somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফেলুদার তোপসে
নিষ্পত্তি কি সব সময়ে জয়-পরাজয়ে? ময়দানি ধুলোয় তার বাইরেই যে পড়ে থাকে খেলার আসল-নকল গল্পগুলো৷ ময়দানের ঘাস-ধুলো যাঁর প্রিয়তম বন্ধু, তাঁর কলমে অভিজ্ঞতার দস্তাবেজ৷

নষ্ট মেয়ে

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখাটাই যে পেশা… ইচ্ছে করুক বা নাই করুক সপ্তাহের সাতটা দিন গড়ে সাত ঘন্টা করে এলসিডি স্ক্রিনের সামনে বসে কালো কি-বোর্ডে খটাখট শব্দে লিখে চলতেই হবে।অনবরত, ক্রমাগত। ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই ফরমায়েশি লেখা। বাকি পাঁচ শতাংশ অবশ্য সুযোগ থাকে নিজের কথা লেখার। তার জন্যে চাকুরিদাতারা একটি খালি স্লেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে ৯৫ ভাগ ফরমায়েশি লেখা লিখতে লিখতে যখন নিজের কথা বলার সুযোগ হয়, তখন ট্যাবুলা রাসা-র সাদা স্ক্রিনের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কয়েকটি শব্দ জোগাড় করতে পারি মাত্র। কালো কি-বোর্ডে তখন অবরে-সবরে কয়েকটা টরেটক্কা। কিন্তু শব্দগুলো বাধ্য ছাত্রের মতো সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়ায় কোথায়! যখনই পাঁচ-দশটাকে টেনেটুনে লাইনে দাঁড় করিয়ে অন্যগুলোকে কান ধরে টেনে আনতে যাই, অমনি বাকি বিচ্চুগুলো ভোকাট্টা হয়ে যায়! হয়রানির একশেষ। তবুও তাদের বাবা-বাছা বলে ফিরিয়ে আনি… আর হঠাত্‍‌ করেই তারা যেন পাল্টে যায়। এক্কেবারে শান্ত-নম্র। ঠিক যেমনটা করতে বলি, করে। আগে বসতে বললে আগে বসে, পরে দাঁড়াতে বললে বিনা বাক্য ব্যয়ে গুটিগুটি পায়ে গিয়ে লাইনের শেষে দাঁড়ায়।


শব্দগুলোও খানিকটা আমারই মতো। নিজের খেয়ালখুশি মতোই চলতে ভালোবাসে। কারও অন্যায্য নির্দেশ মেনে নেওয়ার মতো সুজন তারাও নয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে অন্যায্য না ন্যায্য, সেটা ঠিক করবে কে? সেই তো! আমার মধ্যে যে জন্মগত বিজ্ঞটি রয়েছে সে বলে কেন আমিই করব! আমার কাছে কোনটা ন্যায্য সেটা কি পাড়ার মোড়ের দোতলা সাদা বাড়ির কাকিমা ঠিক করে দেবেন? ফূর্তির প্রাণ, গড়ের মাঠ… আমিও দক্ষিণীদের মতো মাথা নাড়িয়ে তার কথা মেনে নিই। ওরে বাবা সেই জন্ম বিজ্ঞকে খেপিয়ে নিজের ডুমস ডে ডেকে আনার মতো অতটা সাহসীও আমি নই।


