somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কে ছিলেন রাসপুতিন?

২৫ শে এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘রাসপুতিন’ শব্দটায় নেতিবাচক অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকলেও রাশান ভাষায় রাসপুতিন শব্দটি কিন্তু মোটেও অস্বাভাবিক নয়; তবে বিশ্বজুড়ে রাসপুতিনের পরিচয় নারী আসক্ত ক্ষমতালিপ্সু এক উন্মাদ সাধু হিসেবে। তাঁকে বলা হয়েছে Russia's greatest love machine ...তবে, বর্তমানকালের বিচারে তাকে ততটা অনৈতিক লম্পট মনে না-হলেও রাসপুটিন যে এক রহস্যময় বিতর্কিত পুরুষ ছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই ...

ছেলেবেলায় শুনতাম বনি এম এর গান -

There lived a certain man in Russia long ago
He was big and strong, in his eyes a flaming glow
Most people looked at him with terror and with fear
But to Moscow chicks he was such a lovely dear

এই শেষ লাইনটা ভুল। কেননা, রাসপুটিনের সময়ে রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্র মস্কোয় ছিল না-ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গ, পরবর্তীকালে যা পরিচিত হয়ে ওঠে লেলিনগ্রাদ নামে। তবে এককালে রাশিয়ায় সত্যি সত্যি রাসপুটিন নামে একজন বাস করতেন।
রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় উরাল পাহাড়ের কাছে তুরা নদী। সেই নদীর তীরে ছিল প্রোকরোভস্কয় নামে একটি গ্রাম। গ্রামে কয়েকটা রাস্তা-রাস্তার পাশে কাঠের একতলা কি দোতলা বাড়ি। গ্রামের মাঝখানে খ্রিস্টান রাশিয়ার প্রতীক হিসেবে সোনালি গমম্বুজঅলা সাদা রঙের গির্জা । সেই প্রোকরোভস্কয় গ্রামেই ২২ জানুয়ারি ১৮৬৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন গ্রিগরি ইয়েফ্লিমোভিচ রাসপুতিন । রাসপুতিনের বাবা ঘোড়ার ব্যবসা করতেন। তো, একবার তার কয়েকটা ঘোড়া চুরি হল- বালক রাসপুতিন নাকি ঘোড়া চোরের নাম বলে দিয়েছিল। গ্রামে লোক বলাবলি করল ছেলে তো খ্রিস্টের আর্শীবাদ পেয়েছে। সেই শুরু ...
মারিয়া নামে বোন আর দিমিত্রি নামে এক ভাই ছিল রাসপুতিনের। মারিয়ার মৃগীরোগ ছিল- পুকুরে ডুবে মারা যায় মেয়েটি । একদিন দিমিত্রির সঙ্গে পুকুর পাড়ে খেলছিল রাসপুটিন। দিমিত্রি হঠাৎ পকুরে পড়ে যায়। রাসপুতিন ভাইকে বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। হাবুডুবু খাচ্চিল। পথচারীরা তাদের বাঁচায়। পরে অবশ্য দিমিত্রি মারা যায় নিমোনিয়ায় ।
শোক ... শোক আর শোক ...
জীবন কি অর্থহীন ঠেকছিল রাসপুতিনের কাছে?
আঠারো বছর বয়েসে অতীন্দ্রি অনুভূতি হয় রাসপুতিনের । সেই সময়ে ভ্রমনে বেরয় সে। সাইবেরিয়ার মঠে মঠে ঘুরে বেড়ায়। সম্ভবত, শোক ও নিঃসঙ্গতা এড়াতে ধর্মের আশ্রয় খুঁজছিল সে। এই সময়ে খলেস্টি স¤প্রদায়ের সঙ্গে পরিচয় হল তার। খলেস্টি স¤প্রদায়ের প্রবক্তা সাইবেরিয়ার একজন চাষি; এরা গির্জে মানে না, ধর্মীয় পুস্তকও মানে না ...
যা হোক। ১ বছর ঘোরাঘুরির পর গ্রামে ফিরে আসে রাসপুতিন। বিয়ে করে। কনের নাম প্রাসকোভিয়া ফিয়োদরোনভা। তিনটি বাচ্চা হল এদের- দিমিত্রি, মারিয়া ও ভারভারা।
সংসারে মন বসল না। ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগল । সাধারন লোকে বলে অলৌকিক কান্ড ঘটায় সে। নিরক্ষর রাশিয়ার চাষি সমাজ সেসব বিশ্বাসও করত। মানুষের কত সমস্যা-তারা রাসপুতিনের কাছে যেত। সব সমস্যার সমাধান হত কি না -প্রশ্ন সেটাই।
যা হোক। শিষ্যও জুটেছিল রাসপুতিনের । তাদের সঙ্গে নিয়ে ১৯০৫ সালে তৎকালীন রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছলেন । সেন্ট পিটার্সবার্গ অভিজাত ভক্তশিষ্য জুটেছিল- বেশির ভাগই দুনীর্তিগ্রস্থ আমলা-তারাই রাসপুতিনের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। অভিজাত মানুষের নানা সমস্যা-আসলে মানুষের নানা সমস্যা-তারা সেসব সমস্যা নিয়ে রাসপুতিনের কাছে যেত। এই সময়ে সেন্ট পিটার্সবার্গ অভিজাত নারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ট মেলামেশা বাড়ছিল রাসপুতিনের। আসলে নারীরাই মুগ্ধ ছিল রাসপুটিনের প্রতি...এমন কী হতে পারে না?
তখন রাশিয়ায় রোমানভ বংশের শাসন। রাশিয়ার সম্রাটকে বলা হয় জার। জার ২য় নিকোলাস রাশিয়ার সম্রাট -ইনিই রোমানভ বংশের সর্বশেষ ...একেই লেলিনের নেতৃত্বে উৎখাত করা হয়েছিল ১৯১৭ সালে অক্টোবর বিপ্লবের সময়। জারের স্ত্রী জারিনা আলেকজান্দ্রা। এদের একমাত্র পুত্র আলেকসেই -রাশিয়ার সিংহাসনের ভবিষ্যৎ উত্তরসূরী ... তো, সে সময় দূর্ঘটনাবশত আলেকসেই ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছিল; তারপর থেকে তার অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে: হেমোফিলিয়া । চিকিৎসা চলছিল -লাভ হচ্ছিল না। রাসপুতিনের অলৌকিক মাহাত্ব্যের কথা জার আর জারিনার কানে পৌঁছেছিল। তারা বিশেষ পাত্তা দেননি। পরে চিকিৎসকরা আলেকসেইর জীবনের আশা ছেড়ে দিলে ১৯০৭ সালে রাসপুতিনকে জারের প্রাসাদের ডাকা হল। রাসপুতিন কী এক যাদুবলে আলেকসেই কে সারিয়ে তুললেন। অনেকে বলে জোঁক দিয়ে নাকি রাসপুতিন আলেকসেইর রক্ত শুষে নিয়েছিল । জোঁকের লালায় থাকে হিরুদিন; যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। আবার অনেকে বলে অ্যাসপিরিন দিয়ে নাকি আলেকসেই কে সারিয়ে তুলেছিল রাসপুতিন। অ্যাসপিরিন জিনিসটা ১৮৯৮ সাল থেকেই ইউরোপে পাওয়া যেত।
যাই হোক - আলেকসেই সেরে ওঠার পর জার নিকোলাস রাসপুটিনকে রাশিয়া ও জার-পরিবারের বিশ্বস্ত বন্ধু ঘোষনা করলেন। তারপর থেকে জারিনা আলেকজান্দ্রার ওপর রাসপুটিনের প্রভাব বাড়তে থাকে। রাসপুটিনের কথা ঈশ্বরের কন্ঠস্বর বলে ভ্রম করতে লাগলে জারিনা আলেকজান্দ্রা ... নানা রকম কানাঘুঁষা শোনা গেল। এ নিয়ে বনি এম এর গীতিকার লিখেছেন-

