somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লস্ট সিম্বল...

১০ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ড্যান ব্রাউনের বইগুলো খুবই উঁচুস্তরের পাঠকদের জন্য। লস্ট সিম্বল খুলে আরো ভয় পেয়ে গেলুম, কারণ ওটি খুলতে না খুলতেই ব্রাউন সাহেব (যথারীতি) চিৎকার করে উঠলেন, "সাবধান! ইহাই সেই কেতাব যাতে কোন প্রকার সন্দেহ নাই।" নো ডাউট। বুঝলাম, The Da Vinci Code -এর মতনই এই বইটিরও প্রতিটি বর্ণ ও বর্ণনা পাতায় পাতায় সত্য- শুধুমাত্র যোগ্য ব্যক্তিরাই এর মর্ম মর্মস্থলে অনুভব করার ক্ষমতা রাখে...।

সাহস করে শুরু করলাম।

ভূমিকায় -এর প্রথম বাক্য,

"The Secret is how to die."


একটু হতাশ হলাম। প্রথমেই এত ড্যাশিং একটি সিক্রেট ফাঁস করে দেওয়া হল। তাও আবার ইটালিকে...। তবে বেশিক্ষণ এই হতাশা থাকলো না। কারণ এরপর দুটি বাক্য না পেরুতেই আবার ইটালিকে আরেকটি উত্তেজক এবং রহস্যময় বাক্য...


"Drink it, he told himself. You have nothing to fear."


এই শুরু হল! পাঠক হিসেবে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে পড়লাম...কি হচ্ছে, কে হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে, কিভাবে হচ্ছে...কিন্তু না সবে-তো শুরু। শুরু হল ভিলেনের মাইন্ড-এর মাধ্যমে বাঁকা অক্ষরে ব্রাউন সাহেবের শৈল্পিক সাহিত্য...The Secret is -এই, I am going to do সেই...Soon it's going to... Blah Blah Blah... এর মধ্যেই ঢুকায়ে দেয়া হল আরো ড্যাশিং একটি টার্ম "The Truth". বাজারে বেশ ভালো চলে এই টার্মটা। কি সেই সত্য? The truth of the universe...nobody knows...a great secret...Blah Blah Blah. যাকগে, পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে নি:সন্দেহ ছিলাম যে, ব্রাউন সাহেবের ক্ষেত্রে একটু পরই শব্দটি আরো বর্ধিত হয়ে, The Ancient Truth -এ পরিণত হবে।


তারপর শুরু হল মূল-ইতিহাস। Angels & Damons এবং Vinci Code -এর মতনই এইখানে প্রফেসর ল্যাংডন দৌড় মেরে এসেছেন ক্যাপিটলে পাজল সমাধান করতে। কোন উপায় নাই। কারণ তার প্রিয় বন্ধু জানের জান পিটার সলোমনকে ধরে নিয়ে গিয়েছে রহস্যময় হৃদয়হীন খলনায়ক বদমাশ মাল'আখ্ (নামটা শুনলেই কেমন জানি জোশ চলে আসে মনে...)। মাল'আখের কঠোর হুমকী, যদি জানে বাঁচাতে চাও দোস্তকে তবে তোমাকে এই ধাঁধা সমাধান করতেই হবে।


কোন সন্দেহ নাই, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হবেন ক্যাপিটলের পুলিশ চীফ রহস্যময় অ্যান্ডারসন, এবং সিআইএর অফিস অব সেকুরিটি হেড সাতো। ল্যাংডনকে এসেই কঠোর স্বর আদেশ দিলেন সাতো, এই ধাঁধাঁ তোমারে সলভ করতেই হবে। মাল'আখ থেকেও রহস্যময় এই মহিলা সাতো, কোন সন্দেহ নেই মালআখের স্যাঙ্গাত সে। কিন্তু তাই বা কি করে হয়? নাকি সেই নাটের গুরু? নাকি অ্যান্ডারসন? ওহ্ গুরু! রহস্য রহস্য আর রহস্য...। ধাঁধাঁ সলভ করতে শুরু করলেন প্রফেসর ল্যাংডন, ফ্রিম্যাসনারির উপর ফ্রি-লেসন...প্রচুর জ্ঞান লাভ করতে থাকুন পাঠক।


কিন্তু নায়িকা কোথায়! নায়িকা ক্যাথারিন সলোমন, পিটারের বোন, ওইদিকে ব্যস্ত তার গবেষণাগারে। মহাগুপ্ত এক গবেষণাগারে তিনি প্রাচীন প্রজ্ঞা আবিষ্কার করছেন...শুধুমাত্র চিন্তা করেই তিনি পদার্থকে রূপান্তরিত করে ফেলতে পারেন। এ এক প্রাচীন প্রজ্ঞা, Ancient Wisdom...সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক সত্য... কারণ এর নাম হল "Noetic Science" -দেখুন নামের মধ্যেই বিজ্ঞান শব্দটি আছে। ক্যাথরিনের এই আবিষ্কার পুরো পৃথিবীকে চেইঞ্জ করে দিবে, পদার্থবিদ্যার ইতিহাস নতুন করে লিখা হবে। কিন্তু বদমাশ মাল'আখের কারণে তা আর হল না। বিকট এক বিস্ফোরণে উড়ে গেল ক্যাথরিনের ল্যাবরেটরি...পৃথিবী বঞ্চিত হল।


