somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: এক ধরনের নির্লিপ্ত মানুষ

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনের রহস্যময় দিকটি বুঝবেন বলেই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি মার্কসবাদী আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন আলী আহমেদ; এখন প্রায় পঁচিশ বছর পর অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন তিনি। দীর্ঘদিন তিনি আর মার্কসবাদী আন্দোলনে নেই, মার্কসবাদী আন্দোলন থেকে তার নাম মুছে গেছে-তবে জীবনের রহস্য কতটুকু বুঝতে পারলেন সে প্রশ্নটি এখন উঠতেই পারে।
পঞ্চাশের দশকের শেষে মার্কসবাদী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন আলী আহমেদ। ষাট দশকজুড়ে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল তার, তবে মার্কসবাদী প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে । স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতির সঙ্গে আলী আহমেদের সম্পর্কটা শিথিল হয়ে যেতে থাকে। এর কারণও বিচিত্র। পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে প্রায়ই একটা স্বপ্ন দেখতেন আলী আহমেদ। একটা ষ্টেশন; দিন কি রাত বোঝা যায় না; ফাঁকা ষ্টেশন, ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে আছেন আলী আহমেদ; একজন কেউ এসে পাশে বসে, তাকেও বোঝা যায় না। পঞ্চাশের দশকের শেষে স্কুলজীবন শেষ করেছেন; তখন থেকেই এই একই স্বপ্ন দেখে আসছেন দিনের পর দিন। স্বপ্নের মোহেই কি না কে জানে- রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষীণ হতে যেতে থাকে তার, এককালের রাজনৈতিক সহকর্মীদের এড়িয়ে চলতে থাকেন, তার কেবলি মনে হচ্ছিল স্বপ্নটার মানে বোঝা দরকার, কেন আমি বারবার দেখছি স্বপ্নটা, কী এর মানে? স্বপ্নের মানে বুঝলেই জীবনকে বুঝতে পারবেন-এমন একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়েছিল তার মনের ভিতরে।
পুরনো ঢাকার সরু একটা গলির রংচটা জীর্ণ দালানের তিনতলায় থাকেন আলী আহমেদ। বিয়ে থা করেননি। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি বিজয় নগরের ‘ শাপলা ইন্সুরেন্স ’ নামে একটা ইন্সুরেন্স কোম্পানীতে সেই যে কেরানির চাকরি নিয়েছেন, একেবারে ষাট পাড় করে চাকরি ছেড়েছেন। একা মানুষ, দিন কোনওমতে চলে যায়। সমস্যা হল বছর দুয়েক হল চোখে ছানি পড়েছে। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসছে। আশ্চর্য! আমি কি অন্ধ হয়ে যাচ্ছি? দু-চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ে। বইয়ের পৃষ্ঠার ওপর হলুদ হলুদ ছোপ দেখেন, ঘরে টিভি নেই, হাজার পাঁচেক বই আছে, বই না পড়লেও দৈনিক পত্রিকা পড়তেই হয়; সমস্যা তখনই হয়-ঐ হলুদ হলুদ ছোপের কারণেই।
স্বপ্নটা আজও দেখছেন আলী আহমেদ। তবে ফ্রিকোয়েন্সি আগের তুলনায় অনেক কম। অবশ্য মাসে অন্তত একবার হলেও দেখেন। একটা ষ্টেশন; দিন কি রাত বোঝা যায় না; ফাঁকা ষ্টেশন, ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে আছেন আলী আহমেদ; একজন কেউ এসে পাশে বসে, তাকেও বোঝা যায় না। মাথা অনেক ঘামিয়েও আলী আহমেদ বুঝতে পারেননি কেন তিনি ঐ একই স্বপ্নই পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে দেখে আসছেন। যে স্বপ্নটা তাকে মার্কসবাদী আন্দোলন থেকে সরে দাঁড় করিয়ে দিল।
একদিন দুপুরবেলা। আলী আহমেদ নিচে নেমে এসে রিকশা নিলেন। আজকাল দুপুরে ভাত খাওয়ার পর অনেকক্ষণ ধরে কাশি হয়। তবে আজ কাশী হয়নি। রিকশায়ও কাশী এল না। তবে সারাটা পথ ভয়ে ভয়ে কাটল। শীতের দুপুর। শীত শীত করছিল। চাদরটা টেনে নিলেন গায়ে। আলী আহমেদের স্বপ্নটা ষ্টেশন সংক্রান্ত হলেও এর আগে তিনি কখনোই একা ষ্টেশনে যাননি। আজই প্রথম ষ্টেশন যাচ্ছেন।
সব কিছুই যেন পানির ভিতর থেকে দেখছেন। স্টেশনে একটা ট্রেন থেমে আছে মনে হল। সে দিকে লক্ষ না করে বেঞ্চি খুঁজে বসলেন। বেশ ভিড়। ভিড়ের গুঞ্জন। গুঞ্জন কখনও বাড়ে, কখনও একেবারে কমে যায়। গত দশ বছর ধরে এমন হচ্ছে। মাঝে মাঝে পরিপূর্ন বধির হয়ে যান আলী আহমেদ। তবে এসব অস্বস্তিকর অনুভূতি পাত্তা দেন না তিনি। আলী আহমেদ এক ধরনের নির্লিপ্ত মানুষ। ষ্টেশনে এদিক-ওদিক গরীব মানুষের জটলা। এদের জীবনে শুভ পরিবর্তন আনবেন বলেই পঞ্চাশের দশকের শেষে মার্কসবাদী আন্দোলনে জড়িয়েছিলেন আলী আহমেদ। অথচ ...সেই স্বপ্নটা ... আলী আহমেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। স্বপ্নটা কেন যে দেখেন, বারবার দেখেন, এখনও বুঝে ওঠা গেল না। জীবনের রহস্যময় দিকটিও ঠিক বুঝে ওঠা গেল না।
ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে থাকেন আলী আহমেদ। স্বপ্নে দেখেছেন, একজন এসে পাশে বসে। নাঃ, তেমন কেউই আসে না, পাশে বসে না।
ষ্টেশনের বেঞ্চে বসে থাকে এক নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ।
সময় কেটে যেতে থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×