এখন অন্ধকার নেমেছে শহরের বুকে।
নক্ষত্রেরা মরে গেলে, গেলে ধুকে ধুকে,
সহসা সচকিত নাবিকের বিহবল দৃষ্টিতে,
অতল পাতাল হতে উত্তাল উচ্চে- সন্তপ্ত সৃষ্টিতে
সর্বত্র অতীত পাপের গ্লানি; শামানের অমোঘ বাণী
ভুলে করেছিল ভুল- শিল্পনগরীর চোখে এখন কালের ছানি!
অরণ্য দেখিনি আমি যদিও হেঁটেছি বহু মৃত্তিকার
ঘ্রাণের খোঁজে বিনিদ্র কত রাত, কৃত্তিকার
সভায় হায়! রোহিণী খুঁজে যায় নির্বাণ
যেমন তার। বিশ্ব বেঁধেছে তান
ভ্রমের, তবুও ঘুরেছি পিছে
নীরন্ধ্র আঁধারে মিছে।
নেই চেনা পদশব্দ, নিয়নের ভুল আলো;
সমস্ত কোলাহল শেষ হয়ে এলে পরে এই ভালো-
কেবল গুমোট চাপা অচেনা এক অন্ধকার,
প্রাচীন বেদনা নিয়ে এসেছে সে কবেকার!
নির্জন গলির মাঝে সহসা অরব সাঁঝে
বেওয়ারিশ কুকুরের ক্ষণিক আর্তনাদ- মিলিয়ে বাজে
কানে : ভবঘুরে বাতাসের সশব্দ প্রতিঘাত...ব্যর্থ বারে বারে
দ্বার থেকে দ্বারে, রুদ্ধ বাতায়নে অনাহূত ঘুরে-ফিরে, রবাহূত খোঁজে কারে?
পুরনো ছাদের কোণে বয়ে যায় যুবতীর খোলা চুলে, কোমল নিষাদ তুলে
অবশেষে, উড়ে যায় সমস্ত আবরণ বুভুক্ষ বাতাসে। আবার পথ ভুলে
ঘুরে-ফিরে খুঁজে তবু খোলা কোন জানালা, অবাধ্য কিশোরী আছে
হয়তো বসে পাশে; ঝরাপাতাদের দ্বিতীয় জন্মের খুব কাছে।
বিমনা মূহুর্ত গলে বিমূর্ত কিছু ছবি সহসা ডানা মেলে;
ক্যানভাস, রং, তুলি নি:শব্দে পড়ে গেলে,
পৃথিবীর সব আলো একে একে নিবে এলে
এখন মেঘেরা এসেছে আঁধারপ্রাচীর মেলে।
অভিমানী মেঘ সব ব্যবিলনের ইরামের, অথবা কে জানে গভীর
কোন সমুদ্রনীরতলে নিলীন তারো বেশি প্রাচীন নগরীর।
গুমরে উঠে সেইসব মেঘেরা অশ্রান্ত; সান্ত থেকে অনন্ত
রাত্রির বিমনা আকাশে, পৃথিবীর প্রান্ত থেকে প্রান্ত
ছেয়েছে বিষণ্ণতা শঙ্কিত শহরের জমাট পাথারে,
মহাকালের এপার হতে ওপারের সান্দ্র আঁধারে।
আপন আঁধারে জানি তুমি-আমি সভে একা, হবে না ফাঁস
তবু "আপন আমাদের" যত ভুলে থাকার ইতিহাস।
বেনোজলে আজ এ রাতে যদি যায় ভেসে শেষে
কিউনিফর্মে-লেখা শহুরে রাত্রিলিপি, অবাধ আশ্লেষে
এই সব চোখাচোখি, মুহূর্তের মৃদু হাসি, ক্ষণিকের অভিমান;
ঘুচে গেলে দিনশেষে, মুছে গেলে অবশেষে ফেরানোর অপমান
তোমা হতে বহুদূরে রিক্ত আমার, যদি দ্রমশাখা 'পরে শেষ
উঠেছিল বাবুইয়ের সুর কবে- বৃক্ষের নাও থাকে স্মৃতি অবশেষ-
তবু আমাদের ইতিহাস, জেনো যাবে অনাগত নগরীতে
কালের রেখা ধরে নীরদঅণূর মাঝে। ওদের প্রতীতিতে
আমাদের তুচ্ছ কায়া ভিজে ভিজে লীন, তবু এমনি কোন সাঁঝে
আবার আসবে ঝড়, প্রমত্ত বাতাসেরা; শুনবে বাজে
ফের চিরপ্রাচীন বেদনা সে কবেকার,
নামবে অভ্রতলে অচেনা এক অন্ধকার।
অচেনা এ অন্ধকার, তবুও যে কত চেনা!
যুগ হতে যুগান্তরে চুকিয়ে সকল দেনা,
আলোকযজ্ঞ 'পরে নীরদ আহুতিশেষে
আগামীর আলো আনে মানবেরে ভালোবেসে।
কালের অলিন্দে বন্দী চিত্তের অনিত্য বাণী,
অভ্রপত্রে যাবে অনাগতের চেতনে জানি ।
***********************************
১৫ চৈত্র, ১৪১৫
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৫:৫৬