কাল রাত্রি কেটেছে নির্ঘুম,
বৈশাখের বিহবল বাতাসে
কৃষ্ণসাগরের ওপার থেকে আসা
ফেরারী মেঘেরা দিয়েছে সঙ্গ।
মহাপৃথিবীর কোন এক কোনে
আটলান্টিসের জমাট স্তব্ধতা নিয়ে,
আমার রাত্রির শহর ছিল তলিয়ে
অতলান্তিকের অনেক অনেক অতলে,
চাইনি হোক কারো স্বপ্নভঙ্গ
সবাই যখন ডুব দিয়েছে স্বপ্ননগরে,
স্বপ্নলোকের সময়টা চুরি করে সন্তর্পনে
হ্রদসর্প আমি জলসিড়ির ধাপ ভেঙ্গে
অতলান্তিকের নীলের ’পরে, ভেসে উঠেছি নিংসঙ্গ।
শান্তসাগরের
স্তব্ধ নির্জন হলদে সৈকতে বসে
চন্দ্রাহত চোখ
দেখেছে চিত্রলেখা অনিরুদ্ধ উষার ম্লান আলোয়
লুব্ধকের বুকে ব্যাবিলনের বর্নিল হাতছানি-
হংসমন্ডলে ডানা মেলেছিল মনবিহঙ্গ।
কাল রাত্রি কেটেছে নির্ঘুম,
অঙ্গিরা বশিষ্ঠ মরীচির আলোয় ছুটেছিলাম
স্বাতীর ঘুড়ি উড়িয়ে কন্যামন্ডলে-
রুপসী চিত্রার খোঁজে;
ছায়াপথের পথে পথে লেগেছিল
মহাকালের অন্ধকারে ছুটে-চলা
কত অশ্রান্ত নক্ষত্রের ধুম,
কাল রাত্রি তাই কেটেছে সমস্ত নির্ঘুম।
অবচেতনের অন্ধগলিতে ঘোরে-ফেরে যেসব মায়া,
ছায়াপথের মহামানচিত্রে দেখেছি বসে তাদের ছায়া;
ছায়া নাকি কায়া,
নাকি শুধুই মায়া?
গ্রীসের কল্পলোক থেকে এসে জড়ো-হওয়া
নক্ষত্রের নীলে ভাসে পৃথিবীর ’পরে যত ছায়া ছন্নছাড়া,
ছায়ার পেছনে মেঘেদের মতই ঘুরে-ফিরে
ক্লান্ত আমি দিশেহারা,
হায় রোহিণী! সুরাইয়া রইলে অধরা।
সিংহের চাপা আর্তনাদ তুলেছিল
রাত্রির বুকে নিমিয়ার অরণ্যদ্রুম,
কাল রাত্রি পেরিয়েছি পুরোটাই নির্ঘুম।
কখনো মেতেছি মিথুনের মত্ততায় ঢের;
ক্রতু পুলহ পেরিয়ে ছুঁয়েছি
সুমেরুর স্তব্ধতায় চুপটি-মেরে-বসে-থাকা
ধ্রুবতারার সহস্রবর্ষের বিষন্নতা ফের।
শ্রবণার আলোয় শ্যেণমন্ডল হতে উড়ে গিয়ে
কখনো যোগ দিয়েছি সাত ভাই চম্পার সভায়,
অরুন্ধতির অন্ধ আলোর অসহায়তা ছিঁড়ে ফের
পাখা মেলেছি প্রজাপতি হয়ে ব্রক্ষহৃদয়ের প্রভায়।
ছুটেছিলাম পক্ষীরাজের ’পরে ভর করে
শৃঙ্খলিত রাজকন্যার মুক্তির তরে।
গিয়েছিলাম বীণামন্ডলে; অভিজিৎ নক্ষত্রের
শুনেছি সহস্র-আলোকবর্ষ-পরের-ধ্রুবতার গান,
শ্রবণা আর বক মিলে তারই সাথে বেঁধেছিল
শরতের আকাশে কোন সে বিরহী তান!
কাল রাত্রি ছিল পুরোটাই আমার,
ছায়াপথে ছিল না নক্ষত্রের এতটুকু অপূর্ণতা;
তবুও স্তব্ধ অসহায় হাহাকার হৃদয়-অলিন্দে,
জানিনে কেন এতটা শূণ্য তা!
মনের ছায়াপথে ঘোরে-ফিরে শব্দেরা, ছন্দেরা-
উদভ্রান্ত, ভীত, দ্যুতিহীন আর বড্ড লাজুক ওরা।
‘ওহে, রাতের নক্ষত্র! ভাবনাগুলো এবার দাও না বেঁধে
এ রাতে তোমার অনন্ত চলার সুরে।
হায়! শব্দেরা কোথায়? কবিতার ছন্দেরা কোথায়?
বসন্তের আকাশে উত্তর ফাল্গুনীর আলোয়
যাকে খুঁজেছি সেই রহস্যময়ী আজ কোথায়?
লুকোচুরি খেলো না আর আমায় নিয়ে,
চলে যেও না এভাবে নক্ষত্রের মতই সুদূরে...।’
ঝলসে ওঠে আলো; দেখি এতকাল আমাতে ছিল লুকিয়ে
কত এরিডানাসের নিবিড় ঘন অন্ধকার-
নীহারিকার পূনর্জন্মে সহসা সবই হয়েছে গুম!
কাল রাত্রি তাইতো পেরিয়েছি সমস্ত নির্ঘুম,
ইতিহাসের আলোয় নগ্ন করো না-
সে একান্তই ছিল আমার রাত্রি,
পৃথিবীর কোন এক জনশূন্য নির্জন বাড়ির ছাদে
কৃষ্ণবিবরের রুদ্ধ আলো-আঁধারিতে স্তব্ধ নিঝুম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৭