somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে আবিস্কার বাচিয়ে রাখছে হাজারো দুর্বল হৃদয়

২৩ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ব্যর্থতা একটি শেখার অভিজ্ঞতা। যে কখনো ব্যর্থ হয়নি, সে জীবনে কিছুই করেনি।”

এই সুন্দর উক্তিটির জনক Wilson Greatbatch (1919-2011) । নিউ ইয়র্কে ব্রিটিশ ইমিগ্র‍্যান্ট দম্পতি Warren and Charlotte Greatbatch এর ঘরে ১৯১৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন এই প্রচারবিমুখ বিজ্ঞানী।



Fig: Dr. Wilson Greatbatch with his circuit.

এক মিনিটে কতোকিছুই না হতে পারে। বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের জগতে এক মিনিটও অনেক গুরুত্ববহ। একটি স্ফুলিঙ্গ জন্ম দিতে পারে জীবন বদলে দেয়া আইডিয়ার, আবার এই ষাট সেকেন্ডই যথেষ্ট বিশাল ভুল করার জন্য।

কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে হয়তো দুটো বিষয়ই ঘটে যেতে পারে একসাথে। তা-ই ঘটেছিলো Dr. Wilson Greatbatch এর ক্ষেত্রে। ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ড. উইলসন ছিলেন University of Buffalo-র এসিসট্যান্ট প্রফেসর। তিনি এক মিনিট সময়ের মধ্যে এমন একটি ভুল করেছিলেন, যা তাকে জীবন রক্ষাকারী আবিস্কারকের আসনে বসিয়ে দিয়েছে। তার এই অসামান্য ভুল চিরতরে বদলে দিয়েছে কার্ডিওভাস্কুলার চিকিৎসা ব্যাবস্থা। ভুল থেকেই জন্ম নিয়েছিলো বিশ্বের প্রথম স্থাপনযোগ্য পেসমেকার।

সময়টা তখন ১৯৫৬ সাল। ড. উইলসন তার ব্যক্তিগত ল্যাবে একটি অসিলেটর নিয়ে কাজ করছিলেন। ফাস্ট হার্ট বিট রেকর্ড করার জন্য অসিলেটর তৈরীর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বেশ কয়েকদিন ধরেই। আজকের দিনটা ব্যাতিক্রম। তিনি কাজে কিছুতেই মনোযোগ বসাতে পারছিলেন না। তার ফলস্বরুপই কি না, তিনি ভুল করে বসলেন।

অসিলেটরের ট্রানজিস্টর বেসে দরকার ছিলো 10,000 ohm রেজিস্টর। তিনি তার রেজিস্টর বক্সের দিকে হাত বাড়ালেন। কালার কোডিং পড়তে ভুল করে ফেললেন এবং 10,000 ohm এর পরিবর্তে 1 mega ohm এর একটি রেজিস্টর তুলে নিলেন। যখন তিনি রেজিস্টরটি প্লাগ ইন করলেন, এটি 1.8 mili second পালস এবং ১ সেকেন্ড বিরতি দিয়ে “squeg” করতে শুরু করলো। এই কর্মযজ্ঞ চলাকালীন ট্রানজিস্টরটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো এবং কোনো কারেন্ট ড্র করলোনা। ড. উইলসন অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলেন। তিনি বুঝতেই পারছিলেন না কি ঘটেছে। হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে যখন আসল কাহিনী দেখলেন, তার বুঝতে বাকি রইলো না তিনি কি আবিস্কার করে ফেলেছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ বুঝতে পেরছিলেন যে, এই মেকানিজমে মানুষের হার্ট চালনা করা সক্ষম।

পেস মেকার তখনকার সময়ে নতুন ছিলোনা। ড. উইলসনের আবিস্কারের আগে থেকেই পেইস মেকারের ব্যাবহার ছিলো। কিন্তু, সেগুলো মানুষের দেহে স্থাপনযোগ্য ছিলোনা। এক্সটার্নাল পাওয়ার সোর্স যেমন- পাওয়ার লাইন, ব্যাটারি কিংবা ভ্যাকুয়াম টিউব থেকে পেস মেকারে পাওয়ার সাপ্লাই দিতে হতো। আকারেও ছিলো অনেক বড়। আর তাই যেসব রোগীর দেহে পেসমেকার বসানো হতো তারা নড়াচড়া করতে পারতোনা।

ড. উইলসন তার এই মেকানিজমের কথা জানালেন বেশ কয়েকজন কার্ডিওভাস্কুলার সার্জনকে। কেউই তার কথা বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তার এই কৌশল কাজে লাগাতে ইচ্ছুক সার্জন পাওয়া দুস্কর হয়ে পড়লো। Buffalo's Veteran's Hospital এর সার্জারী বিভাগের প্রধান Dr. Wiliam Chardack প্রথম ড. উইলসনের স্থাপনযোগ্য পেসমেকার দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি তাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।



Fig: First Implantable Pacemaker in the history


১৯৫৮ সালের ৭ই মে Veterans Hospital-এ Dr. Chardack এবং আরেকজন সার্জন Dr. Andrew Gage একটি কুকুরের হার্টের সাথে পেসমেকারের তার সংযুক্ত করলেন। অবিশ্বাস্যভাবে, কুকুরের হার্ট ডিভাইসটির সাথে একই ছন্দে তাল মেলাতে লাগলো। তিনজন একে অপরের দিকে তাকালেন। Dr.Chardack সেই মুহুর্তের কথা স্মরণ করে তার অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন এভাবে, “Well, I’ll be damned.”


Fig: Patient with greatbatch’s pacemaker.

এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। একদিন ড. উইলসন তার ল্যাবরেটরিতে বসে ডায়রী লিখছেন। তিনি বসে বসে সেই অভূতপূর্ব দিনের কথা ভাবছিলেন আর ডায়রীর সাদা পাতায় খচখচ করে লিখে যাচ্ছিলেন,

“আমার নিজের তৈরী ২ কিউবিক ইঞ্চির একটি যন্ত্র একটি জীবন্ত হার্টকে নিয়ন্ত্রণ করছে দেখে আমার দেহে যে শিহরণ তৈরী হয়েছিলো, আমার সন্দেহ হয় আর কোনো কাজ আমাকে এভাবে উদ্দীপিত করবে কি না!”

দুই বছর নানা এক্সপেরিমেন্ট চালানোর পর, ১৯৬০ সালে বিজ্ঞানীত্রয় অনুভব করলেন, মানুষের দেহে এটা স্থাপন করে সুফল পাওয়া সম্ভব। তারা চারজন রোগী পেলেন যাদের টার্মিনাল হার্ট ডিজিজ ছিলো এবং যেকোনো ধরণের চিকিৎসা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলো। সেই চারজন ব্যাক্তির দেহে স্থাপনের মাধ্যমেই বর্তমান আধুনিক পেসমেকার এর যাত্রা শুরু হয়েছিলো। ৪ জনের মধ্যে ৩ জন এক বছরের মতো এবং ১ জন আরো বেশি সময় ধরে সুস্থভাবে জীবন যাপন করেছিলেন।


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:১৪
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৩৯

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

ছবিঃ আমার তোলা।

আজকে সাত রোজা।
সময় আসলে অনেক দ্রুত যায়। গতকাল সুরভি আর ফারাজাকে নিয়ে গিয়েছিলাম শপিং করতে। কারন আমি জানি, ১৫ রোজার পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×