১. অনেক বছর আগে ইত্যাদিতে একটা কৌতুক দৃশ্য ছিল এরকম। এক বগিতে দুই জন যাত্রী ছিল। একজন সুস্থ, আরেকজন একটু অসুস্থ(ঠান্ডা লেগেছে)। সুস্থ মানুষ বাতাসের জন্য ট্রেনের জানালা তুলে দেয় তখন অসুস্থ ব্যক্তির কাশি শুরু হয়ে যায়। এবার অসুস্থ ব্যক্তি জানালা নামিয়ে দেয় তখন সুস্থ ব্যক্তির গরম লাগা শুরু হয়, হাঁসফাঁস করে অস্বস্তিতে। এভাবে একজন উঠালেই আরেকজনের কাশি শুরু হয়, আর নামালে আরেকজনের হাঁসফাঁস বন্ধ হয়। এবার শুরু হয় ঝগড়া। তখন টি.টি চলে আসে। টি.টি. সব শুনে জানালাতে দেখতে পেলেন আসলে জানালার কোন কাঁচই নেই...
২. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে এক পক্ষের গর্বের শেষ নাই। ঐটা হবে, এইটা হবে, বহুত ফায়দা হবে লিখে লিখে কীবোর্ড নষ্ট হওয়ার জোগাড়। আবার আরেক পক্ষ এইটার দরকার ছিল না, খরচ বেশী হবে, লাভ হবে না, ভাড়া হবে না ইত্যাদি যুক্তি দিচ্ছেন। এখন কথা হলো, যদি লাভও হয় সেটা যেমন আমাদের জীবনমানের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না আবার লস হলেও আমাদের জীবনমানের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ৪ হাজার কোটি টাকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, পদ্মা সেতুর ব্যপক খরচের পরও জীবনমান আগের পর্যায়েই আছে। বরং খরচ বাড়ার কারণে মধ্যবিত্তের এখন সঞ্চয় ভেঙে খেতে হয়...
৩. আচ্ছা ধরে নিলাম এখন আমরা গর্বিত জাতি যাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। ধরে নিলাম, দেশের জন্য ২০ টা ট্রান্সপন্ডার ভাড়া দেয়া গেল। আবার বিদেশের জন্য বাকী ২০ টাও ভাড়া হয়ে গেল। তো আমরা কি আদৌ জানতে পারব এসব? ভাড়া কি সরকার পাবে নাকি সালমান এফ রহমান পাবে আমরা জানতে পারব? বিদেশের গুলো ভাড়া হয়েছে নাকি হয়নি সেটা কি জানা সম্ভব? বাংলাদেশে কি তথ্য অধিকার আইন সচল আছে? জিপি, রবি, বাংলালিংক কি বলেছে এই স্যাটেলাইটের কারণে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে?
৪. আবার ধরে নিলাম এটা পুরোই একটা উচ্চভিলাসী প্রকল্প। গরীব দেশের মানুষের টাকা নষ্ট। কিন্তু তাতেও বা কী আসে যায়? আমরা কি বেসিক ব্যাংকের বাচ্চুকে জেলে ভরতে পেরেছি? আমরা কি মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে জেলে ভরতে পেরেছি? আমরা কি সালমান এফ রহমানকে আইনের আওতায় আনতে পেরেছি? তাহলে যেই লাউ হেই কদু...
৫. এখন প্রশ্ন করতে পারেন আমি কোন পক্ষের? আমি বলব, আমি স্বচ্ছতার পক্ষে। আমাদের সরকারগুলোর সমস্যা হলো, priority basis - এ কাজ করে না। কখন কী লাগবে তা নির্ধারণ করা উচিত। এখন দরকার শাহজালাল বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল, কিন্তু তেনারা প্ল্যান করছেন নতুন বিমানবন্দরের। দরকার রাজধানী ঢাকার রাস্তা প্রশস্ত করা, বাস সার্ভিসের উন্নয়ন করা, ফুটপাথ দখলমুক্ত করা, রাস্তায় গাড়ী পার্কিং বন্ধ করা, বিকেন্দ্রীকরণ করা। কিন্তু তেনারা করছেন নতুন ফ্লাইওভার(তাও আবার অপ্রোয়জনীয় পরিকল্পনায় সিগনাল লাইট সহ)। এভাবে লিস্ট লম্বা হবে। কাজেই লাভ/ক্ষতি যাই হোক আমাদের অবস্থা একই থাকবে। কারণ, জানালাতে কোন কাঁচই নেই...
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:১৮