somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শবনমের অবেলায় চিরবিদায় এবং একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-“ রহিম মিয়া .........”
=জি স্যার – --
-“ আমি আগামীকাল নোয়াখালীর ছন্দুগঞ্জে আমাদের নতুন সাইট অফিসে যাব মিটিং এ। সাথে আরো কিছু কাজ আছে, আমার ফিরে আসতে এক সপ্তাহ লাগবে। স্যালারির চেকগুলো মাহবুব স্যারের রুম থেকে নিয়ে আসেন। আর সাথে দরকারী ফাইল থাকলেও আনেন। “

(কিছুক্ষণ পরে )
=স্যার, আনছি !!--
“ দেন......... কয় তারিখ আজকে ??”
২৯ তারিখ স্যার।--

হঠাৎ করে যেন বাজ পড়ল। মনে পড়ে গেল দশ বছর আগের কথা। শবনমকে হারিয়েছি দশ বছর হয়েছে। ভাবতে ভাবতেই যেন অজানা ভূবনে হারিয়ে গেলাম। সেদিন ছিল ৩০ জুলাই । তখন সবেমাত্র আমাদের ব্যবসা উঠতে শুরু করেছে। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিকমত সময় দিতে পারিনি শবনমকে। তখন আমাদের মাঝে দাম্পত্য কলহ চলছিল। বিষয়টি তেমন গুরুতর ছিল না, তবে অনেকগুলো ছোট ছোট জিনিস নিয়ে ঝগড়া হত। কিন্তু শবনম ছিল অসম্ভব আবেগপ্রবণ, একটুতেই সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলতো। এটা কি ভালোবাসার কষ্টে নাকি আবেগের বশবর্তী হয়ে সেটা বুঝাটা আমার জন্য অনেক কষ্টকর ছিল। তাকে অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলাম, এমনকি ডাক্তারের কাছে নিয়েও, কিন্তু কোন ফল পাইনি। সেই ২৯ জুলাই রাতেও আমাদের ঝগড়া হয়েছিল, সে সিডাক্সিনের প্যাকেট খুলতেই আমি তার হাত থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করলাম। হাল্কা ধস্তাধস্তি হল। অতঃপর আমি সফল হলাম। অনেক রাত পর্যন্ত আমি তাকে বুঝালাম। সেও বুঝলো এবং ওয়াদা করল আর কখনো এরকম করবে না। আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। ভোরে উঠে আম্মাকে বললাম যাতে নুশানা কে স্কুলের জন্য রেডি করে দেয়। শবনম তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ডাকলে ডিস্টার্ব হবে ভেবে আর ডাকিনি। নুশানা কে মানারাতে দিয়ে আমি চলে আসি অফিসে। দুপুর ১২ টায় আম্মার ফোন। আম্মার কাঁপা কন্ঠ শুনে আমি দৌড়ে গেলাম বাসায়। গিয়ে দেখলাম বাসা ভর্তি মানুষ। দৌড়ে উপরে ছুটে গেলাম আমদের রুম এ। দেখলাম, আমার ভালোবাসার মানুষটির নিথর দেহ পড়ে আছে বিছানায়। আর হাতের মুঠি থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটে শুধু একটা লাইন লেখা “ ভালোবেসে যদি মরে যাই, ফুল হয়ে যেন ঝরে যাই।“

পোস্টমর্টেমে জানতে পারি সে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। আজ অব্দি আমি জানতে পারিনি আমার মনের মানুষটি কি কারণে এ কাজটি করল। কিন্তু আমি এটুকু নিশ্চিৎ যে আমাদের মাঝে এমন কিছু হয়নি কিংবা তার জীবনে এমন অন্য কিছু ঘটেনি যার জন্য সে এমনটি করেছে ।
--
( হঠাৎ রহিম মিয়া আগমন)
=স্যার, আপু ফোন দিছে। আপনারে নাকি মোবাইলে পাইতাছে না
- ( ওপাশ থেকে নুশানার গলা ) বাবা, তুমি ফোন ধরছো না কেন ?? শুনলাম তুমি নাকি ঢাকার বাইরে যাচ্ছো !! যাবার আগে আমাকে নিয়ে বাইর খেতে যাবে প্লিজ !!।
--আচ্ছা মা, আমি আসছি।

শবনমের চলে যাবার ৫ বছর পর মা মারা যান। এখন নুশানা কে ঘিরেই আমার জীবন। আজ আমি প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী, তারপরও আমার জীবনে অনেক কিছুই নেই।

শবনমের কথা মনে হলেই মনে পড়ে যায় আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার দিনটির কথা। হেমন্তের বিকেলে ফাস্টফুডে বসে তার সেই চাহনি, মনে পড়ে যায় তার সেই নজরকাড়া হাসি, মন ভোলানো অভিমান। আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিলো নিজেদের নিয়ে, সেই স্বপ্নটুকু ছারখার হয়ে যায় তার এ অবেলায় চলে যাওয়ায়। তারপরও বেচে থাকতে হয় জীবনের রূঢ় বাস্তবতায়।

এখন যখনই তার কথা মনে হয়, আমি খুজে ফিরি তাকে তারই রেখে যাওয়া স্মৃতির মাঝে। কেন জানি নিজেকেই দায়ী মনে হয় শবনমের মৃত্যুর জন্য, কেন জানি বিবেকই আমাকে প্রতিনিয়ত দংশন করে আমার কৃ্তকর্মের জন্য।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×