somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চে'র মৃত্যুবার্ষিকী- চে’র আগুন ছড়িয়ে গেছে সবখানে।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মৃত্যু যে অমরত্ব নিয়ে আসে এ কথাটি চে’র ক্ষেত্রেই হয়তো বেশি সত্য হয়ে উঠেছে। এবং যত দিন যাচ্ছে এ সত্য যেন ততই সার্বজনীনতা পাচ্ছে। চে আজকে আর্জেন্টিনা, কিউবা বা ল্যাতিন আমেরিকা নয় তিনি সারাবিশ্বে অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতন ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বিপ­বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। প্রতীক হয়ে উঠেছেন তারুণ্যের বিদ্রোহের, নতুনের আবাহনের।

মার্কিন মদদপুষ্ট বলিভিয়ার স্বৈরশাসক রেনে বারিয়েন্তোসের বিরুদ্ধে বলিভিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে যুদ্ধ করতে করতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন চে গুয়েভারা। তারপর তাঁকে বন্দি করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যা করার পূর্বমুহূর্তে এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তুমি এখন কী ভাবছ্’? চে’র উত্তর- ‘আমি বিপ­বের অমরত্বের কথা ভাবছি’। মৃত্যুর ন’দিন পর হাভানার রেভলিউশন স্কয়াবে হাজার জনতার উদ্দেশ্যে ফিদেল ক্যাস্ত্রো বললেন, ‘আমাদের সন্তানেরা কার মতো হয়ে উঠলে আমরা খুুশি হবো- এ প্রশ্ন করা হলে অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমাদের উত্তর হবে, ওরা যেন চে’র মতো হয়’।

১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনায় চে’র জন্ম। উত্তরাধিকারসূত্রেই বিপ­বী চরিত্র পেয়েছিলেন। তাঁর বাবা ডন আর্নেস্টো এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমার ছেলের শিরায় শিরায় আইরিশ বিদ্রোহী, স্পেনিশ রাজ্যদখলকারী এবং আর্জেন্টিনার দেশপ্রেমিকদের রক্তই প্রবাহিত। এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, চে আমাদের অস্থির পূর্বপুর“ষদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছিল। তার প্রকৃতির মধ্যেই এমন কিছু ছিল যা তাকে দূরদেশ ভ্রমণ, বিপজ্জনক অভিযানে এবং নতুন ভাবধারার দিকে টানতো। ১১ বছর বয়সে গোপনে ট্রাকের পিছনে চড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন ভ্রমণে। দক্ষিণ আমেরিকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তর দেশগুলো ঘুরেছেন সাইকেলে চড়ে। ভেলায় চড়ে আমাজন নদী পাড়ি দিয়েছেন। পের“ থেকে বাবাকে লিখেছেন, ‘যদি এক মাসের মধ্যে আমার কাছ থেকে কোন খবর না পাও তাহলে বুঝবে হয় আমাদের কুমিরে খেয়েছে অথবা আমরা মানুষখেকো ইন্ডিয়ানদের হাতে বন্দি হয়েছি। এরা আমাদের মুÊু কেটে আমেরিকান ভ্রমণকারীদের কাছে বিক্রি করবে। সে¶েত্রে নিউইয়র্কের স্মারকদ্রব্যের দোকানগুলোতে আমাদের কাটা মুÊুর খোঁজ করতে পারো।’

