অতি আবেগ শুভকর নয়, এতে জ্ঞানীরাও তাড়িত হয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দেন। ফলে, সংগত কারনেই মুর্খদের কাছেও জ্ঞানিরা উপহাসের পাত্র হিসেবে গণ্য হয়। গ্রহণযোগ্য মাত্রায় পরিশীলিত আনন্দের প্রকাশ হয় উপভোগ্য ও সুখকর , অপরদিকে মাত্রাহীন অতি ভীতি, দুঃখ ক্রোধ কিংবা আবেগের তাড়নায় বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্তের যাতনায় ক্লিষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্র্যাম্পের অধুনা একটি বক্তব্য, আমার কাছে জ্ঞানীর ভীমরতি বলে মনে হয়েছে। সন্ত্রাস মোকাবিলায়, স্কুল ছাত্রদের রক্ষায় সম্মানিত ক্রোধান্বিত প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প শিক্ষকদের অস্ত্র ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেন! তিনি হয়তোবা নিরাপত্তার প্রশ্নে, অদূর ভবিষ্যতে ছাত্রদের স্কুল ব্যাগে বই -খাতা ও কলমের সাথে অস্ত্র রাখার পরামর্শ দিতেও কার্পণ্য করবেন না! ফলে, আইসক্রিম নিয়ে ঝগড়া -ঝাটি করে ছাত্ররা গোলাগুলি করলে, ট্র্যাম্প লজ্জা না পেলেও , আবেগের তাড়নায় গাঁজাখুরি এমন অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে আমেরিকাবাসি একদিন ডুকরে কেঁদে ওঠবে! সিদ্ধান্ত গ্রহণে, রবি ঠাকুরের "জুতা আবিষ্কার" কবিতার হবুচন্দ্র আর গবুচন্দ্র মন্ত্রীর দশা না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। পায়ে ধূলো ঠেকাতে চামড়া দিয়ে পৃথিবী ঢেকে দেওয়ার হাস্যকর সিদ্ধান্ত! যা কিনা একজন সামান্য মুচি শুধু মাত্র পা দুটি চামড়ায় ঢেকে সঠিক সিদ্ধান্ত দাতা হিসেবে ইতিহাস হয়ে রইল!
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে পুরো বাংলাদেশ এক মিনিট থাকবে অন্ধকারে (সংগ্রহ সূত্র :দৈনিক জনকণ্ঠ,তারিখ :০৫/০৩/২০১৮) , আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে (ব্ল্যাক আউট) । বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালীর মুক্তির আন্দোলনকে গলাচাপা দিয়ে নি:শেষ করে দিতে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী অপারেশন সার্চ লাইট নামের সেই অভিযানে ঢাকায় গণহত্যা চালায় ! সেদিনের আতংক, ত্রাস ও বিভীষিকার স্মৃতিচারণে নিশ্চয়ই আজও শিউরে ওঠে প্রতিটি বাঙালি ও বিশ্ব বিবেক! পাকিদের সৃষ্ট হায়ানা আক্রমণের ভয়ংকর সেই রাতটা তাই কালরাত! যতদিন এদেশবাসি মনেপ্রাণে বাঙালির চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে থাকবে অন্তত ততদিন পাকিদের এই পশুচিত বর্বর হামলাকে জানাবে ঘৃণা ও ধিক্কার!
প্রশ্ন হলো, গণহত্যা দিবস পালনে প্রতিকি হিসাবে এক মিনিট বিদ্যুত বন্ধ করে, দেশকে অন্ধকার করে সেই দিনকে স্মরণ করা বা পাকিদের প্রতি প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্তটির যৌক্তিকতা কতটুকু নিখুঁত বা সময়োপযোগী ? সময় এখন উন্নয়নের, দেশ যাচ্ছে এগিয়ে, অনুন্নত পিছিয়ে পড়া সেকেলে ভাবনাকে বাদ দিয়ে জনমুখি সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা কোথায় ? বরং মনে করি, গণহত্যা দিবসে দেশের সমগ্র বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক সচল রেখে একই সাথে একই সময় এক মিনিট কোন লোড সেডিং না করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রজ্জ্বলিত হবে বৈদ্যুতিক বাতি সমূহ ! আক্রমণকারী পাকিরা চেয়ে দেখবে , গণহত্যার কালরাতের সব অন্ধকার দূর করে বাংলাদেশ আজ পূর্ণিমার চাঁদের মত আলোকিত! আলোকিত বাংলাদেশ আজ ব্যর্থ রাষ্ট্র নয়,বরং বহুলাংশেই সফলতার হাসিতে পুলকিত!
আমি জানি, আমার যুক্তি খন্ডনের যথেষ্ঠ রসদ আছে অনেকের কাছেই।দাবি আমি করছি না যে, প্রস্তাবটি খুব বলবান। আপত্তিটি শুধু গণহত্যা দিবস পালনের পদ্ধতিটিকে ঘিরে। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, সাইরেন বাজানো, নিরবতা পালন কিংবা জাতীয় পতাকা হস্তে সমস্বরে উচ্চরবে বলি সবে, পাকিদের আজ মরণ দশা , সাব্বাস বাংলাদেশ ! বীর বাঙালির জয় বাংলা ! নতুবা জনবান্দব অন্য কোন উপায়ে দিবসটি পালন করা যেতে পারে । রাতের অন্দকারাচ্ছন্ন এক মিনিট সভ্য মানুষের কাছে খুব বেশি সময় নয় বটে, কিন্তু অপশক্তির কাছে পূর্বেই নির্ধারিত এক মিনিটের অন্ধকার রাতে পরিকল্পিত হামলার বাস্তবায়ন অধিকতর সহজ হতে পারে! ধরে নিন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সন্তান সম্ভবা মা যখন, প্রসব বেদনায় আতুর ঘরে, তখন যদি ইচ্ছাকৃত এক মিনিট বিদ্যুত বিহীন অন্ধকারে পতিত মা যন্ত্রনায় কাতর হয়ে আহাজারি করে বলেন, কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে - - - -দংশিনে যারে! সব বাদ দিন, ধরুন কোন ছিসকে চোর যদি সরকারের ঘোষিত অন্ধকারের এক মিনিটকে কাজে লাগিয়ে কারো বান্ধবীর ভেনেটি ব্যাগ টান দেয়, তাহলে তার দায় কার?
আসলে দৃশ্যমান তেমন কিছুই হয়তোবা হবে না। কিন্তু, যদি ঘোষিত এক মিনিটের অন্ধকারে ভূতের ভয় পাই বা আমার একটা সূই গচ্ছা যায়, এর দায় কার? কথায় বলে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না!