বিষয়টা বর্তমানে আমাদের দেশে ট্রেন্ড্স। আগস্ট মাসে যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে "শোক দিবস"-এর ব্যানারে ডুবে থাকত সেখানে এবার এসেছে "সোলায়মান সুখন বনাম তাহসিন্যাশন"। মোটিভেশন নাকি ব্যবসা? প্রথমত আমার স্রোতে গা ভাসাতে আনন্দ নেই। তাই এগুলো নিয়ে লিখতে ইচ্ছে নেই। তবুও দেখলাম যে, সুখন ভাইয়ের সমর্থক তাহসিনের সম্পূর্ণ বিপক্ষে আর তাহসিন ভাইয়ের সমর্থক সুখন ভাইয়ের সম্পূর্ণ বিপক্ষে। আমার মনে হলো, আমিও একটু মতামত প্রকাশ করি। কারো যদি সহায়তা হয়?
(মতামত আমার ব্যক্তিগত। তাই সবার সাথে মিলবে না) "মোটিভেশনাল স্পিচ তথা অনুপ্রেরণামূলক বাণী কাজ করে না। শুধুই সময় নষ্ট" এ কথাটা আমার কাছে যৌক্তিক নয়। আমি তো বলব অনেক ক্ষেত্রে এটি যাদুর মত কাজ করে(সবার ক্ষেত্রে না)। যেন আলাদিনের চ্যারাগ। ঘষতেই মনের দৈত্যকে আমার মত করে চালাতে পারব। যা চাইব তাই পাইব। তবে এ ব্যাপারে নিজের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কারণ চ্যারাগ তো আর আকাশ থেকে দৈবভাবে আসবে না। বাহির থেকে আপনার মনের ইচ্ছাকে আরো প্রবল করতে অনুপ্রেরণা নিতেই পারেন। তবে এইটা লিমিটেড। কিন্তু আপনার ভেতর থেকে যে মোটিভেশন আসবে সেটা হবে আনলিমিটেড। সুতরাং মোটিভেশনাল স্পিচকে অবজ্ঞা করার কোন কারণ আমার কাছে নেই। যদি কেউ বলে মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে কে কি করেছে? একটু এই ইউটিউব চ্যানেলটি ঘুরে আসুন। এবার এটিদেখুন। প্রথম চ্যানেলটির ভিডিও দেখে দ্বিতীয় চ্যানেলটি নিজের ভিতর অনুপ্রেরণা পায়। সেদিন থেকে ইউটিউবিং করে আজ এ পর্যায়ে। মনে রাখবেন, সফলতা আপেক্ষিক। কারণ দ্বিতীয় চ্যানেলের এ্যডমিনের কাছে এটিই তার সফলতা। আবার অনেকের কাছে দিন শেষে পরিবারে মুখে হাসি ফোটানোও সফলতা।
তবে আমার কাছে স্পিচের বিনিময়ে অথবা স্পন্সরশিপের বা অর্গানাইজিং-এর জন্য যাই হোক না কেন, টাকা নেওয়াটা ভালো লাগে না। এর কারণ আপনার কারণে কেউ যদি এতটুকুও জীবনকে সফল করতে পারে তবে সে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। টাকাকে মানুষ বিনিময়রূপেই চেনে। এর অন্য কোন রূপ নেই। ফলে আপনার স্পিচে কেউ মোটিভেশন পেলেও আপনাকে ভুলে যাবে কেননা সে তো আপনাকে বিনিময়ে কিছু দিয়েছে। আর যদি কোন কাজ হয় বিনিময়হীনভাবে তবে যেই কাজটি করা হয় এবং যে করে, উভয়টিই অমর হয়ে থাকে। আর জানা মতে যারা স্পিচ দেয় তারা প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত। ফলে এ স্বল্প টাকা না নেওয়াটাই উত্তম।
এরপর আসি সেলফ ব্র্যান্ডিং। সকলেরই উচিত সেলফ ব্রান্ডিং করা। এর মধ্যে খারাপ কি আছে? সবাই পারে নিজেকে তুলে ধরতে। আর এটাই যদি সেলফ ব্রান্ডিং হয় তবে ক্ষতি কি? নিজস্ব সত্ত্বাকে তুলে ধরার মাধ্যমে যদি অন্যকে তার নিজের সত্ত্বা খুঁজে বা তুলে ধরতে অনুপ্রাণিত করা যায় তবে খারাপ কিসে? নিজের কাহিনীকে মানুষ খুব কাছে থেকে বুঝতে পারে, শিখতে পারে। আর এর মাধ্যমে যদি ভালো কিছু করা যায় তবে ভালোই। দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তবে দাগই ভালো (সার্ফ এক্সেল)
ব্যবসা করলেই সফল আর চাকরি করলেই চাকর....... বাদ দিন এই ভাবনা। কেননা ব্যবসা করেও সফল হওয়া যায় আর চাকরি করেও। কারণ সফল হওয়ার ক্ষেত্রে সুখটাই অধিক বিবেচ্য। যদি চাকরি করা খারাপই হতো তবে সুন্দর পিচাই, শেরিল স্যান্ডবার্গ, টিম কুক, সত্য নাদেলা সবাই-ই নিজের কোম্পানি খুলে বসতেন। তাই চাকরি আর ব্যবসা দিয়ে পার্থক্য করা এখন বন্ধ করুন।
আপনি যখন কোন আইডল হয়ে উঠবেন তখন আপনার কিছু গুণ ছেড়ে দিতে হয়ই। তন্মধ্যে রাগান্বিত হওয়া। সবার ক্ষেত্রে রাগ মানায় না। বেশি উত্তেজিত হয়েও যদি রাগ দেখান আপনি তবেও দর্শক আপনার রাগটাই দেখবে। তাছাড়াও রাগের কোন ভালো ফল দেখি না। হ্যাঁ, তবে কালভদ্রে কখনো রাগ দেখানো যেতে পারে। তবে পাবলিকলি না।
সবশেষ, আমরা সবাই-ই নক্ষত্র। যা সব সময়-ই বিদ্যমান। কিন্তু সেটার দেখা সবাই সব সম্য পায় না। কেউ সকালে দেখে সূর্যকে আবার কেউ রাতে দেখে তারাকে। তবে উভয়ের ভূমিকাই বিশেষ। তাই চেষ্টা করব বিশেষ কিছু হতে। হয়ত সূর্য হয়ে কাওকে আলো দেব, না হয় তারার মতো একাকী জ্বলব। অন্যের কথা না তো ভালো না তো খারাপ সেটা শুধুই একটা তথ্য। ভালো খারাপ আমার মধ্যে।
আর হ্যাঁ, আমার কাছে মোটিভেশন ব্যবসা। তবে ব্যবসাটা মোটিভেশন।