somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোরা সব জয়োধ্বনী কর! ...

১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পেশাগত কারণে তথ্য-সাংবাদিকতার কাজে বহু বছর ধরে পাহাড়ে, বনে-বাদাড়ে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে অজান্তেই চিন্তা-ভাবনার একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়ায় ভাষাগত সংখ্যালঘু পাহাড় ও অরণ্যচারি জনপদ, আদিবাসী মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না।...

সংবাদপত্রে ছককাটা খবর লেখার বাইরে পাহাড়ের ছোট কাগজ ‘মাওরুম’ ও ‘জুম’সহ অন্যান্য আদিবাসী সাময়িকী (বেশীর ভাগই নতুন বর্ষ বরণ উৎসব — বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু উপলে প্রকাশিত; আয়ুস্কালও খুব স্বল্প) পত্রে লিখেও কিছু সাড়া পাই।

তবে বছর চারেক আগে আন্তর্জালে আদিবাসী বিষয়ক লেখালেখি শুরু করে সাড়া পাই বেশ। আদিবাসী সমস্যার কথা লিখতে লিখতে, আদিবাসী বা অ-আদিবাসী পাঠকের জবাব দিতে দিতে একের পর এক তৈরি হয় পোস্ট। সামহোরিন, সচলায়তন, আমারব্লগ, মুক্তমনায...। পাশাপাশি ফেসবুক-নোট তো আছেই।

এই করতে করতে ফেসবুকে খুঁজে পাই প্রচুর সংখ্যক আদিবাসী বন্ধু। এক-এগারোর সেনা সমর্থিত মইন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার কাজের কাজ বলতে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় আড়াই দশক পর মোবাইল ফোনের নেট ওয়ার্ক চালু করে। এই সুবাদে প্রচুর সংখ্যক আদিবাসী সদস্য হন ফেসবুকে। আন্তর্জালে চলে যোগাযোগ, কথোপকথন: কখনো সিধু-কানহু, কখনো এমএন লারমা, কল্পনা চাকমা বা চলেশ রিছিল।…তাদের বেশীর ভাগই ছাত্র-ছাত্রী। কেউ বা আবার প্রবাসী। …বিভিন্ন বাংলা ব্লগেও খুঁজে পাই অল্প কয়েকজন আদিবাসী লেখক। …
তো ফেসবুকে বিভিন্ন আদিবাসী বিষয়ক গ্রুপে ঘুরতে ঘুরতে নিজেই একদিন ’পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’ নামে একটি গ্রুপ খুলে ফেলি। গ্রুপ ঘোষণায় এরকম কিছু কথা যোগ করি: পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের আদিবাসীদের কথা লিখুন, পড়ুন, ছবি দেখুন, ছবি দিন। আদিবাসী মানুষের অধিকারের কথা বলুন। জয় হোক! — ইত্যাদি।

সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী বন্ধু সঞ্চয় চাকমা সাড়া দেন। উৎসাহ দেন তন্দ্রা চাকমা দিদি। আমরা তিনজন গ্রুপের সঞ্চালক হিসেবে একের পর এক আদিবাসী-আদিবাসী বন্ধুদের গ্রুপের সদস্য হওয়া আমন্ত্রণ জানাতে থাকি। সেটি গত ডিসেম্বরের ঘটনা; আর এর মধ্যেই গ্রুপে সদস্য সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনই সেখানে পড়ছে আদিবাসীদের অসংখ্য পোস্ট ও মন্তব্য।…

চলতে থাকে ডেস্টটপ, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন টিপে আমাদের গ্রুপের লেখালেখি…মতামত প্রদান, তর্ক-বিতর্ক, এমন কি ব্যক্তিগত আক্রমনও। কিছু ফেক আইডিধারী গ্রুপে এসে ব্লগের মতোই ক্যাচাল বাধায়। গালাগালি থেকে শুরু করে ব্যক্তি কুৎসা রটনা, সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক মন্তব্য ও পোস্ট দেওয়া, পাহাড়ের একটি বিতর্কিত দলের পক্ষে দলবাজী — ইত্যাদির অপচেষ্টা চালায়। বাধ্য হয়ে গ্রুপ ঘোষণার সঙ্গে যোগ করা হয় মৌলিক কিছু নিয়ম নীতি। আমরা বেশ কিছু পোস্ট ও মন্তব্য মুছে দেই, কয়েকজনকে ব্লক করে গ্রুপের পরিবেশ ফিরিয়ে আনি।…

একদিন ব্লগার ষষ্ঠ পাণ্ডব দা ওই গ্রুপেই এসে বলেন, কমরেড, এই চমৎকার গ্রুপের লেখা, ছবি ও অন্যান্য লেখার লিংক যদি কেউ রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তাকে একটু বিপদেই পড়তে হবে, কারণ প্রয়োজনীয় তথ্যটি চট করে এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই আপনারা একটি আদিবাসী ব্লগের কথা চিন্তা করুন।…

তার প্রস্তাবটি আমাকে ভাবায়। কিন্তু আমি নিজে টোকনো-কানা, তাছাড়া পেশাগত ব্যস্ততাও আছে। তাই একটি ব্লগ খুলে ফেলে সেটিকে এগিয়ে নেওয়া আমার একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। …তাহলে উপায়? আমি আন্তর্জালে খোঁজ চালাই। …

