কথায় আছে, "অঙ্গে নাই ছাল, মুখে তার বড় বুলি রাধা -কৃষ্ণ নাম"। অর্থাৎ কিনা, একজন অস্তিত্বহীন ও নিজেকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনায় নাভিশ্বাস এমন একজন অতি নগণ্য মানুষ আমি । আমার আবার জগত, মানুষ কিংবা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এত লাফালাফি কিসের? নিজের ভাত যোগাবার মুরোদ নেই,রাজ্য নিয়ে ভাবনা? এমন আরো কত কি বাক্য বাণে একেবারে ঠুটুজগন্নাথ অবস্থা আমার প্রায়। তবু কেন জানি লজ্জা আমায় হার মানাতে পারে না। ভেতরের চাপা কষ্ট গুলোয় দম আমার বন্ধ হয়ে আসে । আর অমনি কিছুটা হাপ ছেড়ে বাঁচি,কলম হাতে নিয়ে একটা কিছু লিখার চেষ্টা করি ।
আমি বিশ্বাস করি, যদি "বিন্দু বিন্দু জল গড়ে তুলে সাগর অতল" তাহলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিন্দু বিন্দু প্রতিবাদ এক সময় নিশ্চয়ই জুলুমবাজ মানবতা বিরোধীদের বিনাশ করতে প্রলয় ঘটাবে । যাই হউক, সম্ভবত বর্বর যুগের চালচলন, কথাবার্তা,আচরণ আর জীবন যাত্রার ভয়াবহতা বিস্মরণ হয়নি মানুষের । তবে,নিশ্চিত ভাবে প্রশ্ন তোলা যায় অহংকার, হিংসা, স্বার্থপরতা আর বিভেদ মুনষত্বকে প্রায় গিলে ফেলেছে কিনা? বিশ্ব বিবেক চরম ভাবে লাঞ্ছিত হয়ে মানবতার রক্ত-মাংসহীন হাড্ডিসার দেহখানি ভূলুণ্ঠিত হয়ে যখন পচন ধরেছে, তখন অজ্ঞানতায় আমরা কিছু অমানুষ করতালি দিয়ে শুকুনকে উন্মাদনায় উৎসাহ দিচ্ছি কিনা? রাজনীতিবীদ, ধর্ম ব্যবসায়ী সহ সব পেশার মানুষের অনেকেই আজ যেন নিজের কুলশিত বদনখানি আয়নায় দর্শন করে লজ্জা পেলেও মুখ ঢেকে নেয় অন্য কোন হীন নেশায়। এহেন অনৈতিকতায়ই আজ একবিংশ শতাব্দীতেও সভ্যতার দাম্ভিকতায় ঘটছে মানবতার গর্ভপাত!
৭১ রে পাক বাহিনীর বর্বোরোচিত হায়ানা আক্রমণের ঘা এদেশে একেবারে শুকিয়ে গেছে তা বলা ঠিক নয়। বরং দোসরদের প্রেতাত্মারা পাকিদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ । সেই বিতর্কে গমন আমার উদ্দেশ্য নয়। তবে মায়ানমারের অসভ্যতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ৭১ এর অসহনীয় বিদগ্ধ বেদনার স্মৃতি । সেদিনের কত অসহায় মমতাময়ী জননীর আর আদরের ভগ্নীর বাচাও বলে আত্মনাথের করুণ শব্দ আজোও তাড়িয়ে বেড়ায় স্ত্রী হারা স্বামী, সন্তান হারা মা আর বোন হারা স্নেহের ভাইকে। মানুষ,গরু, ছাগলের উৎকট পচা গন্ধ আজো ভুলেনি ভুক্তভোগীরা। মর্মান্তিক এই অসভ্যতার স্মৃতি চিরজীবন বয়ে বেড়াবে বঙ্গবন্ধুর বাঙালির রক্তমাখা ইতিহাস। ৭১ রে হিন্দুরা বেশি নির্যাতিত হলেও পাকিদের উদ্দেশ্য ছিল শুধুমাত্র একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করা এমনটি নয়। আর মায়ানমার তার ঠিক উল্টোটা করছে । সুচির উদ্দেশ্যই যেন রোহিঙ্গাদের ধবংস নিশ্চিত করা। অনেকের মতে এতে নাকি মায়ানমারের রাষ্ট্রিয় স্বার্থ বিজড়িত ।