somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দাদাভাই, ছাগলের রশিটা না আমি এভাবে ছেড়ে দিয়েছিলাম! B-) ( ব্যাখ্যা ও উদাহরণসহ একটি বেপুক জ্ঞানী পোস্ট! )

১৪ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে কিছু মজার গল্প করব আপনাদের সাথে। এগুলো সবই বাস্তবে ঘটেছে। গল্পগুলো বুঝার জন্য কিছুটা কল্পনার আশ্রয় নিতে হবে, মানে নিজেকে সেই জায়গায় কল্পনা করে নিবেন আর কি!



আমার জীবনের একটা রুটিন হচ্ছে প্রতি ঈদে আমাকে দাদাবাড়ি যেতে হবে। সারা বছর ঢাকাতে থাকলেও ঈদের সময় দাদাবাড়ি যাওয়াটা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক। দাদাবাড়ি যেতে অবশ্য খারাপও লাগে না, গ্রামে ঈদ করাতেও মজা আছে, যারা গ্রামে যান তারা জানবেন। আমার দাদাভাই হাইপার টেনশনের রোগী, মাঝে মাঝে তার মাথা ব্যাথা থেকে শুরু করে নানান রকম উপসর্গ দেখা দেয়, আর সেটা নিয়ে সারাবাড়িতে কেমন যেন একটা উৎসব উৎসব ভাব! উৎসব বলেছি বলে অবাক লাগছে? বুঝিয়ে বলছি তাহলে আর অবাক লাগবে না। অসুস্থ দাদাভাইকে মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়! আত্মীয়স্বজন সবাই তাকে দেখতে আসে, আমার সব ফুপুরা আসে। পুরো বাড়ি মানুষ দিয়ে ভর্তি। কেউ কেউ হাত পায়ে তেল মালিশ করছে, কেউ কুরআন পড়ছে, আবার কেউ কেউ সুর করে কান্নাকাটি করছে। ছোট বেলায় আমি একবার আম্মুকে লুকিয়ে জিগ্যেস করেছিলাম, "আম্মু দাদাভাই অসুস্থ আর বড় ফুপু গান গাইছে কেন?" X(( আম্মু আমার মুখ চেপে ধরলেন আর বললেন, "চুপ চুপ! আরে তারা কাদছে, গান গাইছে না!" আমাকে কি আর জোর করে চুপ করানো যায়! আমি বললাম, "কাঁদলে গানের মত লাগে কেন?" X(( এরপরে কি মানুষ শান্তি মত কাদতে পারে? :P আমার কথা শুনে আশে পাশের আরো অনেকেই জোরে হাসাহাসি শুরু করে দিল। =p~ আর ফুপু বেচারী করুন একটা ভাব নিয়ে তার কান্না চালু রাখার কঠিন চেষ্টা করে যেতে লাগলেন!



ঈদে দাদা বাড়িতে গরু কুরবানি দেয়া হয়। দাদাভাই গরুর মাংস খেলে ক্ষতি হবে, তাই কে একজন পরামর্শ দিল গরুর সাথে দুইটা খাসি কুরবানি দেয়া হোক। খাসির মাংস খেলে নাকি হাইপার টেনশন রোগীদের কোন সমস্যা হয় না! B-) যে কথা সেই কাজ, ওইদিনই আমি আর দাদাভাই বাজার থেকে একটা খাসি কিনে আনলাম। আমার তখন নতুন চাকরি! সারাদিন ছাগল চরাই। B-)



ওইদিন বিকেলে আমি মানে ছাগলের রাখাল, ছাগল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। পুকুর পাড়ের কাছে একটা কুকুর আমার খুব সামনে চলে আসল। আমি ভাবলাম কুকুরটা ছাগলটাকে খেতে এসেছে! :#> আমি ভয়ে ছাগলের রশি ছেড়ে দিলাম। আর ছাগল ভো দৌড়। :( পুকুর পাড়ে কিছু লোক বসে আড্ডা দিচ্ছিল তারা ছাগলটাকে পালাতে দেখে দৌড়ে ধরে আনল অনেক দূর থেকে।



পরদিন আমি আর দাদাভাই গেলাম আরেকটা ছাগল কিনে আনতে। ছাগল কিনে আমি আর দাদাভাই হেটে বাড়ি ফিরছি। সেই পুকুর ঘাটের সামনে আসার পরে আমার হঠাৎ মনে পড়ল যে দাদাভাইকে আগেরদিনের কাহিনী বলা হয়নি। আমি দাদাভাইকে পুরো ঘটনা বিস্তারিত বলে যেতে লাগলাম। কিন্তু দাদাভাই আমার মত একজন বিশিষ্ট মানুষের কথা না শুনে পাশের আরেকজনের সাথে কথা বলছিল! X(( এদিকে আমার গল্প বলা প্রায় শেষ, দেখলাম দাদাভাই পুরোটা বুঝতে পারেনি। ভাবলাম দাদাভাইকে উদাহরণ সহ বুঝানো দরকার, উদাহরণ না দিলে আজকাল বড় মানুষগুলো কিছুই বুঝতে পারে না! /:)



আমি ছোট হলেও অনেক ধৈর্যশীল মানুষ! আবার বুঝাতে শুরু করলাম আর এবার একেবারে উদাহরণসহ! এক জায়গাতে এসে বললাম, "আমি না ছাগলের রশি ঠিক এইভাবে ছেড়ে দিয়েছিলাম।" বলার সাথে সাথে এবারো হাতের রশি ছেড়ে দিলাম। B-) আর ছাগলটার মাথায়ও অনেক বুদ্ধি ছিল, সে আমার দাদাভাইকে উদাহরণ দেয়ার জন্য আগের দিনের ছাগলটার মত দৌড় লাগাল। :P দাদাভাই কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন! তারপরে চিৎকার দিলেন যাতে কেউ ছাগলটাকে ধরে আনে। ধরে আনার পরে দাদাভাই আমাকে বললেন, "দাদাভাই, মুখেই তো বলছিলে ছাগলটাকে ছেড়ে দিলে কেন?" আমার বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর, "আপনিই তো বুঝতেছিলেন না, এই জন্যই তো এভাবে বুঝাতে হল!" X(( দাদাভাই কি বলবেন খুজে পেলেন না, অসহায়ের মত আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন! পাঠক ভাইয়া আপুরা, আপনারাই বলুন, এই কথার পরে আর কিছু বলার থাকে? :P

ছোটবেলার ঘটনা নিয়ে আগে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন।

ছোটবেলায় আমার কাছের মানুষগুলোর উপর করা আমার কিছু নির্মম অত্যাচার!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৫৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×