আমি দেখি, ফেসবুকে অন্যান্য আদিবাসী গ্রুপগুলোর যে সমস্যা, আদিবাসী বিষয়ক ব্লগগুলোতেও প্রায় একই সমস্যা– এগুলো মোটেই প্রাণবন্ত নয়। এর কারণ, এগুলোর সৃষ্টা ও সঞ্চালকরা অধিকাংশই ছাত্র। তাই পড়াশুনা, পরীক্ষা ইত্যাদির ফাঁকে ব্লগ সাইটকে হালনাগাদ করাসহ এগুলোকে জনপ্রিয় করার জন্য তাদের হাতে যথেষ্ষ্ট সময় নেই।…

এ পর্যায়ে এগিয়ে আসেন উত্তরবঙ্গের সান্তাল ছাত্র ও ব্লগার সমর মাইকেল সরেণ। ওই গ্রুপেই তিনি টোকা দিয়ে জানান, তিনি নিজেই একটি ব্লগ খুলেছেন w4study.com ঠিকানায়। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, এটি ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা বিষয়ক ব্লগ হবে। পরে মত পরিবর্তন করে একে বানানো হয় ‘আদিবাসী বাংলা ব্লগ’

সমর জানান, এই ব্লগ সাইটটি খোলার ক্ষেত্রে মুক্তমনা ডটকম দেখে তিনি খুবই উৎসাহিত হয়েছেন। তার আহ্বানে আমি সাড়া দেই। আমরা যৌথভাবে ব্লগটিকে এগিয়ে নিতে থাকি। তবে এখনো মূল কাজটি সমর একাই করে চলেছেন।

এ পর্যায়ে আবারো সুহদ সহ ব্লগার ষষ্ঠ পাণ্ডবকে আমাদের ফেসবুক গ্রুপ ’পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’ ঠোকা দেই, পাণ্ডব দা, আমাদের ব্লগটি দেখুন, মতামত দিন। উনি একনজরে চোখ বুলিয়ে বলেন, ব্লগটিতে আরো অনেক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথম পাতা থেকে হাবিজাবি পোস্ট সরিয়ে তথ্যবহুল লেখা দিয়ে সাইটটিকে সাজান। ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রয়োজনীয় লেখাগুলো ব্লগ সাইটে নিয়ে আর্কাইভ তৈরি করুন — ইত্যাদি। আমি তার সঙ্গে একমত হই। আমাদের যেতে হবে অনেক দূর। …

সঙ্গে সঙ্গে প্রধান ব্লগ সঞ্চালক সমরকে পাণ্ডব দা’র ভাবনাগুলো জানাই। সঙ্গে যোগ করি আমার মতামতও। ইমেইল, টেলিফোন, এসএমএস-এ আলাপচারিতা চলতেই থাকে।…

অল্পদিনের মধ্যেই ব্যপক পরিবর্তন আনা হয় ব্লগ সাইটটির সাজ-সজ্জায়। সবচেয়ে সহজ এর লগইন পদ্ধতি। একজন ব্লগার ইচ্ছে করলে নতুন করে লগইন নেইম ও পাসওয়ার্ড নিয়ে সেখানে ব্লগ লিখতে পারেন। আবার ব্লগার ইচ্ছে করলে গুগুল বা ইয়াহু বা ফেসবুকসহ অন্যান্য অ্যাকাউন্ট দিয়েও লগইন করতে পারেন। এতোদিন নীতিমালার বালাই ছিলো না; সমরের সঙ্গে আলাপক্রমে আমরা ছোট্ট একটি নীতিমালাও তৈরি করি। ব্লগটির সাউট বা আলাপ-আলোচনা বিভাগটি একেবারে লাইফ এসএমএস-এর মতো। ব্লগাররা ইচ্ছে করলে এখানে ইমোকটিনসহ ছোট ছোট বাক্যে বাতচিত সারতে পারেন। …

সমর ও ব্লগের টেকি বন্ধুরা এখন কাজ করছেন ‘আদিবাসী শব্দকোষ’ নিয়ে। এছাড়া আদিবাসী বিষয়ক সার্চ ইঞ্জিনও এরই মধ্যে উন্মুক্ত হয়েছে। ব্লগের নেপথ্য কারিগররা এখন কাজ করছেন আদিবাসী ইউকিপিডিয়া নিয়ে।

ব্লগযাত্রার অল্পদিনের মধ্যেই ‘আদিবাসী বাংলা ব্লগ’ ডয়েচে ভেলের ব্লগ প্রতিযোগিতায় মানবাধিকার বিভাগে সবচেয়ে বেশী ভোট পেয়ে অবশেষে নির্বাচিত হয়েছে ।

এ বিজয় শুধু আদিবাসী বাংলা ব্লগের নয়, এ বিজয় দেশের ৪৫টি ভাষাভাষী ২৫ লাখেরও বেশী আদিবাসী মানুষের। কামনা করি এই ব্লগ সাইটটি হয়ে উঠুক পাহাড় ও সমতলের অধিকার বন্চিত আদিবাসী মানুষের কণ্ঠস্বর, এমএন লারমা, সিধু-কানহু, কল্পনা চাকমা, চলেশ রিছিলের উত্তোরাধিকার!

সমর, পাভেলসহ ব্লগের নেপথ্য কারিগর, ব্লগার, পাঠক, ভোটদাতা সকলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। জয় হোক! :D
---
ছবি: ‌১। ম্রো, বান্দরবান, লেখক, ২। আদিবাসী বাংলা ব্লগের স্ক্রিন শট, লেখক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:৪৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×