এমন ঘটনা নাকি বিশ্বের অতিত রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল কোন ঘটনা নয়। বর্ণবাদ সংঘর্ষ, জাতিগত দাঙ্গা, রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাস, বানিজ্য সন্ত্রাস , ভেটু পাওয়ারের স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রয়োজনে পারমানবিক বোমার অপব্যবহার ইত্যাদি কত উপমায় নরঘাতকরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টায় রত । রোহিঙ্গা নাকি মায়ানমারের নিরাপত্তার হুমকি স্বরূপ । এমনি করে শাক দিয়ে ভাত ঢাকবার শত চেষ্টা । সভ্য বিশ্ব বিবেক, ধিক্কার দিয়ে বলে এসব যুক্তি বিকৃত ও দিশেহারা উন্মাদের! কারণ, অঙ্গে ব্যথা হলে অঙ্গ কেটে ফেলে দেওয়া সমাধান নয়। বরং উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে ব্যথা উপশম করে অঙ্গ রক্ষা প্রয়োজন । আমি "বিবেক" নামধারী ক্ষুদ্র মানুষটি যদি বলি, নিজেদের ব্যভিচার ঢাকার অপকৌশল হিসেবে রোহিঙ্গা অত্যাচারের বৈধতা যদি কোন স্বার্থান্বেষী রাষ্ট্র তোমাদের দেয়, তাহলে কি ভবিষ্যত বাস্তবতা তোমাদের খুব মসৃণ হবে? ইতিহাস কি কখনো কাউকে ক্ষমা করেছে? ক্ষমা করবে কি ঘোরে দ্বাড়ানো রোহিঙ্গারা? বাংলাদেশে দীর্ঘ অতীত গত হলেও এদেশের সঠিক ইতিহাস ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতবদ্ধ, ডিজিটাল দেশ গড়ার আধুনিক কারিগর ইতিহাস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ কি অনেকাংশেই সফল হননি ? দেশদ্রোহী মানবতা বিরোধী, বঙ্গবন্ধুর আত্মসিকৃত হত্যাকারী, জাতিয় চার নেতা হত্যা ও বুদ্ধিজীবী হত্যার দম্ভকারী পাষণ্ডদের আকাশচুম্বী অহংকার কি চুন্ন হয়নি? খুনিদের বিচার হয়নি বলে ব্যথা বুকে চেপে পরলোকে গেছেন এমন দুর্ভাগা মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিচার দৃশ্যমান হওয়ায়, মৃত্যুকে বরণ করতে আর দু:খ নেই এমন বক্তব্য গর্বের সাথে বলতে দ্বিধা করেন না আজ অনেকেই । আসল কাজটি নাকি বিচক্ষণতার সাথে আইনানুগ ভাবেই সেরে ফেলতে কার্পণ্য করেননি বুদ্ধিমতী সত্য ফিরিয়ে দেওয়ার ইতিহাস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা এত সহজ নয় ।
দীর্ঘ বছর ক্ষমতা পায়নি দেশ স্বাধীনের নেতৃত্ব দেওয়া এই সেই আওয়ামীলীগ। মনে করার কারণ রয়েছে যে, দেশ স্বাধীন পরবর্তী আওয়ামীলীগের ভূল- ভ্রান্তি ও অসচ্ছতা পরাজয়ের অগ্নিতে ঘৃতাহুতি তুল্য । সম্মান রেখেই বলা যায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসেন মো: এরশাদের কলংকিত ক্ষমতায়ন ও দু:শাষণ দীর্ঘ হলেও পরিণতি খুবই উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার। কারণ যাই হউক, অস্বাভাবিক পথে বিএনপির মসনদ দখল বিতর্কিত হলেও, রাজনৈতিক কৌশলে সফল বিএনপি, জনগণের একটা বড় অংশের ধর্মিয় ভাব প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ বছর ক্ষমতাকে নিজের গৃহে বন্দি রাখতে সক্ষম হয়েছিল। দুষ্টুমি করে দুষ্টরা বলে, রাষ্ট্রিয় মসনদ যখন হাওয়া ভবণে স্থানান্তরিত হলো, শান্তির পায়রা ক্ষমতা নিয়ে উড়তে উড়তে আওয়ামী ছাদে আশ্রয় নিল । অর্থাৎ কিনা, যেমন কর্ম তেমন ফল হল। দেখা যাক, বর্তমান অগ্নি পরীক্ষায় আওয়ামীলীগের কি দশা হয়। যাই হউক, ধান ভানতে শিবের গীত আর নয়।
