somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে প্রেম এমন কী ব্রিটিশ সিংহাসনকেও অগ্রাহ্য করেছিল

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেমের কারণে সিংহাসন পরিত্যাগ- এ কেবল রূপকথাতেই বুঝি সম্ভব। অথচ বিংশ শতকেই সে রকম একটি বিস্ময়কর ঘটনা সম্ভবপর হয়েছিল। ইংল্যান্ডের রাজা অস্টম এডওয়ার্ড মাত্র ৩২৫ দিন রাজত্ব করবার পর ১৯৩৬ সালে একজন মার্কিন মহিলাকে বিবাহ করবার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেন। যে মহিলাটি কেবল বিবাহিতাই নন, আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। সেই মার্কিন মহিলার নাম মিসেস ওয়ালিস সিম্পসন। স্থূল স্বার্থের ওপর মানবিক আধ্যাত্মিকতার জয় হওয়ায়- এই অভাবনীয় ঘটনাটি তৎকালীন সারা বিশ্বে প্রচন্ড আলোরণ তুলেছিল। প্রেমের অর্ন্তগত শক্তি উপলব্দি করে সারা বিশ্বের মানুষ স্তব্দ হয়ে গিয়েছিল। কি ছিল সেই স্বর্গীয় প্রেমের পটভূমি? একুশ শতকের প্রারম্ভে বসে আমরাও কৌতূহল বোধ করি। সেই ভালোবাসার গল্পটির দিকে একবার চোখ ফেরানোর জন্যই এই লেখার আয়োজন ...



বেসি ওয়ালিস ওয়ারফিল্ড। তরুণী বয়েসে।
ওয়ালিস সিম্পসন-এর জন্ম ১৮৯৬ সালের ১৯ জুন । আমেরিকার পেনসালভানিয়ার ব্লু রিজ সামিটে । অভিজাত পরিবারে মেয়ে । পারিবারিক নাম ছিল বেসি ওয়ালিস ওয়ারফিল্ড।

১৯১৬ সালে লেফটেনান্ট আর্ল উইনফিল্ড স্পেন্সারকে বিয়ে করেন ওয়ালিস। স্পেন্সার ছিলেন আমেরিকান নেভির একজন পাইলট। বেসি ওয়ালিসেরই হয়তো কপাল মন্দ ছিল। কেননা ক্রমশ মদ্যপ হয়ে ওঠে স্পেন্সার। যে কারণে বিবাহ আর বিবাহ থাকল না, হয়ে উঠল রণক্ষেত্র। ১৯২৭ সালে বিবাহ বিচ্ছেদ মাধ্যমে ইতি ঘটে অশুভ দাম্পত্যজীবনের । বিচ্ছেদের মাত্র ছ’মাস পরই আর্নেস্ট সিম্পসন কে বিয়ে করেন ওয়ালিস। তারা, নিয়তির ইঙ্গিতেই কি না জানি না, লন্ডনে সেটেল করেন। ওয়ালিস আগে থেকেই অভিজাত সমাজে মেলামেশায় অভ্যস্থ ছিলেন । লন্ডনে একটা পার্টিতেই প্রিন্স এডওয়ার্ড কে প্রথম দেখেন ওয়ালিস। আজ আমরা জানি ... প্রথম দেখাতেই দু’জনই দু’জনার প্রতি গভীর আকর্ষন বোধ করেছিলেন। নইলে পরবর্তী ঘটনাসমূহ ঘটা সম্ভবপর ছিল না।



প্রিন্স এডওয়ার্ড। পুরো নাম: এডওয়ার্ড এলবার্ট ক্রিশ্চিয়ান জর্জ অ্যান্ড্রু প্যাট্রিক ডেভিড । ইনি ভালোবাসার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করে পৃথিবীর ইকিহাসে অমর হয়ে আছেন । এডওয়ার্ড-এর জন্ম: ১৮৯৪ সালের ২৩ জুন । বাবা: রাজা পঞ্চম জর্জ। মা: ম্যারি অভ টেক। বংশ: হাউজ অভ উইন্ডসর। ১৯১৭ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ হাউজ অভ উইন্ডসর প্রতিষ্ঠা করেন।

লন্ডনের সেই পার্টিতে প্রথম দেখার পরই প্রিন্স এডওয়ার্ড গভীরভাবে ওয়ালিস-এর প্রেমে পড়ে যান। এতে অনেকেই ওয়ালিস সিম্পসন কে দায়ী করেছিল। হাজার হলেও প্রিন্স এডওয়ার্ড ব্রিটেনের সিংহাসনে বসতে যাচ্ছেন। তার পাশে ওয়ালিস সিম্পসন কে? কিন্তু ব্যাপারটা ছিল সর্ম্পূন উল্টো। প্রিন্স এডওয়ার্ডই ওয়ালিস এর রূপে গুণে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আসলে বিষয়টি তো ব্যাখ্যাতীত। আবেগের বিষয় বলেই যা কথায় কিংবা শব্দে প্রকাশ সম্ভব না। ওয়ালিস একবার বলেছিলেন: একবার জলপথে ভ্রমনের সময় "crossed the line that marks the indefinable boundary between friendship and love" (ওয়ালিস কী সহজে কথাটা বললেন, কিন্তু, আজও এটি নারীপুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা ...)

