somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরওয়ের রূপকথা: ঘাসের পুতুল

১২ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক দিন আগের কথা। নরওয়ে দেশে এক রাজা ছিল। আর সেই রাজার ছিল এক-এক করে বারোটি ছেলে। রাজপুত্ররা দেখতে-দেখতে একদিন বড় হয়ে গেল। রাজা রাজপুত্রদের ডাকল। বলল, তোমরা এখন বড় হয়েছে। যাও, এখ তোমরা বউয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়।
রাজার কথা শুনে রাজপুত্রেরা ভারি খুশি হল। তারা লাল টুকটুকে বউই নিয়ে আসবে।
রাজা বলল, দেখ, যে কোনও মেয়েকে আবার বিয়ে করে বসো না যেন। যে মেয়ে সুতা কাটতে পারে, কাপড় বুনতে পারে, একদিনেই জামা সেলাই করতে পারে সেরকম মেয়েকেই বিয়ে কোরো কিন্তু।
এই বলে রাজা রাজপুত্রদের ঘোড়া আর ঢাল-তলোয়ার দিলেন।
রাজপুত্ররা ঢাল-তলোয়ার নিয়ে মনের আনন্দে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল।
কিছু দূর যাওয়ার পর রাজপুত্ররা ঘোড়া থামাল।
রাজপুত্রদের মধ্যে সবচে ছোট যে রাজপুত্রের তার নাম ছিল বুটস। বুটসকে অন্য রাজপুত্ররা দারুণ হিংসে করত। তারা বুটস কে সঙ্গে নেবে না। বুটস কোনও কাজের না।
তারা বুটস কে পথের মাঝখানে ফেলে রেখে আবার ঘোড়া ছুটিয়ে দিল।
বুটস মনের দুঃখে ঘোড়া থেকে নামল। এখন কোথায় যাই, কি করি। এমন সব ভাবতে লাগল সে। বউ নিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরে না -গেলে রাজা আবার রাগ করবে। কিন্তু আমি এখন বউ পাই কোথায়?
বুটস বসে বসে কাঁদতে লাগল।
ওর চারপাশে ঘাসের বন। সোনালি রোদে ডুবে আছে। ঘাসের লম্বা ডগাগুলি দুলছিল বাতাসে । হঠাৎ বুটস দেখতে পেল যে ওর পায়ের কাছে ঘাসগুলি নড়ছে। ওখানে ছোট সাদা একটা কি যেন।ওমাঃ, ছোট্ট একটা মেয়ে যে! অনেক ছোট্ট। বুটস ঝুঁকে দেখল: ঘাস দিয়ে তৈরি একটা ছোট পুতুল। চমৎকার একটা চেয়ারে বসে আছে। আহা, কী সুন্দর দেখতে!
ঘাসের পুতুল কে বুটস- এর ভারি পছন্দ হয়ে গেল।
ঘাসের পুতুল রিনরিনে কন্ঠে বলল, তুমি কে গো? এখানে কি করছ শুনি?
বুটস তখন ঘাসের পুতুলকে সব খুলে বলল। ওর দুষ্টু ভাইদের কথা বলল, রাজার কথাও বলল। ও যে বউয়ের খোঁজে বেরিয়েছে সে কথাও বলল। বলল, যে কোনও মেয়ে হলে চলবে না কিন্তু। যে মেয়ে সুতা কাটতে পারে, কাপড় বুনতে পারে আর একদিনেই জামা সেলাই করতে পারে- সেরকম মেয়েকেই বিয়ে করবে বুটস।
ঘাসের পুতুল মন দিয়ে বুটসের কথা শুনল। তারও যে বুটসকে ভারি পছন্দ হয়েছে। তা ছাড়া ঘাসের পুতুল সুতা কাটতে পারে, কাপড় বুনতে পারে একদিনেই জামা সেলাই করতে পারে। তবে সে জামা ছোট। অনেক ছোট।
বুটসকে সে কথা ঘাসের পুতুল বলল।
বুটস বলল, তালে আমি তোমাকে বিয়ে করব। তুমি দেখতে খুব সুন্দর।
ঘাসের পুতুল লজ্জ্বা পেলেও রাজি হল । বুটসও খুশি হল । আবার লজ্জ্বাও পেল। ঘাসের পুতুল এত ছোট! রাজা একে দেখে কি মনে করেন।
বুটস বলল, তা'লে এখন তুমি আমার ঘোড়ার পিঠে চড়ে বস।
ঘাসের পুতুল বলল, কেন? আমি তোমার ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসব কেন?
