একটা খবর
সরকারি চাকরি পেলেন দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুর -যুগান্তর
ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের আঘাতে দৃষ্টি হারানো সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানকে সরকারি চাকরি দেয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে 'টেলিফোন অপারেটর' পদে তাকে চাকরি দেয়া হয়।
আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সিদ্দিকুর রহমান তার কর্মস্থলে যোগদানের কথা রয়েছে।
খবরের পেছনের খবর:
পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া নতুন সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।
এক পর্যায়ে পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের আঘাতে গুরুতর আহত হন সিদ্দিকুর। এরপর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ শুরু হয়।
এক জোড়া চোখের মূল্য কত?
এমন কেউ কি আছে অন্ধত্বকে কিনে নেবে? যদি কোটি টাকাও দেয়া হয়? মনে হয়না কাউকে পাওয়া যাবে।
দৃষ্টি শক্তি আল্লাহর দেয়া এক অসীম নেয়ামত। যার মূল্য অসীম। অমুল্য।
বিনা অপরাধে সরকারের একটা বাহিনী বিনা উস্কানীতে শান্তিপূর্ণ মানব বন্ধনে এতটা অগ্রাসী হল যে একজন শিক্ষার্থীর চোখের আলো জীবনের তরে নিভে গেল! তার বিনিময়ে স্রেফ একটা সরকারী চাকুরী???
গরু মেরে জুতো দান প্রবাদ পড়েছিলাম- এ যেন তারচে বড় প্রহসন!
যে মানুষটা ছাত্রত্বই শেষ হয়নি। সামনে বিশাল জীবন- প্রেম, ভালবাসা, বিবাহ, সংসার, সন্তান!
নাহ! সে আর কারো মূখ দেখতে পাবেনা। বাবা- মাকে দেখতে পাবে না। ভাই বোনকে দেখতে পাবে না।
প্রিয়তমা স্ত্রী কেমন কখনোই অনুভব করা হবে না।
আপন সন্তান কেমন হাতড়ে হাতড়ে অনুভব করতে হবে।
এ যন্ত্রনা কি অনুভব করতে পারেন ক্ষমতার চেয়ারে বসে???
ঠিক আছে বাদ দিন আবেগের কথা। বাস্তবতায়ই আসেন মূল্যায়ন করি। আইন এবং আদালতে ন্যায় বিচার করি।
একটি চোখের মূল্য কত?
অমুল্য আগেই বলা হয়েছে । কিন্তু যেহেতু ন্যায় বিচার করতে হবে তার প্রচলিত দুনিয়ায় হিসেবেই তার মূল্যায়ন দেখি।
মানুষের মতো দৃশ্যমানতা ধরে রাখে ক্যামেরা। ক্যামেরার মূল্য নির্ধারিত হয় তার লেন্সের পিক্সেল রেশিও দিয়ে।
মানুষের চোখের পিক্সেল কত? এ নিয়ে একটা চমৎকার ব্লগ থেকে তথ্য হুবহু তুলে দিচ্ছি :
চলুন ছোট্ট একটি উদাহরণের মাধ্যমে জেনে নিই আপনার চোখের মান।
মনে করুন,আপনার ক্যামেরা ৯০ডিগ্রি পর্যন্ত সকল দৃশ্য স্পষ্ট ধারন করতে পারে।
সে অনুযায়ী আপনার ক্যামেরার পিক্সেল=
৯০*৯০*৬০*৬০/(০.৩*০.৩)পিক্সেল
=৩২৪০০০০০০পিক্সেল
=৩২৪মেগাপিক্সেল।
এখানে ০.৩হচ্ছে arc minute (এক ডিগ্রির ৬০ভাগের এক ভাগকে আর্ক মিনিট বলে)।
৯০হচ্ছে peripheral vision যার অর্থ আপনার লেন্স কতটুকু জায়গা ফোকাস করতে পারে তার ক্ষমতা।
৬০কে বৃত্তীয় পদ্ধতিতে কোণের একক হিসেবে ধরা হয়েছে।
