১. বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। টেম্পুর জন্য দাঁড়িয়ে আছি চট্টগ্রামের চকবাজার মোড়ে। অনেক মানুষ অপেক্ষা করছে। রাস্তার ঐ পাশে টেম্পু থামার সাথে সাথেই ভরে যাচ্ছে। এ পাশে ঘুরে আসতে আসতে আর ২/১ সিট বাকী থাকে। সেটাতেও বসার জন্য যুদ্ধ করছে সবাই। আমি আবার যুদ্ধ পছন্দ করি না। অপেক্ষায় আছি ভীড় কমার। একের পর এক টেম্পু যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে। অনেক বীর পুরুষ ও বীর মহিলা যুদ্ধ জয় করে ভেতর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চলে যাচ্ছে! ভাবখানার অর্থ দাঁড়ায়, পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে আজকে আর টেম্পু পাবা না...
২. দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ উপভোগ করছি হঠাৎ একটা টেম্পুতে জটলা। এক লোক ভেতরে বসা কিন্তু বাইরে আরেক ছেলের(হিরোইঞ্চি টাইপ) কলার ধরে রেখেছে। আমি তাকিয়ে আছি। মাইক্রো সেকেন্ডের মধ্যে সব ঘটছে। ঐ লোক বলছে বসার সময় পকেট থেকে এই ছেলে মোবাইল নিয়েছে। আর ছেলে বলছে, আমি নেইনি। তবে বললে কী হবে, টুক করে যে ছেলেটা মোবাইলটা নীচে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে ভেতরে ঠেলে দেয় সেটা তো আমার চোখের সামনেই ঘটেছে! লোকটা সম্ভবত মোবাইল সরানোর সময় টের পেয়েছিল ঐ ছেলেকে তাই ভেতর থেকে ঐ ছেলের কলার ধরে রাখে আবার ঐ ছেলের কাছে কোন মোবাইল না থাকাতে পাবলিকও কোন একশান(!)-এ যেতে পারছে না। সব দ্রুতই চলছে...
৩. আমি আর ঐ ছেলে ছাড়া কেউ জানেনা মোবাইল কিন্তু ছেলেটিই চুরি করেছে। জানলে ভদ্রলোকরা কি বসে থাকতো এতক্ষণে? এবার আমার মনে চলছে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার তাড়না। ছোটবেলা থেকেই মসজিদের জুতা চোর, পকেটমার, ছিনতাইকারীদের পিটুনি দেখলে মায়া লাগতো। এখন যদি এই ছেলেকে ধরিয়ে দেই তাহলে ভদ্রলোকদের(আসলেই কি!) মাইর হবে সেইরাম। কিন্তু আবার যদি না ধরিয়ে দেই, তাহলে ঐ মধ্য বয়স্ক লোকটার মোবাইলটা আর পাওয়া হবে না। এদিকে টেম্পু ড্রাইভার ছাড়তেও পারছে না ঘটনা মীমাংসা না হওয়ার জন্য। সব দ্রুত ঘটছে। আমার মনে হলো, লোকটাকে মোবাইল না দিলে সারা জীবন অপরাধী থাকবো নিজের কাছে আবার ছেলেটাকেও মাইরের হাত থেকে বাঁচাতে ইচ্ছে করছে...
৪. আমি ভীড়ের কাছে গিয়ে কিছুই জানি না ভান করে একজনকে বললাম, আরে ঐ যে নীচে একটা মোবাইল পড়ে আছে! একজন মোবাইলটা নিয়ে দিল লোকটার কাছে। লোকটা বলল, এটা তারই মোবাইল। তারপর লোকটা ২/১ টা থাপ্পড় দিয়ে কলার ছেড়ে দিল। ভদ্রলোকেরাও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাদের খায়েশ পূরণ না করেই ছেড়ে দিল। ড্রাইভারও টেম্পু ছেড়ে দিল। যাক, ছেলেটাও বেদম মার খাওয়া থেকে বাঁচল আবার লোকটাও তার মোবাইল ফিরে পেল। মনটা ভালো হলো আমার। ভীড় কমার পর আমিও একটা টেম্পুতে চড়লাম। বসলাম ড্রাইভারের পাশে...
৫. টেম্পু চলছে আশকার দীঘির রাস্তার উপর দিয়ে। কাজীর দেউড়ির আগে রাস্তা উঁচু হওয়াতে টেম্পু আস্তে আস্তে চলে। টেম্পুর সামনে একটা যাত্রীবিহীন রিক্সা যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ড্রাইভার হর্ন দেয়ার পরও রিক্সা সাইড দিচ্ছে না। ড্রাইভার রাগ করে টেম্পুর মাথা লাগিয়ে দিল রিক্সার পেছনে। এবারও সব দ্রুত ঘটছে। রিক্সাওয়ালা রিক্সা থেকে নেমে এল ড্রাইভারকে মারতে। উঁচু রাস্তার কারণে টেম্পু দ্রুত চালিয়েও নিতে পারছে না। রিক্সাওয়ালা এসে দুইবার ঘুষি মারল চলন্ত টেম্পুর ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে। দুইবারই মিস হলো। আর লাগলো আমার হাতে। কারণ, আমি ছিলাম ড্রাইভারের পাশে বসা আর আমার হাত ছিল উঁচু করে ধরা। যাক, কী আর করা। টেম্পু ড্রাইভার আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। এভাবেই আমি পেলাম সততার পুরস্কার...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২০