সেদিন সকলের মনে ছিল অস্থিরতার স্পষ্ট ছাপ। চারিদিকে আন্দোলন, মিছিল-মিটিং-এর সাথে ছিল জনগণের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সকলের মনে কুয়াশার মত অস্পষ্টতা ছিল এদেশে বাংলা ভাষার ভবিষ্যত নিয়ে। "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" দাবি যত দৃঢ় হতে শুরু করল ততই সূর্যের আলোর রশ্মিতে কুয়াশা দূরীভূত হতে লাগল। গান, নাটক, লেখনী ইত্যাদি সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে বেগ পেতে থাকে এ আন্দোলন। তবে তারুণ্যের যে তেজ ও সাহস সেদিন লক্ষ্য করা যায় আজ হয়তো তা কিছুটা কম প্রকাশ পায়। স্বৈরাচারিদের আইন ভঙ্গের ইচ্ছা ও দৃঢ়তা এখনকার অধিকাংশের মধ্যে দেখা যায় না। আজ হতে ৬৬ বছর আগের দিনটার ইতিহাসও নাকি সকলের জানা থাকে না। যাক কথাগুলো আমার ব্যক্তিগত না, সকলকে এমনটাই বলতে দেখা যায়। যাই হোক, একটু ইতিহাসে ঘুরে আসি। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, বাঁচার শক্তি দেয়, পূর্বপ্রজন্মকে জানার পথ করে দেয়। ১৯৫২ সালের এই দিনে সকালবেলায় ছাত্রদের মিছিল ছিল আমাদের জন্য জাতীয়তাবাদের উন্মেষের দিন ছিল। শিক্ষার্থীদের বজ্রকঠিন আন্দোলনের সামনে পাকিস্তানি বুলেট কিছুই ছিল না। হয়ত তাদের মনের এ বজ্রকঠিন আকাঙ্ক্ষার কারণেই অকাতরে জীবন দান করতে তাঁরা এক কদমও পিছপা হননি। তাদের জীবনের মাধ্যমে আজকে এই লেখাটা লিখতে পারা, বাংলায় মনের কথা বলতে পারা। সকলেই শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি ভাষা শহীদদের। আর আজকের এই দিনটি তো ১৯৯৯ থেকে সমগ্র বিশ্বের জন্য, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আর গর্ভ আমাদের জন্য, বাঙালি জাতির জন্য।
সে নাহয় সবাই জানে। কিন্তু আজকের দিনটি কেমন? তুলনা নয়, একটু দৃষ্টপাত। প্রথমের কথার সূত্র ধরেই আসি। আমাদের তরুণদের মধ্যে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা কিছুটা কম বলেই মনে হয়। এ সমস্যার একটি নয় অনেকগুলো কারণই রয়েছে। কিন্তু এমন অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় তরুণদের তারুণ্য উদ্দীপনা দেখা যাবে না। সকলের মনে একপ্রকার উদাসীনতা বসে যাবে। তরুণরাই তো সমাজের পরিবর্তন আনে, সেদিন যেমন এনেছিল। এটা আমাদের তরুণদের সমস্যা নয়। এর দায়টা নিতে পারে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থা আরো অনেক কিছুই রয়েছে। তবে এ সমস্যার বেড়ি স্থায়ী হতে দেওয়া মানে নিজেদের বিপদকে বুকে টেনে নেওয়া।
আরেকটি ব্যাপার এখনকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায়। "আরে, ইতিহাসই তো। পরীক্ষার খাতায় খুব বানিয়ে লেখা যায়। আর পৃষ্ঠা বেশি মানেই নম্বর।" এই ভ্রান্ত ধারণা এখন অনেকের মধ্যে, সকলের মধ্যে নয়। তবে একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মধ্যে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা যদি নজর দেওয়া হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারুন বা না পারুন। ইতিহাস তো জানা আমাদের অত্যাবশ্যক। তাতে নিজেদের মধ্যে একরকম স্বদেশী, স্বজাতীয় চেতনা কাজ করবে। হয়তো আমিই ভ্রান্তিতে রয়েছি। কি জানি, ইতিহাস বানিয়ে লেখা যায় তো? বা তারুণ্যের উদ্দীপনা অধিকাংশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে নাকি?
উত্তর বলবেন। উপকৃত হব।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩০