somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমরা যারা প্রেম করার জন্য মেয়ে খুঁজছো!

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুমি কোন পড়ুয়া মেয়ের সাথেই প্রেম ক’রো। এমন মেয়ের প্রেমে প’ড়ো, যে কাপড়ের বদলে বই কিনে টাকা শেষ করে ফেলে। অতিরিক্ত বই রাখতে গিয়ে যার আলনার জায়গা শেষ হয়ে যায়। এমন মেয়ের সাথে প্রেম ক’রো, যার কাছে সবসময়েই পড়তে-চাওয়া বইয়ের তালিকা থাকে, বারো বছর বয়স থেকেই যার একটা লাইব্রেরি কার্ড আছে।
এমন এক মেয়েকে খুঁজে বের ক’রো যে পড়ে। কীভাবে বুঝবে? – তার ব্যাগে সবসময়েই একটা না-পড়া বই থাকবে। বইয়ের দোকানের তাকগুলোর ওপর দিয়ে মুগ্ধ চোখ বুলিয়ে নিয়ে যাবে যে, আর পছন্দের বই দেখলে নিঃশব্দে চিৎকার করে উঠবে। পুরনো বইয়ের দোকানে একটা বই হাতে নিয়ে তার পাতা শুঁকতে দেখছো যেই অদ্ভুত মেয়েটাকে – ওই হচ্ছে পড়ুয়া। ওরা কখনোই বইয়ের পাতার গন্ধ না শুঁকে থাকতে পারে না – পাতাগুলো হলদেটে হলে তো কথাই নেই।
রাস্তার ধারের কফির দোকানটায় অপেক্ষা করতে করতে বই পড়বে সে। তার মগে উঁকি দিলে দেখবে – সেখানে ক্রীম ভাসছে, কারণ এর মধ্যেই ডুবে গেছে সে বইয়ের মধ্যে। লেখকের তৈরি পৃথিবীতে হারিয়ে গেছে। সেখানে বসে পড়লে তোমার দিকে কঠিন চোখে তাকাতে পারে সে – পড়ার মাঝখানে কেউ বাগড়া দিলে পছন্দ করে না যে ওরা! বইটা তার ভাল লাগছে কিনা জিজ্ঞেস ক’রো।
আরেক কাপ কফি কিনে দিও তাকে।
মুরাকামিকে নিয়ে তুমি সত্যি সত্যি কী ভাবো সেটা তাকে জানিও। ‘ফেলোশীপ’এর প্রথম অধ্যায় সে শেষ করতে পেরেছে কিনা জেনে নিও। যদি বলে যে সে জেমস জয়েসের ‘ইউলিসিস’ বুঝতে পেরেছে – ধরে নিও যে নিজেকে বুদ্ধিমতী প্রমাণ করার জন্যই কেবল এ কথা বলছে সে। জিজ্ঞেস ক’রো – সে এলিসকে ভালবাসে, নাকি এলিসের মত হতে চায়।
পড়ুয়া মেয়ের সাথে প্রেম করা সহজ। জন্মদিন, বড়দিন, বার্ষিকী – যে কোন উপলক্ষ্যেই তাকে বই উপহার দিও। কথার মালায় গাঁথা উপহার দিও তাকে – গানে, কবিতায়। নেরুদা, পাউন্ড, সেক্সটন, কামিংস-এর বইও দিতে পারো। কথা মানেই ভালবাসা – সেটা যে তুমি বোঝো তা তাকে জানিও। বই আর বাস্তবের পার্থক্য সে জানে – এটুকু বুঝে নিও; তবে নিশ্চিত থাকতে পারো – নিজের জীবনকে সে একটু হলেও তার প্রিয় বইয়ের মত করে গড়ে নিতে চাইবে। যদি চায় – তাতে তোমার দোষ নেই কিন্তু!