প্রচলিতের বাইরে দাঁড়ানো, স্রোতের বিপরীতে চলার এক দুনির্বার আকর্ষণ শৈশব থেকেই চে’কে অস্থির করে রেখেছে। আর এ অস্থিরতা তাঁকে রূপাš—রিক করতে করতে বিপ­বের বরপুত্রে পরিণত করেছে। ‘বিপ­ব মানুষের মনকে বিশুদ্ধ করে, অভিজ্ঞ কৃষক যেভাবে তার ফসলকে ত্রæটিমুক্ত করে উচ্চমানের শস্য ফলায় সেইভাবে মানুষকে বিপ­ব উন্নতমানের ¶মতাসম্পন্ন করে তোলে’। গুয়েতেমালার এক পাহাড়ে বন্ধু পাতোজোর মৃত্যুতে চে তার স্মরণে লিখিত এক নিবন্ধে এ কথাগুলো বলেছিলেন। এক জন আজন্ম বিপ­বী পুর“ষ। শৈশব থেকেই অজানাকে জানা, পুরাতনকে চিরে দেখার নেয়ায় মানুষের দুঃখ ও দারিদ্রের সাথে একাত্ম হয়ে এ থেকে বের হবার পথ অনুসন্ধানে ব্রত হয়েছিলেন। পের“র কুয়েছুয়া ও আইমারা আদিবাসীদের অসহনীয় দারিদ্র , জমিদার ও প্রসাশন কর্তৃক অত্যাচারিত ও শোষিত হয়ে ¶ুধায় বিষাক্ত কোকো গাছের পাতা ভ¶ণ। বলিভিয়া, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পানামা, কোস্টারিকা, সালভাদর ও ল্যাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন উপজাতি ও আদিম অধিবাসী ও জনগণের দুঃখ-দুর্দশা ও সংগ্রাম চে‘কে বিচলিত করেছে, একাত্ম করেছে তাদের নিজেদের সাথে।

১৯৫০ সালে গুয়েতেমালায় প্রগতিশীল আরবেন্জ সরকার ¶মতায় এলে অর্থনীতিতে বিভিন্ন বৈপ­বিক কর্মসূচি গ্রহণ করে। আমেরিকা তখন ‘মধ্য আমেরিকার লাল ঘাঁটি’ কমিউনিস্ট সরকার’ ইত্যাদি বলে প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা শুর“ করে। প্রতিক্রিয়ার বির“দ্ধে আরবেন্জ সরকারকে র¶া করার জন্য চে গুয়েতেমালা গেলেন। তখন ফিদেল ক্যাস্ত্রোর বিভিন্ন সহযোদ্ধাদের সাথে চে’র সেখানে পরিচয় ঘটে। এবং সেখানেই চে মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। ডায়েরিতে চে বলেছেন, গুয়েতেমালা থেকেই তাঁর বিপ­বী জীবন শুর“। সশস্ত্র আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়ে পরে আমেরিকা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আরবেন্জ সরকারকে ১৯৫৪ সালে ¶মতাচ্যুত করে। আরবেন্জ সরকারের পতনের পর সেখানে থেকে মেক্সিকো চলে যান চে। কারণ তখন ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও তাঁর সহযোদ্ধারা সেখানেই ছিলেন। সেখানে চে ফিদেলেন নেতৃত্বে ৮১ জন বিপ­বীর সাথে ‘গ্রানমা’ জাহাজে চড়ে কিউবার উদ্দেশ্যে মেক্সিকো ত্যাগ করেন। কিউবাতে তখন প্রচÊ আলোড়ন চলছিল। বাতি¯—া সরকারের দমন, নিপীড়ন, নির্যাতন ও ¯ৈ^রশাসন আর চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা। কিছুদিন পরে গ্রানমা কিউবার সাšি—য়াগোর উপকূলে এসে ভিড়লো। সিয়েরামায়েস্ত্রা পর্বতে বিপ­বীরা ঘাঁটি স্থাপন করে সেখানে থেকে যুদ্ধ শুর“ করলো। প্রায় দু’বছরের সশস্ত্র সংগ্রাম চে’র জীবনে বিরাট পরিবর্তন এনেছিল। কিউবার বিপ­ব তাঁর জীবনবোধকে এক ¯^তঃস্ফূত মুক্তধারায় সম্মিলিত করে দিয়েছিল। বিপ­বের কাছ থেকে তিনি পেলেন এক নতুনতর দী¶া। ‘সত্যিই বিপ­ব আমাদের টে টে-কে পাল্টে দিয়েছিল। সে একজন দৃঢ়চেতা যোদ্ধা এবং একজন নিরলস কর্মীতে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। এর পরিবর্তন সম্পর্কে আমরা সুনিশ্চিত হলাম যখন ‘¯^াধীনতার দ্বীপে’ (কিউবা) উপস্থিত হয়ে আমরা তাঁর সা¶াৎ পেলাম। সেখানে যে সম¯— প্রশ্নগুলো তাঁকে বিচলিত করতো আজ সে সেগুলোর উত্তর খুঁজে পেয়েছে। বাবা, মা ও কিছু বন্ধু চে’কে টে টে বলে ডাকতো। চে সর্ম্পকে বন্ধু আলবার্তো একথাগুলো উলে­খ করেছিলেন। ফিদেল বলেছেন, ‘সাম্রাজ্যবাদের প্রতি চে’র ব্যাপক ও গভীর ঘৃণা ও অবজ্ঞার উৎস কেবল তাঁর পূর্ণমাত্রায় বিকশিত রাজনৈতিক সচেতনতাই নয়, কিছুদিন আগে গুয়েতেমালায় অবস্থানকালে তিনি সাম্রাজ্যবাদীদের নির্মম আগ্রাসনের নীতি প্রত্য¶ করেছিলেন। সেখানে সাম্রাজ্যবাদী শাসকগোষ্ঠীর সামরিক অনুচরেরা বিপ­বকে নির্মমভাবে দমন করেছিল’।