এবার আসুন আপনার চোখের মেগাপিক্সেল নির্ণয় করি।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ তার সামনে ঘটে যাওয়া ১২০ডিগ্রি পর্যন্ত যেকোন কিছু সম্পুর্ণ স্পষ্ট দেখতে পায়।
সুতরাং,একজন সুস্থ মানুষের চোখের পিক্সেল =
১২০*১২০*৬০*৬০/(০.৩*০.৩)পিক্সেল
=৫৭৬০০০০০০পিক্সেল
=৫৭৬মেগাপিক্সেল
অর্থ্যাৎ আপনার চোখ ৫৭৬মেগাপিক্সেল ক্যামেরার সমান। কল্পনা করতে পারেন???বাজারে যেকোন ক্যামেরার চাইতে কয়েকগুণ বেশি।
শুধু তাই নয়,মানুষের চোখ উপরনিচে প্রায় ১৩৫-১৪০ডিগ্রি এবং দুই পাশে প্রায় ২০০ডিগ্রি পর্যন্ত দেখতে পারে।
সুতরাং এবার যদি কোন "ব্যাটারি পাবলিক"(চোখে সমস্যা আছে)এমন কেউ তার ক্যামেরা নিয়ে বড়াই করে আপনি,আপনার চোখ নিয়ে বড়াই করুন।
এবার আসুন,আপনার চোখের সম্ভাব্য দাম জেনে নিই।
যেকোন কিছুর মান নির্ণয় করা হয়,উক্ত বস্তুর ফিচারের উপর ভিত্তি করে।মান যত ভালো তার দামও তত ভালো।
সুতরাং,দেখে নিন এক নজরে আপনার চোখের ফিচার:
resolution:576megapixel
bit depth:7.5 bits per second.
frames per second:1000
shutter speed:1/100-1/200
dymaic range:10-14stops
crop factor:X.05
focal length:17mm
angel of view:180degree
ISO:=1000 camera.
একমাত্র ক্যামেরা পাগলা ছাড়া আর বেশিরভাগ মানুষেরই তথ্যগুচ্ছ মাথার উপ্রে দিয়া গেছে।(এমনকি আমারোও)। উক্ত ফিচারের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ক্যামেরা কোম্পানি এবং কিছু বিজ্ঞানী মানুষের চোখের যে দাম নির্ধারণ করেছে তা শুনার পর নিশ্চিত আপনি আপনার এক চোখকত অমূল্য।কত দামী নেয়ামত আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।
কারণ বিজ্ঞানীরা আপনার চোখের দাম নির্ণয় করেছে : (35,268,799)$ dollar
বাংলাদেশি টাকায় যার মুল্য প্রায় (২৮২,১৫,০৩৯২০)টাকা মাত্র। (এক ডলার=৮০টাকা ধরে)
এইবার মাননীয় আদালত, ন্যায় বিচার করুন। সিদ্দিকুর রহমান টেলিফোন অপারেটরের যে চাকুরী পেয়েছেন তাতে তার বেতন কত?
সারা জীবনে তিনি কত টাকা আয় করতে পারবেন। বাকী কষ্টমূল্য বাদ দিলেও কেবল আর্থিক মূল্যেই তা কত?
হিসাবের জন্য ধরে নিই শুরুতে বেতন ৩০,০০০ টাকা। যদি উনি পূর্ণ চাকুরী জীবন (২৫ বছর ধরে) পার করেন তিনি পাবেন, বৎসরান্তে ইনক্রিমেন্ট, বোনাস সব সহ্ও সাকুল্যে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা মাত্র! ! !
অথচ আমরা সাধারন বাজার মূল্যে দেখলাম একটা চোখের সাধারন মূল্যমান্ও কত অমূল্য! কত বিশাল। সেই ক্ষেত্রে দুই চোখের মূল্য তার ডাবল অর্থাৎ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার উপরে।
আমরা কি জনাব সিদ্দীকুরের চাকুরী প্রাপ্তিতে আনন্দ করব? কৃতজ্ঞতায় গদগদ হবো? নাকি সত্যকে অনুধাবনের চেষ্টা করব!!!
ন্যায় বিচার পাবার জন্য আইন, আদালত, বিবেকের কাঠগড়ায় নিজেদেরে দাড় করাব!!
ভাবনা পাঠকের হাতে।
কৃতজ্ঞতা:
কালের কন্ঠ, যুগান্তর
সাইন্সলেস সাইন্টিষ্ট: ব্লগার,
বেতন স্কেলের হিসাব
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৫