তাকে কোন না কোনভাবে চেষ্টাটুকু তো করতে হবে।
তার সাথে মিথ্যে ব’লো। সে যদি ব্যাকরণ বোঝে, তাহলে এটাও বুঝে নেবে যে তোমার মিথ্যে বলার প্রয়োজন ছিল। কথার বাইরেও আরো অনেক কিছু থাকে: প্রেরণা, মূল্যবোধ, বিরোধ, সংলাপ। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে না তুমি মিথ্যে বললে।
তাকে হতাশ ক’রো। কারণ যেই মেয়ে পড়ে, সে জানে যে ব্যর্থতা থেকেই এক সময় পরম পাওয়া আসে। কারণ সে জানে সবকিছুরই শেষ আছে। জানে, তুমি সবসময়েই একটা নতুন পর্ব লিখতে পারবে। জানে, তুমি যতবারই শুরু করো না কেন প্রতিবারই জয়ী হয়ে ফিরে আসতে পারবে। জীবনে একজন-দুজন খলনায়ক থাকবেই – এ কথাও জানে সে।
তুমি যা কিছু হতে পারো নি সেগুলোতে ভয় কিসের? যেসব মেয়ে পড়ে, তারা এও জানে – বইয়ের চরিত্র যেমন গড়ে ওঠে, মানুষও তেমন। ‘টোয়াইলাইট’ সিরিজের চরিত্রগুলো ছাড়া।
তুমি যদি কোন পড়ুয়া মেয়েকে খুঁজে পাও, তাকে নিবিড় করে নিও। রাত দুটোয় ঘুম ভেঙে যদি দেখো একটা বই বুকে জড়িয়ে বসে সে কাঁদছে – তাকে এক কাপ চা বানিয়ে দিও, আর জড়িয়ে ধরে রেখো। কয়েক ঘণ্টার জন্য হয়তো তাকে তুমি হারাবে – কিন্তু সে শেষমেশ তোমার কাছেই ফিরে আসবে। সে এমনভাবে কথা বলবে যেন বইয়ের চরিত্রগুলো সব বাস্তব – কারণ কিছুক্ষণের জন্য তারা আসলেও তাই হয়ে উঠবে।
একটা বেলুনে বসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিও তুমি। কিংবা কোন রক কনসার্ট চলার সময়। অথবা এর পরের বার যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়বে – তখন খুব সাদাসিধেভাবে বোলো। Skypeএ বসে।
তখন তোমরা এত বেশি হাসতে থাকবে – মনে হবে যেন হৃৎপিণ্ডটা কীভাবে যে এখনও ফেটে গিয়ে বুকটাকে রক্তে ভাসিয়ে নিচ্ছে না! তোমরা নিজেদের জীবনের গল্প লিখবে – অদ্ভুত নামের সব বাচ্চা থাকবে তোমাদের, আরও অদ্ভুত হবে তাদের রুচি। সে তাদেরকে ‘ক্যাট ইন দ্য হ্যাট’ আর ‘আসলান’কে চিনিয়ে দেবে – একই দিনেই হয়তো। বুড়ো বয়সে শীতকালে একসাথে হাঁটতে যাবে তোমরা – তার নিচু গলায় কীটসের কবিতা আবৃত্তি শুনতে শুনতে বুট থেকে তুষার ঝেড়ে ফেলবে তুমি।
তুমি এমন এক মেয়ের সাথে প্রেম ক’রো যে পড়ে – কারণ তুমি তার যোগ্য। তোমার জীবনটাকে সবচেয়ে বেশি রাঙিয়ে দিতে পারে এমন মেয়েই পাওয়া উচিত তোমার। তবে তোমার যদি তাকে একঘেয়েমি, বাজে সময় আর আনাড়ি প্রস্তাব ছাড়া আর কিছু না দেওয়ার থাকে – তবে তোমার একলা থাকাই ভাল। তুমি যদি পৃথিবী আর এর বাইরের অন্য সব পৃথিবীকেও পেতে চাও – এমন মেয়ের সাথে প্রেম ক’রো যে পড়ে।
আরও ভাল হয়, যদি এমন মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারো যে লিখতে ভালবাসে।

মূল লেখা: Date A Girl Who Reads – Rosemarie Urquico
রুপান্তর-ফেরদৌস ফয়সাল।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫৬
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×