somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈশাখের সেদিন আর এদিন; তফাত শুধু ভালবাসা

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেটির মন খুব সরল। তখন বোধকরি সে বুঝতো না ভালবাসা। সে বাকি ৫-১০টা ছেলের মতই বেড়ে উঠছিল না। একা থাকত, সকলের থকে দূরে থেকেই যেন তার শান্তি। একটুতেই ক্ষেপে যেত, যেন বদমেজাজের দোকান খুলে বসেছে। যেখানে কেউ না চাইলেও সে তার পণ্য (বদমেজাজ) দিয়ে দেয়। তার জীবনে মেয়েটির হঠাৎ আবির্ভাবই যেন তাকে পরিবর্তনে বাধ্য করে। সে জীবনকে বুঝতে এবং জানতে শেখে, ভালবাসতে শেখে। আজ তাদের দুজনের মধ্যে স্রেফ এক কদমের ব্যবধান। বাকি সব কিছু তারা অতিক্রম করেছে। ঘটনাটির শুরু স্কুল জীবনে।

ভদ্র, সাদাসিধা একটি লাজুক ছেলে। প্রতিদিন সকালে উঠের বাকি ১০টি দিনের মতই কাটাত তার দিনগুলো। স্কুলের পাঠ্যবইয়ে মুখ গুজেই যেন তার শান্তি। খেলাধুলা নেই, শরীরচর্চাও নেই। আছে শুধু বইপোকার (পাঠ্যবই) মত বেঁচে থাকা। তবে তার জীবনের একটি বিশেষ দিন এসে পড়েছে আজ। যা ছেলেটি জানতও না।

১৪ই এপ্রিল। বাংলা নতুন বছর। সবাই নতুন বছরের আনন্দে আনন্দিত। ১০ম শ্রেণিতে পড়া একটি বালক। বালক মানে একেবারে স্বচ্ছ মনের যে বালক সে। ক্লাসে রোল ১ হওয়ার কারণে ক্লাসের কিছু ছেলে সবসময়ই তাকে আতেল এবং রোবট বলে জানত। যাক, সেদিকে তার মন ছিল না। পড়ালেখা সে একলব্যের মত। স্কুলে সেবার 'বর্ষবরণ উৎসব'-এ সে উপস্থাপকের দায়িত্বে ছিল। বিতর্ক, আবৃত্তি-ও করত। স্কুলে ছেলে-মেয়ে আলাদা আলাদা শিফটে পড়ত। যে কারণে সব অনুষ্ঠানেই একজন ছেলে ও একজন মেয়ে উপস্থাপনা করত। সেবার অনুষ্ঠানে মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই সেই ভদ্র, শান্ত ছেলেটির ভালো লেগে যায়। এ বয়সে একটু-আধটু ভালো লাগা হয়েই যায়। এটা আর এমন কি? প্রথম যখন দুজনের মধ্যে কথা হয়, শুধু মেয়েটি ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করেছিলঃ "এই তুমি উপস্থাপনা করবে?" লাজুক ছেলে কি বলবে বুঝতে পারে নি। তা যাই হোক, অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠান শেষে এক অদ্ভুত রকমের কান্ড ঘটে ছেলেটির সাথে। অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা ব্যাপার কিন্তু ব্যপারটি ছেলেটির সাথে প্রথম এবং চমকপ্রদ। মেয়েটি বলল, "দাঁড়াও, তোমার সাথে একটা ছবি তুলব।" অত্যন্ত সংকোচের সাথে হলেও ছবিটি তুলেছিল ছেলেটি। কেন যেন সেদিন থেকেই অল্প করে ভালো লাগা জন্মাতে থাকে মেয়েটির উপর। এরপর ধীরে ধীরে একদিন ছেলেটির সাথে মেয়েটির ফেসবুকে কথা শুরু হয়। প্রথম থেকেই মেয়েটির জন্য একটা আলাদা জায়গা ছিল ছেলেটির কাছে। তবে স্বভাবে কিছুটা খাপছাড়া (আমার গল্পের মত) এবং বেমানান ছেলে হওয়ায় ব্যাপারটি বুঝতে দেয় নি। প্রতিদিনের অল্প অল্প কিছু কথাও যেন দুজনের কাছে খুব দামি ছিল। একেবারে সাধারণ কিছু মুহুর্তও যেন অসাধারণ হয়ে ওঠে। মেয়েটি কিভাবে যেন খুব শীঘ্রই ছেলেটিকে আপন করে নেয়। প্রাণহীন সেই ছেলের যেন প্রাণ হয়ে আবির্ভাব হয় মেয়েটির। একটি সাধারণ মেয়ের মতই অল্প কিছু চাওয়া ছিল তার। তবে এ সাধারণ ব্যাপারগুলোই অসাধারণ হয়ে ধরা দেয়। পরে হঠাৎ একদিন তারা আবিষ্কার করে তারা একে অপরকে ভালবেসে ফেলেছে। চলতে থাকে কিছু ছোট্ট ছোট্ট অসাধারণ মুহুর্ত দিয়ে তৈরি ভালবাসার গল্প।

