হার্তা মুয়েলার। এ বছর (২০০৯) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করলেও হার্তা মুয়েলার আদতে রোমানিয়ান বংশোদ্ভূত । ১৯৮৭ সালে রোমানিয়া ছেড়ে পশ্চিম জার্মানি চলে যান। তারপর থেকে বার্লিনেই বসবাস করছেন। উদ্বাস্তু হিসেবে পশ্চিমে বসবাসের নানা সমস্যা ও নির্বাসিতের মানসিক যন্ত্রনার নানা দিক সম্বন্ধে লিখেছেন। তাঁর লেখার আরেকটি বিষয় হল-ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরোধ । এ ছাড়াও তাঁর লেখায় রোমানিও গ্রামীণজীবনের নানা অসংগতি প্রকাশ পেয়েছে। ... ভারি সাহসী মহিলা হার্তা মুয়েলার-বিদেশের মাটিতে বসে জন্মভূমি রোমানিয়ার এককেন্দ্রিক শাসনপদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ...
বানাট জেলাটি রোমানিয়ার পশ্চিমে। সেই জেলার একটি গ্রাম নিৎস্কিডর্ফ। ঐতিহাসিক কারণেই গ্রামটির অধিবাসীরা কথা বলে জার্মান ভাষায়। সে গ্রামেই ১৯৫৩ সালের ১৭ আগস্ট হার্তা মুয়েলার জন্ম গ্রহন করেন।
নিৎস্কিডর্ফ।
নিৎস্কিডর্ফ।
বানাট জেলার প্রধান শহর টিমিসোয়ারা। ওখানেই রয়েছে টিমিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়। জার্মান ও রোমানিয় সাহিত্য নিয়ে টিমিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন হার্তা ।
টিমিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়
২য় মহাযুদ্ধের পর থেকেই রোমানিয়ায় ছিল সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণে । ১৯৪৭ সালে রোমানিয়াকে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষনা করা হয়। ১৯৬৫ সালে নিকোলাই চসেস্কু (১৯১৮-১৯৮৯) হয়ে ওঠেন ক্ষমতার মধ্যমনি। সে সময় হার্তার ১২ বছর বয়স। চসেস্কু সরকার সমাজতন্ত্র বিনির্মাণে নানামূখি পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। যাদের সেসব ভালো লাগেনি- হার্তা মুয়েলার ছিলেন তাদের অন্যতম।
টিমিসোয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই হার্তা চসেস্কু সরকার বিরোধী হয়ে উঠেছিলেন। স্বাধীন লেখকদের নিয়ে গঠিত একটি সমিতিও যোগ দিয়েছিলেন।
লেখাপড়ার পাঠ চুকলে হার্তা একটি মেশিন ফ্যাক্টরিতে দোভাষীর (বা অনুবাদকের)
কাজ নিলেন । একটি আদর্শ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষে চসেস্কু সরকারের গুপ্তপুলিশ কে নানা ধরনের কাজকারবার করতে হত। তারা হার্তাকে বললেন ইনফরমার হতে; -অস্বীকার করায় -চাকরিচ্যূত হন হার্তা।
যাই হোক। এতসব দূর্বিপাকের মধ্যেও -লেখক বলেই-ছোট ছোট গল্প লিখতেন হার্তা। অবশ্যি প্রকাশ করতে পারতেন না। কেননা, সেনন্সর হত লেখা। একটি আদর্শ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষে লেখকদের যা তা লিখলে কি চলে! যা হোক। হার্তার লেখা গল্পসংকলন ১৯৮২ সাল অবধি ছাপানো যায়নি- দেশত্যাগ করার পরই ছাপানো ছাপানো সম্ভবপর হয়েছিল !
হার্তার ছোটগল্পের সংকলনের নাম: নিডেরুনজেন। সেসব ছোট ছোট গল্পে ফুটে উঠেছে রোমানিয়ার জার্মানভাষী গ্রামীণ জীবনের শঠতা আর নৈরাশ্য আর অবাধ্যদের ওপর চসেস্কু সরকারের নির্যাতনের গা শিউরানো রেখাচিত্র। জার্মান সংখ্যালঘুদের ফ্যাসিস্ট মনোবৃত্তি, ধৈর্যহীনতা আর দূর্নীতির কথাও হার্তা লিখেছেন অকপটে: যার ফলে, রোমানিয়ায় আর্দশবাদী গ্রামীণ জার্মান জীবন ধ্বংস করার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হন হার্তা। (লেখক তো সত্যি কথা লিখবেই। সবাই চুপ করে থাকলে কেমন দেখায়!)
যাক। মেশিন ফ্যাক্টরিতে দোভাষীর চাকরিটা হারিয়ে কী আর করা-স্কুলেই চাকরি নিলেন হার্তা। সে সময়ই ‘নিডেরুনজেন’ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম জার্মানি পৌঁছল-এবং প্রকাশ পেল । হার্তার লেখা বহুল প্রশংসিত হল।
তারপর ফ্র্যাঙ্কফুটের বইমেলায় গেলেন হার্তা। সেখানে বক্তব্য রাখলেন স্বৈরাচারী চসেস্কু সরকারের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে। এর পরপরই রোমানিয়ায় হার্তার লেখালেখি নিষিদ্ধ হয়ে যায়। একটি আদর্শ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষে বিদেশের মাটিতে বসে জন্মভূমি রোমানিয়ার এককেন্দ্রিক শাসনপদ্ধতির কঠোর সমালোচনা করা চলবে না!
লেখা ছাপানো হচ্ছে না বটে-তবে হার্তা লিখে চললেন। নানাভাবে চসেস্কু সরকারের গুপ্তপুলিশ তাঁকে হেনস্থা করছিল। বিয়ে করেছিলেন হার্তা। স্বামীর নাম রিচার্ড ওয়াগনার। তিনিও লেখালেখি করেন।
১৯৮৭ সালে স্বামীকে নিয়ে হার্তা পশ্চিম জার্মানি চলে এলেন। তারপর থেকে বার্লিনেই বাস করছেন।
হার্তার লেখা আসলে নিজের জীবনেরই অভিজ্ঞতার শব্দরুপ। “বেয়ারফুট ফেব্রুয়ারি” বইতে নিজের পাসপোর্ট সংগ্রহের ঘটনাই লিখেছেন।“এক পায়ে ভ্রমন” বইতে লিখেছেন পশ্চিমে বসবাসের সমস্যা ও নির্বাসিতের মানসিক যন্ত্রনার নানা দিক নিয়ে। (বইগুলো আমার এখনও পড়া হয়নি। পরে পড়ে আশা করছি ভালোমন্দ দু-চার লাইন লিখতে পারব ...)
আমি এ লেখার শুরুতে বলেছি যে ... হার্তা মুয়েলার: এ বছর (২০০৯) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন। নোবেল প্রদানের কারণ হিসেবে সুইডিশ অ্যাকাডেমি এ কথাগুলি বলেছেন: "with the concentration of poetry and the frankness of prose, depicts the landscape of the dispossessed".
"with the concentration of poetry and the frankness of prose ...এটুকু মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু, depicts the landscape of the dispossessed"... একথাটা পুরো মানা গেল না।
রোমানিয়ার স্বৈরাচারী নিকোলাই চসেস্কুর শাসনপদ্ধতির সবই খারাপ?
হার্তা মুয়েলার কি চরমপন্থি?
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০০৯ সকাল ১০:২৬