স্পেনিশদের বির“দ্ধে শতবছর আগে অনুষ্ঠিত কিউবার ¯^াধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানী ও কবি জোসে মার্তি ও পাবলো নের“দার কবিতা ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে চে’কে। যুদ্ধ চলাকালে সিয়েরামায়েস্ত্রা পর্বতে সহযোদ্ধাদের প্রায়ই আবৃত্তি করে শোনাতেন নের“দার ‘কাšে—া জেনারেল’ থেকে কবিতা। তাঁর ডায়েরির বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে জোসে মার্তির কবিতা ও বক্তব্যের উদ্ধৃতি। কবিতা, সাহিত্য ও শিল্পের বড় একটি জায়গায় তিনি বিচরণ করেছেন। তিনি কবিতা লিখেছেন, গল্প লিখেছেন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। ডায়েরি লিখতেন নিয়মিত। মৃত্যুর পূর্বদিন পর্যš— লেখা ডায়েরি থেকে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি বিশ্বমানবতাবাদী, শোষণ-নিপীড়ন ও সাম্রাজ্যবাদের বিপ¶ে দৃঢ় প্রত্যয় যুক্ত অকুতোভয় বিপ­বী চে গুয়েভারাকে। নিয়মিত বই পড়তেন, এ প্রসঙ্গে বাবা ডন আর্নেস্টো বলেন, ‘সেই চার বছর বয়সে পড়াশোনা আরম্ভ করে এবং জীবনের শেষ পর্ব পর্যš— সে ছিল একজন অত্যš— মনযোগী পাঠক। আমি শুনেছি যে বলিভিয়াতে যুদ্ধ করতে করতে শত্র“র তাড়া খেতে খেতে এবং হাঁপানির কষ্ট পেতে পেতেও সে কিছু-না-কিছু পড়াশোনা করতো। চে’র বাবা ও মা উভয়েই বই পড়তেন। বাড়িতে কয়েক হাজার বইয়ের একটি বড় গ্রন্থাগার ছিল তাঁদের। গ্রন্থাগারের তালিকায় ছিল স্পেনিশ ও র“শ ক্ল্যাসিকস, ইতিহাস, দর্শন, মন¯—ত্ত¡, শিল্পকলা বিষয়ক বিভিন্ন বই, মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিনের রচনাবলী, ক্রপোৎকিন ও বাকুনিনের রচনাবলী। আর্জেন্টিনার লেখকদের মধ্যে জো হার্নান্দেজ, সারমিয়েšে—া এবং ফরাসী ভাষার বিভিন্ন বই ছিল। চে মায়ের কাছ থেকে ফরাসী ভাষা শিখেছিলেন। তাঁর বাবা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সকলের মতো চে’রও কিছু প্রিয় লেখক ছিল। শৈশবে সে সালগোরি, জুলভার্ন, ডুমা, ভিক্তর, হুগো এবং জ্যাক লন্ডনের লেখা পছন্দ করতো। পরবর্তীকালে সার্ভাšি—স, আনাতোল ফ্রান্সের লেখা পড়তে শুর“ করে সে। সে তল¯—য়, গোর্কি এবং দ¯—য়ভস্কির রচনাও পড়েছিল। অবশ্য সে সময়ে প্রচলিত প্রায় সম¯— ল্যাতিন আমেরিকার সামাজিক উপন্যাসগুলো সে পাঠ করেছিল। এদের মধ্যে ছিলেন পের“র লেখক সিরো আলেগ্রিয়া, ইকুয়েডরের জর্জ ইকাজা ও কলম্বিয়ার জো ইউস্টাসিও রিভেরা। এঁদের উপন্যাসে ল্যাতিন আমেরিকার আদিবাসীদের দুঃখময় জীবনযাত্রা এবং চা ও কফি বাগানের শ্রমিকদের শ্রমদাস প্রথার নিখুঁত ছবি চিত্রিত হয়েছে’। শৈশব থেকেই কবিতার প্রতি ভালোবাসা ছিলো চে’র। বোদলেয়ার, ভার্লেন, গার্সিয়া লোরকা, আšে—ানিও মাকাডোর কবিতার প্রতি আকর্ষণ ছিল তাঁর। চে মাঝে-মধ্যে কবিতা লিখলেও নিজেকে কখনই কবি বলে মনে করতেন না। স্পেনীয় কবি ও গণতন্ত্রী লিও ফেলিপকে লেখা চিঠিতে নিজেকে ‘অসফল কবি’ বলে উলে­খ করেছেন তিনি। নিজেকে এমন একজন বিপ­বী বলে