তবে তাদের এ ভালবাসা হয়ত সব ভালবাসার মত ছিল না। লোভ-লালসাহীন এক ভালবাসা। সত্যি বলতে, ভালবাসায় তো লোভ থাকে না। আমাদের সমাজের কিছু মানুষ ব্যাপারটির সাথে এ ঘৃণ্য ব্যাপারটি যুক্ত করেছে। তাদের এ ভালবাসা ছিল অপেক্ষার, মুক্তির, আনন্দের, কষ্টবিহীন। সর্বদা হাসি-খুশি চলছিল তাদের জীবন।

বড় হয়েছে তারা। এখনও যেন ঠিক ক্লাস ১০-এর মত তাদের সম্পর্ক। এ যেন পর্বতসম গভীর সম্পর্ক। তবে তাদের এ ভালবাসা পাগলামি ছিল না। শুধু আবেগ দিয়েই তাদের সম্পর্ক ছিল না। আরেকটি পহেলা বৈশাখের আগমন। মাঝখানে চলে গেছে অনেক বৈশাখ। কখনোই দেখা হয়নি আর তাদের। শুধুমাত্র কিছু ম্যাসেজ আর মোবাইলের কথা দিয়েই তৈরি হচ্ছিল তাদের ভালবাসার গল্প। এ বৈশাখে কেউ কাউকে "শুভ নববর্ষ" বলেনি। তারা সামনা-সামনি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবে একে অপরকে।

এবার তারা উভয়ই দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল। ঢাকা-আড়িচা মহাসড়কের এক জায়গায় তারা দেখা করবে। যেখানে প্রকৃতি চিরশান্ত, বাতাসের কোমল হাওয়া বয়ে চলছে, নদী তাহার শান্ত বেগে ছুটে চলছে আর আজ আকাশে কিছু মেঘ করেছে। সূর্য মেঘের আড়ালে তবে কিছু রশ্মি বেরিয়ে আসছে। ছেলেটি মেয়েটিকে বলে বিকেল ৩ টায় দেখা করবে। দুজনেই সেখানে ৩টায় আসবে। মেয়েটি ৩টা বাজার কিছু আগেই চলে আসল। এরপরই শুরু হয় অপেক্ষার প্রহর। অন্যদিকে ছেলেটির এক আত্মীয় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে ছেলেটির রওনা দিতে দেরী হয়। অপেক্ষার সময় বাড়তেই লাগল।

৪টা........৫টা........৬টা।

মেয়েটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। যেন অপেক্ষার মুহুর্তগুলো বুকে এক-একটা পাথরের মত কেউ রেখে দিচ্ছে। ৬টার কিছু পরই ছেলেটি সেখানে যায়। হোক না হোক কেউ যদি অনুভূতিগুলোকে ছবি বা শব্দের মাধ্যমে লেখতে পারত তবে হয়তো সেই সময়টি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি বা গল্প হতে পারত। মেয়েটি ছেলেটিকে দেখামাত্রই দৌড়ে এগিয়ে আসে। একে অপরের সম্মুখে। চোখে চোখ রেখে হয়ত কেউই এর আগে কথা বলতে পারে নি। তবে আজ বলেবে। আর খুব প্রশ্নবোধক একটি সময়ও। একে অপরকে সজোরে বলে উঠল

"শুভ নববর্ষ"

আর প্রশ্নবোধক জায়গাটি হল, মেয়েটি ছেলেটির দেরী হওয়ার কারণ একবারও জিজ্ঞেস করেনি। এভাবেই চলতে থাকে তাদের ভালবাসার গল্প।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×