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সুচির দাড়ি পাল্লায় আজ একদিকে মানুষের লাশ আর অন্য দিকে নোবেল পুরস্কার । বিশ্ব সম্মান অর্জনকারী নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একজন মহান মানুষের আজ একি শুকুন দৃষ্টি! যেন নক্ষত্রের মল-মুত্রময় কীটপতঙ্গ বিশিষ্ট নর্দমায় পতন! হায় এ যেন, সুচির অকালে অপমৃত্যু! বিস্ময়কর ব্যাপার যে, রাজনীতি আজ নির্বাসিত অজ্ঞাতবাসে। ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, আমলা, লেখক, গবেষক , সাংবাদিক ও নোবেল পুরষ্কার বিজয়ি আর জাতির পিতাগণ সবাই আজ রাজনীতিবিদ হতে চায়। অথচ প্রকৃতির নিয়মেই তা অসম্ভব । আম্রকাননে বিল্লবৃক্ষের সন্ধান সময়ের অপচ্য় মাত্র ।
স্ব-যোগ্যতা বিচার না করেই সবাই যেন আজ অর্থ, বিত্ত আর ক্ষমতাধর হবার নেশায় নেতা হতে পাগল প্রায়।
আজ বৃটেনের সিটি কাউন্সিলর সুচিকে দেওয়া ফ্রিডম অব অক্সফোর্ড খেতাব কেড়ে নিতে চায় কেন? কারণ, বানরের গলায় মুক্তোর হার শোভা পায় না বলে কিংবা মান থাকতে খেলা ভংঙ না দেওয়ার পরিণতির জন্য। সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজয়ী একজন অসাধারণ মানুষ কিংবা কোন দেশের জাতির পিতা যখন দলীয় কোন রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়, ঠিক তখনি নিজের পতন তড়ান্বিত করার কাজটি স্ব-হস্তে বপন করে বলে আমি বিশ্বাস করি। তাঁরা জাতির গৌরব ও সম্পদ । তাঁরা বিভক্ত হয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে কেন? তাঁরা অখণ্ড থেকে জাতির দু:সময়ে নিরপেক্ষ কাণ্ডারী হয়ে জাতিকে কলহ মুক্ত করে, ইতিহাসে অমর হয়ে নিরাপদ থাকবে। বোধ হয়, সভ্য মানুষের প্রত্যাশা এমনটাই । শুনা যাচ্ছে, সীমান্ত সুরক্ষা, ১৯৯২ যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী নাকি যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গাদের ফেরৎ নেওয়া হবে । এসবই শুভংকরের ফাকি বলে বোধ হয়।
নিশ্চয়ই দেশবাসীর মনে আছে,জাতির পিতার নেতৃত্বে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের কঠিন পথ পরিক্রমায় বাঙালি পেয়েছে লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে একটি সার্বভৌম সোনার বাংলা । তাই মনে করি, পররাষ্ট্রনীতিতে সার্বক্ষণিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টির অভাবে এদেশে রোহিঙ্গা মহামারীতে দীর্ঘ মেয়াদী বিপর্যয়ের আশংকা থেকে যাবে। যার পরিণতি সবাইকে স্পর্শ করবে । মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের মানবতার বিপর্যয়ে সভ্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে, -------এ পর্যন্ত সবই যথাযথ ও যুক্তিযুক্ত ।
অতপর সাধু সাবধান! রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বড়ই জটিল ও অনিশ্চিত। দূ-বছরে দু’হাজার ফেরত গেলেও হয়তবা ২০ বছরে দুলাখ পাঠানো সম্ভব নয়।-----আর ১০ লাখ ফেরত পাঠানো গেলেতো নিশ্চয়ই কূটনৈতিক সফলতার দৃষ্টান্ত বিশ্বে খ্যাত হয়ে থাকবে । সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মুর্দা কথা হলো, পরকে প্রেম বিলিয়ে পরকীয়ায় যেন নিজের সংসার তছনছ হয়ে না পড়ে!
বাঙালি অতিথি পরায়ণ । রোহিঙ্গারা আমাদের অতিথি ।অতিথি সেবায় কোন ত্রুটি বিচ্যুতি বাঙালি সংস্কৃতি নয়। তবে বিশ্ব জনমত গড়ে রোহিঙ্গাদের যথাশিঘ্র নিজ গৃহে নিরাপদ গমন নিশ্চিত করাই সকলের জন্য মঙ্গলজনক ।