১.
চৌধুরী বাড়িতে বড় ছেলে মানে আমার বড় মামার বিয়ের আয়োজন। সব কিছু তদারকি করছে আমার খালু। চার ভায়রার মধ্যে তিনি ২য় হলেও তার কথা ছাড়া আমার নানা নানু একটুও নড়ে না! জজ কোর্টের সেরেস্তাদার তিনি। নিজ এলাকা, শশুর বাড়ির এলাকার যত জমি জমা, মামলা, কোন্দল তিনি সামলে থাকেন। তাই তার কদর এবং প্রভাব বেশী। বড় মামাও 'মেজ দুলাভাই' (আমার খালু) যেখানে ঠিক করেছে সেখানেই বিয়েতে রাজি হয়েছেন...
২.
বিয়ে বাড়িতে সবাই খুব হই হুল্লোড় করছে। মাঝে মাঝে খালুর ভরাট কন্ঠে ধমক আবার হাসি আবার নির্দেশনা চলছে। তেনার দম ফেলার সময় নেই। সব কিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। সবাই খুশী। খুব ভালো একটা আয়োজন হয়েছে। খালুও খুশী। চারিদিকে রব রব - 'এরকম সুন্দর বিয়ে এই অঞ্চলে আর দেখিনি'। সবই 'মেজ জামাই'(আমার খালু)র কৃতিত্ব...
৩.
চার বোনের পর আমার বড় মামা। মামা যতদিন বউ নিয়ে ঢাকা না যাচ্ছে ততদিন বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চার বোন। আমরা সব খালাতো ভাই বোন চরম আনন্দিত। বিয়ের পর প্রতিদিন সন্ধ্যায় খালু কোর্ট থেকে বাড়িতে আসার সময় নাস্তা নিয়ে আসেন। কোনদিন মোগলাই পরটা, কোনদিন আইসক্রিম, কোনদিন চিকেন ফ্রাই। আর খাবার আসা মাত্রই আমরা কাজিন গ্রুপ যে যা পারি খেয়ে নিই...
৪.
আজ(বিয়ের পর ৫ম দিন) খালু বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল গোমড়া মুখ! হাতে কোন খাবারের প্যাকেট নেই। নানা নানু চিন্তিত। বড় মামা গম্ভীর হয়ে ভাবছে নতুন বউ কী কোন দোষ করল? বাড়ির সবার মধ্যে চিন্তার ভাব। এমন কি আমরা 'কাজিন গ্রুপ'-ও দুষ্টুমি বন্ধ করে খালুর মন খারাপের কারণ জানার চেষ্টা করলাম। মুরুব্বীরা এক সাথে বসল। আমাদের অধিকার নেই সেখানে থাকার...
৫.
কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে, আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'খালুর মন খারাপ কেন?' আম্মা বললেন, 'উনার প্রমোশন হয়েছে'। আমি অবাক হয়ে বললাম, 'প্রমোশন হলে মন খারাপ কেন?' আম্মা বললেন 'তুমি বুঝবে না।' আমি আরো অবাক হয়ে বললাম, ' আম্মা, আমি এবার এইচ. এস. সি. পরীক্ষা দিব আর আমি বুঝব না?' আম্মা বললেন, 'উনি এখন পেশকার। পেশকারদের 'ইনকাম(!)', সেরেস্তাদার থেকে কম, তাই উনার মন খারাপ। যাও কাপড় গুছিয়ে নাও। কাল সকালে আমাদের যেতে হবে'...
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৪