এই দেশে সবচেয়ে ভালো লেখাপড়ার সুযোগ পাবে কে? যার টাকা আছে। সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা সেবা পাবে কে ? যার টাকা আছে। সবচেয়ে দামী পোশাক , বাড়ী , গাড়ী, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাবে কে ? যার টাকা আছে। শেষেরটি মেনে নেয়া যায়। কারন দামী বাড়ী , গাড়ী, পোশাক মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য নয় । তবে জ্ঞানার্জনের জন্য বা সুস্থ্য থাকার জন্য কেবল টাকাই থাকতে হবে ? সেলুকাস !
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যখন বিশ্বকে বাংলাদেশের সাধারন জনগনের হাতের মুঠোয় এনে দিতে বদ্ধ পরিকর, যখন সরকার নিজেই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যুব সমাজের চোখে এনে পড়িয়েছে ঠিক সেই সময় ”অন লাইন গণ মাধ্যম ” যার মাঝ দিয়ে দেশের আপামর জনগন যখন ইচ্ছা তখনই (বিশেষত যুব সমাজ ) দেশের যে কোন স্থান থেকে দেশ বিদেশের সংবাদ জানতে ও পড়তে পারছে সেই সময় এই ধরনের একটি নীতিমালা ( যদিও খসড়া) সরকারের জন্য কতটুকু মঙ্গলবার্তা বয়ে আনবে ?
যে বা যারা এই নীতিমালা প্রণয়নের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন তাঁরা সকলেই মেধাবী ও দেশের সম্পদ বলেই আমরা জানি। আর এই সব মেধাবী মানুষ গুলো কীভাবে একটি অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কেবল টাকাকেই অতি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসাবে বিচার করলেন? তাহলে তো দেখা যাবে এখানে মেধাবী ছেলেমেয়েরা যারা সরাসরি অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশ ও প্রচারের সাথে জড়িত , যারা সামান্য টাকায় বা বিনা পারিশ্রমিকে দিন রাত অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছে , যাদের কোন বাড়তি টাকা নাই তারা তো অচিরেই ঝরে যাবে এই মাঠ থেকে । আর সেই ফাঁকা মাঠ কেবল টাকার জোড়ে দখল করে নিবে ”কোন কোন কালো হাত” যাদের টাকার অনেকটাই আসে বিদেশী কোন দূত এর মাধ্যমে যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশকে একটি অস্থির সমাজ ব্যবস্থার যাতাকলে ফেলতে ব্যতিব্যস্ত। কী অদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা !
কেবল টাকাই অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশ ও প্রচারের মাপকাঠি ? আজ এই টাকার জোরেই কেবল বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেল যেমন চালু হয়েছিল তেমনি আবার বন্দ করতেও বাধ্য হয়েছে সরকার। অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশ এর ক্ষেত্রে মাপকাঠি অনেক কিছুই হতে পারে। কী কী হতে পারে সেটি সরকার ভাববে। আমরা সাধারন জনগন চাই হাতের মুঠোয় বিশ্ব। যার প্রতিদিন ১০ টাকা দিয়ে সংবাদপত্র কেনার ক্ষমতা নাই বা পাতা উল্টে পাল্টে খবর পড়ার সময় নাই বা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে সকালের খবরের কাগজ যায় বিকালে তারউপরে যদি আবার হরতাল , অবরোধ বা জানজটে পড়ে তো সংবাদপত্র সেখানে পৌঁছায়ই না বা বিদেশে বসবাসরত বাঙ্গালীরা যারা কেবল অনলাইনের উপরই নির্ভর করে বসে থাকেন বা যদি তুলনা করি তাহলে বলতেই হয় প্রিন্ট হয়ে সংবাদ প্রকাশের আগেই এই অনলাইন গণমাধ্যম এর দৌলতে আমরা প্রতি মূহুর্তের সংবাদ ইচ্ছা করলেই তাৎক্ষনিক জানতে পারি – এত গুলি দিক বিবেচনা করার পরও কি সরকার অনলাইন গণমাধ্যম এর উপর এই গুরুভার চাপিয়ে দিবেন?
এটি কোন জ্ঞানী , গুনী বা গণ বান্ধব সরকারের করা উচিৎ না। বরং অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক পরিচয়, আয়কর প্রত্যায়ন পত্র, যে বা যারা অনলাইন গণমাধ্যম টির সাথে জড়িত তাদের পরিচয় , তথ্য সহ সব কিছু জেনে নিয়ে অনলাইন গণমাধ্যমটির নিবন্ধন করা যেতে পারে যার ফিস হবে ন্যূনতম। ভাবতেই হবে সরকারকে একটি বিশাল অংশ আজ এই অনলাইন গণমাধ্যম এর দৌলতে চাকরী না পেয়েও ঘেরাও করছে না সচিবালয় বা কোন দপ্তর। কারন তারা অনেকেই এই মাধ্যমে কাজ করছেন। একটি শ্রেনী আজ অনেক কর্ম থেকেই বিরত আছেন বা ব্যস্ত আছেন এই মাধ্যমে নিজের মেধার প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন বলে। সেক্ষেত্রে কেন সরকারকে” একটি বিশেষ মহল” অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশের ক্ষেত্রে কেবল ”টাকার অংকটাই বোঝানোর ”চেষ্টা করছেন ? কেন বার বার সরকারকে বিপাকে ফেলার এই অপচেষ্টা ? মাননীয় তথ্য মন্ত্রী তো ভীষণ মেধাবী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী । তিনি তো অন্তত আমার চাইতে অনেক ভালো জানেন যে , কেবল টাকার মাপকাঠিতেই অনলাইন গণমাধ্যম এর প্রকাশ এর সুযোগ দেয়া উচিৎ কি না ? আশাকরি সরকার এই সব জ্ঞানী গুণি জনদের প্রদত্ত এই ”টাকা তত্বকে” সম্মানের সাথেই বিদায় দিয়ে ”অনলাইন গণমাধ্যম ” প্রকাশের ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, সৃজনশীলতা, ব্যক্তির পরিচয় (নিজের, পরিবারের ও সংশ্লিষ্টদের) কে প্রাধান্য দিবেন। রাষ্ট্র ও দেশ বিরোধী যে কোন লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকার নিজেই একটি নিয়ন্ত্রন সেল চালু রাখতে পারেন। গড়ে তুলতে পারেন একটি অন লাইন মনিটরিং সেল । কত কিছুই তো করা যায় যদি সদিচ্ছা থাকে । কেবল টাকার মাপকাঠি কেন ? তাহলে তো আবার সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ চলে যাবে কিছু সংখ্যক আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের মানুষের হাতে। যারা ”পেছন দরোজা দিয়েই প্রবেশ করে আর সামনের দরোজা বন্ধ করে দেয়”।
আশাকরি সরকার বিষয়টি নিয়ে অতি গুরুত্বের সাথেই ভাববেন।
দিলরুবা সরমিন
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
প্রধান সম্পাদক, প্রথমবার্তা ডট কম , বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:৪৯