যাক গে যাক… ওর কথাই আমার কাছে বেদবাক্য। যদিও বেদ আমি কোনওদিন পড়িনি, তাতে কী কী বাক্য লেখা আছে তাও জানি না। তবুও প্রবাদ যখন আছে, তখন তার মানেও অকাট্য নিশ্চয়! অবশ্য সেই জন্মজ্ঞানীর কথা মেনে নেওয়ার আরও একটা যুক্তি আছে আমার কাছে… ওই যে মহাপুরুষরা আসতে যেতে বাণী আওড়ান— সব মানুষের ভিতরেই নাকি ঈশ্বরের বাস? আরে সত্যিই যদি তাই হয়, তাহলে তো আমার ভিতরের সেই জন্মবিজ্ঞও ঈশ্বরেরই একটা অংশ… উফফ! কি লজিক খাড়া করলাম… কিন্তু! দাঁড়ান, দাঁড়ান। মনে একটা প্রশ্ন এসে হঠাত্‍‌ করে বেমক্কা গুঁতো মারল। দু’দিন আগে ইন্টারনেটে একটা আর্টিকল পড়ছিলাম। তার মূল বক্তব্যটি হল একজন ভারতীয় মহিলা কী কী করলে তাঁকে তাঁর প্রিয় আত্মীয়, সমাজ, নষ্ট মেয়ে বলে চিহ্নিত করে।


তা ঠিক কী কী করলে কখনও ফিসফিসে আবার কখনও হেঁড়ে গলায় চিত্‍‌কার করে সমাজ বলে, ও মেয়ে তোর জাত কোথায়? তোর চরিত্র কই? আবার একটা খুট খুট শব্দ… সেই জন্মবিজ্ঞ! সে বললে, ওরে বাবা এত কথা খরচ করিস কেন? রোস বাপু, আমিই বলে দিচ্ছি—-


তুই রাতের কাঁটা বারো ছুঁলে বাড়ি ফিরিস?তাও আবার ছোঁড়া থাকে একটা-দুটো?মেয়ে তোর কীসের এত গুমোর?তোর তো জাত-ই গেল! মেয়ে তুই খাটো পোশাক পরিস?তায় আবার ক্লাবে গিয়ে পার্টি করিস? মদ খাস ঢুকুঢুকু?গায়ে তোর লেগে থাকে ছাইয়ের গন্ধ?মেয়ে তোর কপালে যে লেখাই আছেগেছে তোর জাত-ধর্ম! পাত্র-পাত্রী কলামে ছবি দেখে বাঁধিয়েছিলিস দক্ষ-যজ্ঞ?এনেছিলিস ট্যাঁকে করে একপিস ব্যাটাছেলে?বলেছিলিস বে করলে তাকেই করবি!লাজ-লজ্জা কিচ্ছু রাখলি নে গো!ম্যাগো ছ্যা, তোর মরণ হয় না কো!

জন্মবিজ্ঞ আরও খানিকটা ছড়া কাটার মুডে ছিল… কিন্তু ততক্ষণে আমার তো মাথা ধরে স্যারিডন খাওয়ার জোগাড়! অগত্যা নিরুপায় হয়ে তাকে মিষ্টি গলায় অনুরোধ করলাম। আহা এবার থামই না, হল তো… সে চুপ করে গেল! আমি তো থ! এত সহজে মেনে নিল আমার কথা? হলটা কী? তা সে যা হল ভালোই হল। সারাটাদিন, যখন-তখন ওর এত জ্ঞানের ভার আমি আর নিতে পারি না। কিন্তু মনের মধ্যে বিজ্ঞ-র ছন্নছাড়া ছড়াটা সুড়সুড় করতে লাগল। মাঞ্জাকাটা ঘুড়ির মতোই অনেকগুলো ভাবনা ঢুঁ মারতে লাগল। সেই সব ছেঁড়া ছেঁড়া চিন্তার মাঝেই হাসি পেল খুব!