ঘোষণা করেছেন যার সাথে কবিত্বর নাকি সর্ম্পক নেই। অথচ, জীবনের বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তির পূর্ব পর্যš— চে কবিতার সাহচর্য ত্যাগ করেননি। মৃত্যুর পরে তাঁর ‘বলিভিয়ান ডায়েরি’র সাথে পাওয়া গেল তাঁর প্রিয় কবিতাসমূসসহ এক নোটবুক। চিত্রকলার সাথে চে’র সর্ম্পকের প্রশ্নে তাঁর বাবা বলেছেন, ‘ছবি দেখতে ভালোবাসতো, শিল্পের ইতিহাসের উপরেও তার ভালো দখল ছিল এবং জলরঙে ছবিও সে খারাপ আঁকতো না। আমার ছেলে ই¤েপ্রশনিস্টদেরই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতো’। গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতিও প্রবল আকর্ষণ ছিল চে’র। ভালো দাবা খেলতে পারতেন।

কিউবা বিপ­বের এক মাস পরে ১৯৫৯-এর ফেব্র“য়ারিতে ডন আর্নেস্টোকে ফিদেল লোক পাঠিয়ে হাভানাতে নিয়ে যান। পুত্রের সঙ্গে সেদিনের সা¶াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চে কাঠের তৈরি মঞ্চে উঠে আমার সঙ্গে দেখা করলো, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এখন সে নিজেকে চিকিৎসাবিদ্যায় নিয়োজিত করার কথা ভাবছে কি-না। জবাবে সে বললো, আমি আমার ডাক্তার উপাধিটা এখন তোমাকে স্মারক চিহ্ন হিসেবে উপহার দিতে পারি। আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সর্ম্পকে এতটুকুই বলতে পারি যে, হয় আমি এখানেই থেকে যাবো অথবা অন্য কোন জায়গায় গিয়ে লড়াই করবো’।

কোন কিছুই ল¶্য থেকে টলাতে পারেনি চে’কে। বিপ­বের পরে কিউবার নাগরিকত্ব দেয়া হলো তাঁকে। শিল্পমন্ত্রী ও কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব দেয়া হলো। কিন্তু এর কোন কিছুই তাঁকে আকর্ষণ করলো না। দূর অনাগত কালের বিপ­বের আহŸান তিনি শুনতে পেলেন। সে সময় ডায়েরিতে লিখলেন, ‘আমি আজীবনের বিপ­বী, আমি সৈনিক। অত্যাচার জর্জরিত সারাবিশ্বের মানুষের আকুল আহŸান আমার দু’কানে এসে নিত্য নিয়ত পৌছেছে। সাম্রাজ্যবাদের ধ্বজা এখনো সগৌরবে উড়ছে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাতিন আমেরিকায়। শোষণের অক্টোপাসের মরণ কামড়ে সারাবিশ্বের মানুষ এখনো আর্তনাদ করছে।.... মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এখনো ভিয়েতনামের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, লাওস, কম্বোডিয়া-কোথাও শাšি—র চিহ্নমাত্র নেই। আফ্রিকার প্রতিটি রাষ্ট্র এখনও উপনিবেশবাদীদের বির“দ্ধে কঠোর সংগ্রাম লিপ্ত। তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এখনও অ¯^ীকৃত। ল্যাতিন আমেরিকার মানুষ নেতৃত্বের অভাবে মুক্তি সংগ্রাম বারবার পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। গুয়েতেমালা, কলম্বিয়া, চিলি, পের“, উর“গুয়ে, বলিভিয়া আর আর্জেন্টিনার মানুষ বিপ­বের আগুনে জ্বলছে। এসব ব্যাপারে করণীয় কিছুই কি আমার নেই? কিউবায় সমাজন্ত্রও একটি সু-নির্দিষ্ট চেহারা নিয়েছে...। আমার আরও অনেক কাজ বাকি। অনেক কাজে এখনও হাত দেয়া হয়নি।..... সাম্রাজ্যবাদ আমার সবচেয়ে বড় শত্র“। শুধু আমার নয়, ল্যাতিন আমেরিকার প্রতিটি রাষ্ট্রের। সেই শত্র“র সাথে পাঞ্জা লড়তে গিয়ে যদি মৃত্যুকে বরণ করে নিতেও হয় তার চেয়ে মহত্তর প্রাপ্তি মানুষের জীবনে আর কী থাকতে পারে?