বুটস বলল, বারে। তুমি রাজপ্রাসাদে যাবে না? কেন- তুমিই না তখন আমায় বললে যে তুমি আমায় বিয়ে করতে চাও।
না। আমি ঘোড়ায় চড়ব না। ঘাসের পুতুল ঘাড় বাঁকিয়ে বলল। অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল।
তালে? তালে তুমি কীভাবে রাজপ্রাসাদে যাবে? বলে অবাক হয়ে ঘাসের পুতুলের দিকে তাকিয়ে রইল বুটস।
ঘাসের পুতুল বলল, আমি যাব রূপোর চামচে করে । আমার ছোট-ছোট দুটি সাদা ঘোড়া আছে।
ঠিক আছে। তাই চল। বুটস বলল।
বুটস ঘোড়ায় আর ঘাসের পুতুল দুটি ছোট ছোট ঘোড়ায় টানা রূপোর চামচে যেতে লাগল। অবশ্যি ঘাসের পুতুল যাকে সাদা ঘোড়া বলছে, সেগুলি আসলে ছোট ছোট দুটি ইঁদুর!
যা হোক। বুটস রাস্তার ধার ঘেঁষে চলতে লাগল। কারণ, ঘাসের পুতুল এত ছোট । যদি তার ওপরে ধপাস করে পড়ে যায়!
তারপর যেতে-যেতে যেতে-যেতে পড়ল একটা নদী।
বুটসের ঘোড়া নদীর পাড়ে এসে নদীর পানি দেখে পেল ভয়। ঘোড়াটা পথ আটকে চিহি চিহি করতে লাগল। আর তাতে হল কী জান - ঘাসের পুতুল নদীর পানিতে পড়ে গেল ... আর হাবুডুবু খেতে লাগল ।
বুটস-এর কান্না পেল। সে কী করতে বুঝতে পারল না।
সেই নদীতে ছিল একটা যাদুকর মৎস্যপুরুষ (Merman) সেই যাদুকর মৎস্যপুরুষই নদীর পানি থেকে ঘাসের পুতুলকে তুলে এনে দিল পাড়ে ...
আর কী আশ্চর্য!
ঘাসের পুতুল আর ছোটটি নেই। অনেক বড় হয়ে গেছে। প্রায় বুটসের সমান। আর কী সুন্দরই-না দেখাচ্ছে ওকে। যেন নরওয়ে দেশের লাল টুকটুকে রাজকন্য।
বুটস খুশিতে আটখানা হয়ে রূপসী ঘাসের পুতুলকে ঘোড়ায় তুলে নিল।
রাজপ্রাসাদের ফিরে বুটস দেখল ওর অন্য সব ভাইয়েরাও বউদের নিয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু ভাইয়ের বউগুলি দেখতে ভারি কুশ্রী। তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝগড়া করছে। তাদের মাথায় নোংরা টুপি। সেই টুপিতে ঝুল আর আলকাতরা লেগে আছে। বৃষ্টির পানিতে ওদের মুখগুলি নোংরা হয়ে আছে। ভারি কুশ্রী আর কুৎসিত দেখাচ্ছিল ওদের ।
ভাইয়েরা বুটস আর ঘাসের পুতুলকে দেখে ঈর্ষায় জ্বলে উঠল। রাজা কিন্তু বুটস আর ঘাসের পুতুলকে দেখে খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলেন। রাজা অন্য ছেলেদের আর তাদের বউদের রাজপ্রাসাদ থেকে বার করে দিলেন। তারপর বুটস-এর সঙ্গে ঘাসের পুতুলের বিয়ে দিলেন। বিয়ের দিনে নানা রকম উপহার নিয়ে ভোজসভায় রাজ্যের লোকজন এল।
তারপর?
তারপর বুটস আর ঘাসের পুতুলের দিনগুলি বড় সুখে কাটতে লাগল। অনেক অনেক সুখে। ... যদি আজও তারা বেঁচে থাকে তো আজও তারা সুখেই আছে ...

রূপকথাটি অনুবাদ করেছি Rajasir সম্পাদিত 100 Stories from around the World বই থেকে
বইটির ডাউনলোড লিঙ্ক
http://www.mediafire.com/?6a01096liz8k6zw
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×