১৯৩৬ সালের ২০ জানুয়ারি। রাজা পঞ্চম জর্জ, প্রিন্স এডওয়ার্ড-এর বাবা, মারা গেলেন। এডওয়ার্ড অস্টম এডওয়ার্ড উপাধি ধারণ করে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহন করলেন। এডওয়ার্ড-এর ওপর গ্রেট ব্রিটেনের সরকার এবং জনগনের অনেক আশা ছিল । সময়টা টালমাটাল। জার্মানিতে নাৎসীবাদের উত্থান ঘটছে। অথচ রাজদরবারের সদস্যদের এড়িয়ে চলছে রাজা। রাজার কথাবার্তাও কেমন অগোছালো। ওয়ালিস-এর প্রতি প্রবল প্রেমমগ্নতা এভাবেই রাষ্ট্রীয় কাজে বাধার সৃষ্টি করছিল।



ওয়ালিস সিম্পসন । প্রেমের পথ কখনোই ফুলে - ফুলে ঢাকা থাকে না। তৎকালীন ব্রিটেনবাসী ওয়ালিসকে জার্মান গুপ্তচর মনে করত। মনে করত মার্কিন মহিলাটি জার্মান সরকারের কাছে গোপনে ব্রিটিশ নথিপত্র পাচার করছে। কিছু সংখ্যক ঐতিহাসিক আজও হিটলারের সঙ্গে ওয়ালিসের একটা সম্পর্ক ছিল বলে প্রমাণ করার জন্য ব্যস্ত । অবশ্য এ কথা সত্য যে ... তিরিশের দশকের শেষে নাৎসী সরকারের প্রতি নমনীয় ছিলেন ওয়ালিস সিম্পসন ।

ওদিকে একজন তালাকপ্রাপ্তা মার্কিন নারীকে বিবাহ করা ব্রিটেনের একজন রাজার পক্ষে সাংবিধানিকভাবেই সম্ভব নয়। রাজা অস্টম এডওয়ার্ড এর সামনে তিনটে পথ খোলা ছিল:
(ক) ওয়ালিসকে ত্যাগ করা।
(খ) ওয়ালিসকে বিবাহ করা যাতে সরকারের কর্মচারীদের একযোগে পদত্যাগের সমূহ সম্ভাবনা ।
(গ) সিংহাসন ত্যাগ করা।
আজ আমরা জানি এডওয়ার্ড কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যে কারণে এই পোস্টের শিরোনাম: “যে প্রেম এমন কী ব্রিটিশ সিংহাসনকেও অগ্রাহ্য করেছিল।” এডওয়ার্ড -এর ছোট ভাই এলবার্ট রাজা ষস্ট জর্জ উপাধি ধারণ করে ব্রিটেনের সিংহাসনে বসেন। তবে বড় ভাই এডওয়ার্ড কে ‘ডিউক অভ উইন্ডসর’ উপাধি দান করেন। তারপর থেকে এডওয়ার্ড ‘ডিউক অভ উইন্ডসর’ নামেই পরিচিত। আজও।



একত্রে স্বর্গীয় যুগল।

এদিকে ওয়ালিস সিম্পসন স্বামী আর্নেস্ট সিম্পসনের বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন । ওসব ঝামেলা মিটলে ‘ডিউক অভ উইন্ডসর’ -এর সঙ্গে ফ্রান্সে চলে আসেন। এও এক ধরণের নির্বাসন। ‘ডিউক অভ উইন্ডসর’ ভালোবাসার জন্য প্রথমে সিংহাসন ছাড়লেন, তারপর মাতৃভূমি ত্যাগ করলেন।
ফ্রান্সেই স্বর্গীয় জুটির বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল ।
তারিখ? ১৯৩৭ সালের ৩ জুন ।
ডিউক অফ উইন্ডসর তাঁর প্রিয়তমাকে ১৯.৭৭ ক্যারাট ওজনের একটি প্লাটিনাম এর সেট উপহার দেন । আর একটি চতুস্কোন এমারেল্ড রিং । বলাবাহুল্য, বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের রাজকীয় পরিবারের কেউই ছিল না।



ফ্রান্সের Château de Candé এখানেই স্বর্গীয় জুটির বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।আর বিবাহিত জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কেটেছিল ফ্রান্সে।

‘ডিউক অভ উইন্ডসর’মারা যান ১৯৭২ সালে। ওয়ালিস অবশ্য ১৯৮৬ সাল অবধি বেঁচে ছিলেন।



ওয়ালিস। ১৯৭০ সালে তোলা।



উইন্ডসর ক্যাসল-এর সমাধি। এখানেই পাশাপাশি দুটি কবরে শায়িত স্বর্গীয় জুটি।

ছবি: ইন্টারনেট।

তথ্যসূত্র :

Click This Link
Click This Link
http://news.bbc.co.uk/2/hi/uk_news/2699035.stm
Click This Link
Click This Link
Click This Link
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×