১৯৬৫ সালের এপ্রিলে বিপ­বের ¯^প্ন নিয়ে সঙ্গীসহ কঙ্গো যাত্রা করলেন। কিন্তু কঙ্গোতে সফল হলেন না। শত শত বছর ধরে সাদা মানুষদের দ্বারা নির্যাতিত কালো আফ্রিকানদের প¶ে খুব সহজের সাদা মানুষদেরকে যেমনি বন্ধু ভাবা সম্ভব ছিল না। পাশাপাশি কঙ্গোয় তখন বিপ­বের বিষয়গত বা¯—বতাও গড়ে উঠেনি। চে’র দল পরাজিত হল। তাঁরা আবার হাভানায় ফিরে এলেন। তিনি বললেন, ‘আমার পরাজয়ের দ্বারা বিজয় লাভ যে অসম্ভব তা প্রমাণিত হবে না। মাউন্ট এভারেস্টের সর্বোচ্চ শিখরে উঠবার চেষ্টা করে প্রথমে অনেকেই ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যš— এভারেস্ট জয় করা সম্ভব হয়েছে’। চে’কে ‘দুই, তিন অনেক ভিয়েতনাম’ সৃষ্টি ¯^প্ন তাড়িত করে টেনে নিলো বলিভিয়া। ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বলিভিয়া যান তিনি। বলিভিয়ার কৃষকদের দুরাবস্থা তখন চরমে। ¯ৈ^রশাসক রেনে বারিয়েšে—াসে ও মার্কিন বাহিনীর অত্যাচারে বলিভিয়ার সাধারণ মানুষের জীবন তখন দুর্বিসহ। ল্যাতিন আমেরিকার সামগ্রিক বা¯—বতায় সে সময়ে চে’র এ সিদ্ধাš—কে ফিদেল সমর্থন করলেন না। কিন্তু কোন বিধি-নিষেধই চে’কে তাঁর ল¶্য থেকে কখনও বিচ্যুত করতে পারেনি-কি পরিবার, কি রাষ্ট্র। এটি তাঁর অশৈশবের বৈশিষ্ট। মাত্র পঞ্চাশ জনের বিপ­বী দল তৈরি করে বলিভিয়ার জঙ্গল থেকে যুদ্ধ শুর“ করলেন। চে’র দল বলিভিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি বা গ্রামের কৃষকদের সমর্থন পেল না, সহযোগিতা পেল না শহরের সাধারণ মানুষদের। কিছুদিনের মধ্যেই চে’র দলের কয়েকজন পালিয়ে গেল, কেউবা বিশ্বাসঘাতকতা করে দলের অবস্থান জানিয়ে দিল শত্র“ সেনাবাহিনীকে। মার্চ মাসে সেনাবাহিনী বিপ­বীদের ঘাঁটি দখল করে নিলে তাঁরা গেরিলা যুদ্ধ শুর“ করেন। চারদিক থকে সেনাবাহিনী ঘিরে ফেললো গোরিলাদেরকে। চে’র দল আশ্রয় নিল গ্রাম লা হিগুয়েরার পর্বতের চূড়ায়। সহযোদ্ধাদের হারাতে হারাতে অক্টোবরে চে’র দলের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬তে। ৮ অক্টোবর ক্যাপ্টের পেদ্রোর নেতৃত্বে লা হিগুয়েরার কাছে গিরিসংকট কুয়েব্রাডা ডি ইউরোর চূড়ায় অবস্থান নিল। আর সেখান থেকেই তারা গেরিলা দলকে দেখতে পেল। চে’র দল বিপদ বুঝতে পেরে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গিরিসংকট থেকে নামতে থাকলে সার্জেন্ট বার্নার্ডিনো হুয়ানকা গেরিলাদের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকলে একটা গুলিতে মাথার টুপি উড়ে যায়, আর দুটো গুলি পায়ে বিদ্ধ হয় চে’র। নিচে পড়ে যান তিনি। চারদিক থেকে সেনাবাহিনী গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে আসে। ধরে