ভাবছেন, মেয়েটার মাথাটাই গেল! ও মা!উফফ..বড্ড বাড়াবাড়ি। কেন আমার হাসি পেতে পারে না? হাসি পেতেই পারে। আলবাত পারে। হাসি পায় তাদের উপর যাঁরা মহাপুরুষদের নাম নিয়ে ভাবে বিভোর হয়ে বলেন, সব মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস… ঈশ্বরের ইচ্ছা ছাড়া নাকি একটা পাতাও নড়বে না! তাই যদি হয়, তাহলে যে সব মেয়েরা রাত করে বাড়ি ফেরে ( তাঁকে নিয়ে কুত্‍‌সা ছড়ানোর আগে কি সেই মহামান্য লোকেরা ভেবেছেন তাদের বাড়িতে যে ছেলেটি পেয়িং গেস্ট হয়ে থাকে সেও রাত বিরেতে কাজ সেরে বিধ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফেরে। ঠিক তারই মতো মেয়েটিও হয়তো সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরছে! মেয়ে বলেই অমনি মনে হওয়া যে সে ফস্টি-নস্টি করে জাত খুইয়ে, বাবা-মায়ের মান বিকিয়ে ফিরছে!) তাদের মধ্যেও তাঁদের পরমপূজ্য ভগবান আছেন! ওমা কত সাহস, ভগবানকেই নষ্ট বলছেন যে তাঁরা। বোঝো কাণ্ড। সে তাঁরা সাহস দেখাতেই পারেন! নেই কাজ তো খই ভাজ। তবে আমার একটা কথা আছে… কাকিমা, আপনি যে সেদিন মাসিমাকে ডেকে বলছিলেন, দেখেছ রিনা বৌদি, দত্তবাড়ির মেয়েটা প্রায়দিনই রাত-বিরেতে বাড়ি ফেরে! তাও আবার এক একদিন এক একটা গাড়িতে… তা সেই মেয়েটিই যখন আপনার বাবুকে বিনি পয়সায় ইংরেজিটা দেখিয়ে দেয়, তখন লজ্জা করে না! মানছি, সে মদ খায়, সিগারেট ফোঁকে। তাতে আপনার কী? আপনার বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে মদ-বিড়ি খায়? আপনার বা আপনার বরের পয়সায় খায়? না তো? তাহলে আপনার গাত্রদাহটা কোথায়! আচ্ছা, আচ্ছা, বুঝেছি, সমস্যাটা সেখানে নয়, সমস্যাটা হল সে ছোট পোশাক পরে। তাই তো! চিন্তার ব্যাপার… আচ্ছা সেই পোশাকটা কি আপনার গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে কেনা হয়েছে? এটাও না! চিন্তাটা কোথায় কাকিমা? মেয়েটা রেপড হয়ে যাবে? তাহলে যে আপনার সুপুত্তুরটি রোজ রাতে প্রোজেক্টের নাম করে ডজন ডজন নীল ছবি দেখে তার বেলায়? চোখ কপালে উঠল নাকি! আপনার বাবু-র নামে এত্ত বড় কথা! ঠিকই তো! আপনার কচি খোকার সম্বন্ধে কতটুকুই বা জানি আমি? সত্যিই তো জানি না। কিন্তু আপনি কি দত্তবাড়ির মেয়েটার বায়োডেটার এনসাইক্লোপিডিয়া হয়ে বসে আছেন! নয় তো? অনেকদিন তো মুরুব্বিআনা করলেন! আর কেন! আপনাকে কে দায়িত্ব দিয়েছে কে নষ্ট মেয়ে, কেই বা ভ্রষ্ট, কে সতীসাধ্বী তা ঠিক করার? অবশ্য আপনাদের আর দোষ দিই কেন! সুবর্ণ আর সত্যবতীকেও তো নষ্ট মেয়ে হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে কী জানেন? আপনাদের মতো লোকের জন্যে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনাদের আসলে মজ্জায় মজ্জায় আগুন জ্বলে যখন দেখেন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে কয়েক ডজন মেয়ে নিজের ব্যক্তিত্বের জোরে এগিয়ে যাচ্ছে ঝড়ের গতিতে। আপনারা ভয় পান, পাছে এই ঝোড়ো মেয়েদের ডানার ঝাপটায় ভেঙে যায় ঘুন ধরে যাওয়া ‘সাবেক আগল’!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৪৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×