ওদিকে সাতো ফ্রি-ম্যাসনারির উপর বিদ্যা নেওয়ার এক পর্যায়ে প্রচন্ড অধৈর্য হয়ে ল্যাংডন সাহেবকে গ্রেপ্তার করতে উদ্যত হলে, হাওয়া থেকে উড়ে আসে ক্যাপিটলের আর্কিটেক্ট ওয়ারেন বেলামি। ল্যাংডনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় সে, বন্ধুবৎসল এবং সম্পূর্ণ মহৎ-হৃদয়ের অধিকারী বেলামি...কেমন জানি সন্দেহ জাগে তারপরও...রহস্য রহস্য রহস্য। এরই মধ্যে গাদা গাদা ইটালিকে মালআখ, ক্যাথরিনসহ আরো প্রচুর ইন্ট্রেস্টিং ক্যারেক্টার পাতার পর পাতায় আসতে-যেতে থাকে।


ক্যাথারিনকে ধাওয়া করছে মাল'আখ, ব্রাউন আর বেলামিকে ধাওয়া করছে সাতো আর অ্যান্ডারসন...প্রচন্ড উত্তেজনা। মুভিতে ব্যাপারটা ভালো জমবে। ড্যান ব্রাউন ব্যাপারটা মাথায় রেখেছেন লেখার সময়...বইটি পড়ার সময় পাঠকের মনে হবে টেক্সটগুলো জীবন্ত হয়ে পর্দায় শৈল্পিক চিত্র সৃষ্টি করছে। কিসের এমআই সিক্স বা বর্ন ট্রিলজি।

খুন, রক্ত, বিস্ফোরণ পেরিয়ে ক্যাথেরিন আর ল্যাংডন মিলিত হল, লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে...বলতে গেলে, লাইব্রেরিতে ঢুকতেই তার জন্য অপেক্ষা করছিলো প্রফেসর ল্যাংডন। পারফেক্ট টাইমিং। তাদের রোমান্টিক মিলন ঘটানোর জন্য এর আরো আগেই বেলামি সাহেব ল্যাংডনকে সামনে এগুতে বলে পেছনে রয়ে গেল আত্নসমর্পণ করে সাতোর স্যাঙ্গাতদের বিভ্রান্ত করার জন্য।


কোনদিক ছেড়ে কোনদিকের কথা বলবো?


পাঠকের ভাগ্য ভালো, মালআখ কিছুক্ষণ পর পরই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে...ধীরে ধীরে পাঠক জানতে পারলো, মালআখের অতীত ইতিহাস, সলোমন পরিবারের অতীত ইতিহাস...ফ্রি-ম্যাসনারির ইতিহাসের থেকে কোনদিক দিয়েই কম নয়। আজ থেকে দশ বছর আগের কথা....এই সেই মালআখ যে কিনা খুন করেছিলো ক্যাথেরিনের মাকে...যাকে পরে খুন করেছিলো পিটার...কিন্তু না, মালআখ বেঁচে যায়। তারপরও প্রশ্ন আর রহস্য আর উত্তেজনা...কে সে? কি চায় সে?


The Secret Wisdom...The Greatest mystery of Humankind...The lost Ancient Knowledge...


বইয়ের মধ্যে ব্রাউন সাহেব বেশ কয়েকবার ভিঞ্চিকে স্মরণ করলেন, মেরি মাগদালিন, ইলুমিনাতি বারবার ঘুরে-ফিরে আসলো এই বইয়ের যথার্থতা যাচাই করতে। মোটের উপর হিস্ট্রি-মিস্ট্রি, ক্রিপ্টোলজি-সিম্বলজি, টুইস্ট, সিক্রেটস-সাসপেন্স, রোমান্স... ঘটনার ঘনঘটা...সব মিলিয়ে একেকটি অসাধারণ শৈল্পিক প‌্যাকেজ। যেকোন ভালোমানের উপন্যাস, থ্রিলার কিংবা চলচ্চিত্রেও কিছু অংশ থাকে খুবই বিরক্তিকর। Lost Symbol -এ কোন বিরক্তিকর অংশ নেই; বইটির প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য পাঠককে ধরে রাখবে শেষপর্যন্ত।

ভিঞ্চি কোডে আমরা জেনেছিলাম, স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন প্রায়রি দা সায়নের গ্রান্ডমাস্টার, এবার জানলেম তিনি ফ্রি-ম্যাসনও বটে। ছোটবেলায় শুনতাম- সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল ওনারা নবী ছিলেন...পরে নাস্তিক মালাউনরা তাদের কথা বিকৃত করে ফেলে। এদিক দিয়ে আইনস্টাইনের ভাগ্য ভালো, তাঁকে নিয়ে এইরকম টানা-হ্যাঁচড়া হয় না, ওনার ভাগ্য খারাপ...প্রাচীন যুগে জন্মালে হয়তো উনিও নবী না হোন, অন্তত ফ্রি-ম্যাসন হতে পারতেন।

যাই হোক, ফ্রি-ম্যাসন সম্পর্কিত পূর্বেকার সকল ভুল ধারণা মুছে দেবে বইটি। বইটিতে আরো বহু নতুন মহৎ সত্যের সন্ধান পাবেন যা বদলে দেবে আপনার জীবনকে। আর এসব ছোট ছোট সত্যের বা জ্ঞানের পাশাপাশি সবার উপরে আছে বইয়ের প্রধান আকর্ষণ,


"The Secret Wisdom...The Greatest mystery of Humankind...The lost Ancient Knowledge..."



বইটিতে বর্ণিত প্রতিটি বর্ণ ও বর্ণনা সত্য।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ ভোর ৫:৪৬
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×