ফেলে আহত চে’কে। রাতে বন্দি করে কম্বলে মুড়ে হিগুয়েরার একটি মাটির স্কুলে নিয়ে আসে তাঁকে। ৯ অক্টোবর দুপুরে সার্জেন্ট টেনার কারবাইন থেকে গুলি ছুঁড়ে ঝাঁঝড়া করে দেয় আর্নেস্টো চে গুয়েভারার হাত, পা ও বুক। চে’র হাত দুটো কেটে তাঁর লাশ গায়েব করে ফেলে তারা। মৃত্যুর দু’বছর পরে রাসায়নিক প্রক্রিয়ার সংর¶িত চে’র হাত দুটো কিউবায় পৌছায় আর ত্রিশ বছর পর ১৯৯৭ সালে কিউবা ও আর্জেন্টিনার ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল বলিভিয়ার ভ্যালেগ্রান্দেতে হাতবিহীন চে এবং তাঁর সঙ্গীদের দেহাবশেষ সনাক্ত করে। চে’র দেহ কিউবার নিয়ে সাš—াক্লারায় পুনরায় সমাহিত করা হয়।

বলিভিয়ার জঙ্গলে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে চে ডায়রিতে লেখেন, ‘সংগ্রামের জন্য আমি প্রস্তুত, হয়তোবা মৃত্যুর জন্যও। তাতে আমার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। আমি জানি, আমার ডাক ল্যাতিন আমেরিকার ঘরে ঘরে পৌঁছেছে, পৌঁছেছে প্রতিটি মানুষের সংগ্রামী প্রাণের গভীরে, পৌঁছেছে কঙ্গোয়, আলজেরিয়ায়, ভিয়েতনামে। আমি কোন বন্ধন মানি না, না রাষ্ট্রের, না পরিবারের। সবকিছু নিঃশেষে ছেড়েছি বলেই সবকিছু পেয়ে গেছি আমি। পেয়েছি অসংখ্য মানুষের অš—রের একাš— ভালোবাসা, শুনেছি বিপ­বের অমোঘ আহŸান সংগীতের মূর্ছনার মতো যা আমার জীবনকে সুধাময় করে তুলছে। মনে পড়ছে জোসে মার্তির সেই ভবিষ্যৎ বাণীর- চুলি­তে আগুন জ্বালানো হয়েছে, এখন চারদিকে আলো ঠিকই পড়বে।.... বলিভিয়ার জঙ্গলে শুয়ে শুয়ে দেখতে পাচ্ছি একা নই, আমরা কয়েক জন নই, আমরা ল¶ ল¶, আমরা কোটি কোটি’।

সেদিন যে ল্যাতিন আমেরিকা ও ক্যারাবিয়ান অঞ্চলে ছিলেন একা ফিদেল আর একটি মাত্র দ্বীপ কিউবা- সেখানে আজ যুক্ত হয়েছে ইভোমোরালেস, হুগো শ্যাভেজ, লুলা দা সিলভা, দানিয়েল ওর্তেগা, রাফায়েল ওরেয়াসহ অনেকের নাম। ল্যাতিন আমেরিকার দেশে দেশে আজ ক্রমাš^য়ে বি¯—ৃত হচ্ছে মার্কিন বিরোধী লড়াই। যে বলিভিয়ায় হত্যা করা হয়েছে চে’কে আজ সে বলিভিয়ার পার্লামেন্ট, ভ্যানিজুয়েলা, ব্রাজিল, নিকারাগুয়া, উর“গুয়ে ও কিউবার সরকারি অফিসগুলোতে স্থাপিত হয়েছে চে’র ছবি। চে’র প্রিয় শে­াগান ছিল ‘হা¯—া লা ভিক্তোরিয়া সিয়েম্প্রে’ (বিজয়ের পথে অগ্রসর হও)। আজকে শুধু ল্যাতিন আমেরিকা নয়, এশিয়া, আফ্রিকার নির্যাতিত দেশগুলোতেও চে’র শে­াগানকে বুকে ধরে কোটি কোট মানুষ লড়াই করছে। চে’র আগুন ছড়িয়ে গেছে সবখানে। চে’র পুণর“ত্থান ঘটেছে। পুনর“ত্থান ঘটেছে যিশুর মতো।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫
১৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×