ব্রহ্মাবৈবর্তপুরাণে(হিন্দু শাস্ত্র ) আছে: রাজা সুরথ চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী ও নবমী তিথিতে শাস্ত্রবিধিমতে দুর্গতিনাশিনী দুর্গার পূজা অর্চনা করেছিলেন বসন্তকালে।পরবর্তীতে, বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে অসুরের সীমাহীন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রাবণ-বধের (অত্যাচারীকে ) জন্য রামচন্দ্র (অযোধ্যার রাজা) দুর্গা মায়ের (ঈশ্বরের শক্তি হতে উৎপন্ন দুর্গতি নাশকারিনী দেবী) কৃপা লাভের উদ্দেশ্যে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন । রামচন্দ্রের শরৎকালীন অকাল-পূজা হলেও কালক্রমে পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে হিন্দুদের ধর্মীয় জীবনচর্যার সাথে এই পূজাই বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় যে, রামচন্দ্র দুর্গাপূজো করে সেদিন মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে তিনি নিজে ও অযোধ্যার প্রজাগণের শান্তি নিশ্চিত করেছিলেন! তাতে, আমাদের লাভ কী? আমরা (হিন্দুরা) দুর্গাপূজা করবো কেন? ?
কারণ,দ্বন্দ্বময় বিচিত্র এই জগতের মানুষ অন্তরে ও বাইরে উভয় দিকেই শত্রুদ্বারা পরিবেষ্টিত । প্রতিহিংসা, সহিংসতা, আদর্শিক মতভেদ, অপর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধনী-নির্ধনের সংঘাত, উচ্চ -নীচের ভেদ, সবলের হাতে দূর্বলের নির্যাতন --এ সবই মানুষের বাইরের শত্রু। এদের দৌরাত্ম্যে জগতে আজ মানবিক মূল্যবোধ বিপর্যস্ত । তাই, রামচন্দ্রের মতো যুদ্ধে এদের পরাভূত করতে না পারলে মানুষের জাগতিক অগ্রগতি, অভ্যুদয় অসম্ভব; অপর দিকে, দুর্দমনীয় ভোগ-লালসা, দম্ভ,দর্প, অভিমান, ক্রোধ ইত্যাদি মানুষের অন্ত:শত্রু, যা একজন আদর্শ মানুষের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক। এদের বিনাশ করতে না পারলে মানুষের সার্বজনীন কল্যাণ সুদূর-পরাহত।
তাই,দুর্গা পূজার এই পুণ্যলগ্নে আমরাও রামচন্দ্র ও দেবতাদের মতো সংকল্প গ্রহণ করি: হে দেবী, যতদিন না আমাদের বাহ্য ও আন্তরশত্রুরুপী রাবণকে আমরা যুদ্ধে পরাভূত করে বধ করতে পারছি, ততদিন আমরা তোমার অর্চনা থেকে বিরত হব না, হে সর্বশক্তিস্বরুপিণী দেবী,তুমি কৃপা করে সর্বশক্তি দিয়ে শত্রু-বিনাশে সর্বতোভাবে আমাদের সহায় হও। তোমার কৃপায় রামচন্দ্রের ন্যায় সকল ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের যেন, মহাবিপদ কেটে গিয়ে শান্তি তথা মহাসম্পদ লাভ হয়।