক্ষায় গিয়ে বসো। তাই সে অপেক্ষা করতে করতে আর ফিরে যাওয়া হলো না আমার।
এ দীর্ঘ সময়ে অনেকবারই চেস্টা করেছি তোমার চিঠিগুলো ছিঁড়ে ফেলতে, পুড়িয়ে ফেলতে কিন্তু কেন যেন পারিনি, কিছুতেই পারিনি। যখনই সেগুলো বের করি তখনই পড়তে বসি আর স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাই। কত হাসি, কত দু:খ, কত ভালোবাসা লুকিয়ে আছে এর পড়তে পড়তে। পারি না, কিছুতেই পারি না সেগুলোকে ধ্বংস করতে..... যে সৃষ্টি তুমি করেছো আমার জন্য এক সময় হয়তো ভালোবেসে কিংবা ভালোবাসার অভিনয় করে সেটা কিভাবে ধ্বংস করি আমি? কিন্তু সেগুলো যে এখন আমার গোপন ভালোলাগা, তোমার রাতের পর রাত জাগার কস্টের অনুভূতি, আমার ভালোবাসার সাক্ষী।
মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে, তুমি সত্যিই আদৈা আমাকে ভালোবাসতে? নাকি ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রীটি ছিলাম বলে আমাকে বেঁছে নিয়েছিলে তুমি নিজের সিঁড়ি হিসেবে... না না সেটা কখনই হবার নয়। তাহলে ওমন রাত জাগা ভালোবাসার টুকরো কাগজগুলো কিভাবে তুমি শিল্পীর তুলি দিয়ে একেঁছো? সে ভালােবাসায় যে কোন খাঁদ ছিল না, কোন প্রতরনা ছিল না, কোন চাতুরতা থাকতে পারে না, কখনই পারে না ..........
আমি জানি না মনের খাতায় লিখা এ চিঠিটি সত্যিই তোমাকে কখনো মেইল করবো কিনা, তারপর ও লিখে যাই যদি কখনো মনে হয় হয়তো পোস্ট করবো নয়তো নতুন কিছু লিখবো।
ইতি সামিয়া
-
-
-
ভালোবাসা মানে কিন্ঞ্চিত পৃথিবীর অকিন্ঞ্চিত ভাবনা।
ভালোবাসা মানে মলয়হীন কোন গ্রহে ডানা মেলে উড়ার স্বপ্ন।
ভালোবাসা মানে অধরাকে ধরার স্বপ্ন
ভালোবাসা মানে স্বপ্নের জাল বোনা কল্পনার পৃথিবীতে ভেসে বেড়ানো।
ভালোবাসা মানে উন্নাসিকতায় ভোগা, মানসিক কোন বিকার।
ভালোবাসা মানে প্রিয়জনের কাছে আশানুরুপ কথাটি শুনতে পাওয়া।
ভালোবাসা মানে ভালোবাসা ও ভালো বাসার সমন্বয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
ইতি সামিয়া: অবশেষে লিখাটি শেষ করলাম।
জাহিদ অনিক: তোমার কথা মতো বুড়াদের দু:খ প্রকাশের কবিতা লিখার চেস্টা করলাম।...হাহাহাহা
উৎসর্গ:
এক ঝাঁক কবি প্রতিভা। কবিতা প্রসব করলেই কবি হওয়া যায় না, কবি হবার জন্য যেমন প্রয়োজন মনের দ্বিতীয়, তৃতীয় বা অনেকগুলো চোখ, তেমনি প্রয়োজন শব্দ চয়ন, শব্দের ব্যবহার, ভাষাজ্ঞান, ছন্দের যাদুকরি ক্ষমতা। চাইলেই যে কেউই কবি হতে পারে তবে সেটা কবিতা না হয়ে কা কা হবে। যাহোক নীচের কবিদের কবিতা পড়ে এটা প্রমানীত যে এ সকল কবিরা সত্যিই ইশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা। আমার বিশ্বাস, এ যুগে সুকুমার রায় কিংবা শামসুর রহমান বেচেঁ থাকলে অবাক বিস্বয়ে এ প্রতিভাদের দেখতো এবং ঈর্ষাভরে তাকিয়ে থাকতো।
কি করি আজ ভেবে না পাই
সেলিম আনোয়ার
জাহিদ অনিক :
মনিরা সুলতানা
ভ্রমরের ডানা
শায়মা
বিদ্রোহী ভৃগু
প্রামানিক
জেন রসি
বিলিয়ার রহমান
সুমন কর
আরো অনেক কবিদের, যারা কবিতাকেই বেছেঁ নিয়েছে সুখ দু:খ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে।
ও কয়েকজন চির তরুন কবি
আহমেদ জী এস
ডঃ এম এ আলী
খায়রুল আহসান ভাই,
যারা অসাধারন কবিতা লিখেন কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না সেটা। কারন তাদের গবেষনাধর্মী লিখা এতোটাই জনপ্রিয় যে অন্য কিছু দেখার সুযোগ পাঠককুল পায় না।
পরিশেষে: এই মর্মে ঘোষনা করিতেছি যে উপরের উল্লেখিত আধা কবিতাখানি আমার পার্মানেন্ট বয়ফ্রেন্ড এর লিখা। যিনি এক সময় তার ইউনিভার্সিটির নামকরা কবি ছিলেন। এবং সময়ের পরিক্রমায় আস্ত কবিতাতো দূরে থাক বোমা মেরে এক লাইন ও লিখে না। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর আধাখান লিখিয়াই ভাগছে.............
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৩৪