সামাজিক ইস্যু নিয়ে লেখা অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে আমার,তাই পরীক্ষার মাঝেও আজকের এই লেখা।
মনে আছে নিশ্চয়,রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রদানের জন্য বাংলাদেশে একটি মঞ্চ তৈরি হয়েছিলো।নিশ্চয় সেটা দেশ প্রেমের একটি উদাহরণ ছিলো কিন্তু বর্তমানে তাদের মধ্যেই বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ হয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে তাদের মাঝে আসলে কারা প্রকৃত দেশ প্রেমিক ছিলেন!!!অনেকেই যে সেখানে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য গিয়েছিলেন সেটা এখন অনেকটাই পরিষ্কার।
আমার আজকের লেখা সে বিষয়ে না।
আজকের বিষয়ঃ বাংলাদেশে ২৩ বছর আগে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ৭৬ জন মারা যাবার একটি ঘটনায় ছয় জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
খেয়াল করেছেন নিশ্চয়,ঘটনা ২৩ বছর আগের,মারা গিয়েছে ৭৬ জন শিশু আর কারাদন্ড হয়েছে ১০ বছরের!
এতোগুলা শিশুর মৃত্যু এবং আরো অনেকের কিডনীর সমস্যা যে প্যারাসিটামল ঔষুধ খেয়ে হয়েছিলো সেই ঔষুধ কোম্পানির মালিক এই ২৩ বছর জামিনে ছিলেন বাকি আসামীগণ এখনো পলাতক!এখনও মামলা শেষ হয়নি।আসামীর আইনজীবি বলেছেন তারা আপিল করবেন!তাহলে কি আরো ১৩ বছর!!!
মামলার দেরি হওয়া নিয়ে সরকারপক্ষের আইনজীবি বলছেন সাক্ষীদের না পাওয়া কিংবা তাদের অনাগ্রহ!
ভাই ২৩ বছর পরে অনেক সাক্ষী তো আগ্রহ না দেখানোরই কথা অথবা অনেকে হয়ত মারা গিয়েছেন।আবার এর মাঝে এই মামলা স্থগিত করাও ছিলো।
অথচ এই দেশে অনেক রাজনৈতিক মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ১০ দিন পরপর মামলার তারিখ নির্ধারিত হতে দেখেছি,দেখেছি বিনা বিচারে অনেক নিরাপরাধ মানুষের জেলের ভাত খাওয়া,দেখেছি শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে ধরে নিয়ে গিয়ে 'কথিত' ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করাসহ আরো অনেক সুশাসন!
আবার দেখেছি,রাজন-রাকিবের মত শিশুদের হত্যা করার মামলা টাকা দিয়ে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা,দেখেছি নারীদের লাঞ্চিত করার ঘটনাকে 'পোলাপানের দুষ্টুমী' বলে ধামাচাপা দেওয়ার আন্তরিকতা!
কিন্তু দেখিনি,বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের মামলার পরিসমাপ্তি,দেখিনি প্রেট্রোল বোমায় শতশত মানুষ মারার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার,দেখিনি ইয়াবার সম্রাটের 'চুল' ছিঁড়তে পারার ক্ষমতা কিংবা হাজার হাজার কোটি টাকা নিজের বলে ব্যবহারের বিচার!
দেখিনি নবী-রাসুলের নামে কুটুক্তি করার বিচার,দেখেছি সাধারণ ব্যক্তির নামে কুটুক্তির বিচার!দেখিনি শিক্ষা প্রতিষ্টানে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে হত্যার বিচার,দেখেছি কথিত অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় হত্যা করার ঘটনা!
আমরা আসলে ইস্যু ভিত্তিক দেশপ্রেমিক!কখনও নিজের স্বার্থে,কখনও বা দলের স্বার্থে আমরা রাজপথে নেমে পড়ি।আওয়াজ তুলি সর্বোচ্চ বিচারের।কিন্তু যেখানে সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকারের প্রশ্ন সেখানেই আমরা বিভক্ত,সুশিল!কখনও আমরা তর্কে জড়ায় কোন মৃত্যু বেশি কষ্টদায়ক 'প্রেট্রোল বোমায় মরা নাকি ক্রস ফায়ারে মরা' কিংবা 'ধর্ষণের জন্য ছেলেরা দায়ী নাকি মেয়েরা'!
এই যখন আমাদের চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ তখন ৭৬ জন কেন ৭৬০০ শিশুকে বিষ খাওয়ায়ে মেরে ফেললেও হত্যাকারীদের জামিন পাওয়াটা অসম্ভবের কিছু না,এটা মাত্র 'বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা' ভেবেই আমরা ঘুমাতে যাবো!
আমাদের দেশ তখনই সত্যিকারের উন্নয়ন এবং সুশাসনের দেশ হবে যখন এক রাজন হত্যার জন্য আমরা গণজাগরণ মঞ্চ করতে পারবো,তখনই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হবো যখন তরুণ সমাজ ধংসের হাতিয়ার ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করার জন্য রাজপথে নামতে পারবো।তখনই গরীবের কষ্ট বুঝতে পারবো যখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছ থেকে ভ্যাট নেওয়ার নাম করে শিক্ষাকে পণ্য করে তোলার বিপক্ষে একত্রিত হতে পারবো।
তাছাড়া এভাবেই আমাদের 'কথিত' মধ্যম আয়ের দেশে উচ্চ মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে বাড়ি গিয়ে রাজনীতির দোষারোপ করে রাতে ঘুমাতে যেতে হবে!
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:১৯