RA RA RASPUTIN
Lover of the Russian queen
There was a cat that really was gone
RA RA RASPUTIN
Russia's greatest love machine
It was a shame how he carried on

শেষ কথাটি কোনও ইউরোপীয় গীতিকার লিখেছেন -ভাবাই যায় না ...
যাক। তারপর ১ম বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হল। তার নিদারুন ধাক্কা লাগল রাশিয়ার ক্ষয়িষ্ণু সামন্তবাদী সমাজদেহে। সেই সঙ্গে ছিল অনৈতিক আমলাদের সীমাহীন লুটপাট। এসব কারণে রাশিয়ার অর্থনীতি হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। অথচ, সে সময় অনেক অভিজাত রাজপুরুষই জারিনা আলেকজান্দ্রার ওপর রাসপুতিনের প্রভাবকে রাশিয়ার অর্থনৈতিক দুর্গতির মূল কারণ বলে অবহিত করল।
১৯১৬ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গ -এর অভিজাতরা রাসপুটিনকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এই হত্যাকান্ডের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন প্রিন্স ফেলিকস ইউসুপভ। তিনি রাসপুতিনকে তার প্রাসাদে নিমন্ত্রন করেন। বিষ মেশানো মদ আর কেক খেতে দেন রাসপুতিনকে। তাতেও নাকি রাসপুতিনের ওপর বিষের ক্রিয়া হয়নি। এই ঘটনা নিয়ে বনি এমের গীতিকার লিখেছেন-

RA RA RASPUTIN
Lover of the Russian queen
They put some poison into his wine
RA RA RASPUTIN
Russia's greatest love machine
He drank it all and he said "I feel fine"

রাসপুতিনের ওপর বিষের ক্রিয়া হয়নি দেখে রাগের মাথায় ইউসুপভ গুলি করে বসেন রাসপুতিনকে। রাসপুতিন গড়িয়ে গড়িয়ে ইঁট বাঁধানো প্রাঙ্গনে নেমে গেলে ইউসুপভ ও অন্যেরা রাসপুতিনকে নেভা নদীতে ফেলে দেয় ...



There lived a certain man in Russia long ago
He was big and strong, in his eyes a flaming glow





সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩২
৩৯টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: সম্পত্তি

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৪



গল্প:
সম্পত্তি

সাইয়িদ রফিকুল হক

আব্দুল জব্বার সাহেব মারা যাচ্ছেন। মানে, তিনি আজ-কাল-পরশু-তরশু’র মধ্যে মারা যাবেন। যেকোনো সময়ে তার মৃত্যু হতে পারে। এজন্য অবশ্য চূড়ান্তভাবে কোনো দিন-তারিখ ঠিক করা নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

“রোজা” নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন জাপানের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ‘ইউসোনরি ওসুমি’।

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫০




‘রোজা’ ফারসি শব্দ, আরবিতে ‘সওম’। ভারতের রাজনীতিতে ‘অনশন’। ইংরেজিতে ‘ফাস্ট’। কিন্তু মেডিকেলের পরিভাষায় রোজার কোনও নাম ছিল না ও মেডিকেল বই গুলোতে রোজা’র বিশেষ কিছু গুণাগুণও উল্লেখ ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×