somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশিক সরকার শুভ (আবীর)
আমি আশিক। প্রচন্ড স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। একাধারে অনেক কিছু হবার ইচ্ছে।খুব আত্মকেন্দ্রিক একজন । অনেক কথা কারো সাথে তাই বলা হয়ে ওঠেনা। তাই এখানে আসা। যা কিছু মনে আসে, তার মধ্য থেকেই সবার সাথে শেয়ার করা.. এইতো.. আর কিছু বলার নেই...

একা

৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তার বিয়ের দিন আমি তার বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলাম। সাথে আমার বেশ কজন বন্ধুবান্ধব ছিলো। তার সাথে আমার সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবই ওদের সামনেই বলতে গেলে।স্বাভাবিকভাবেই তারা আমাকে সঙ্গ দিলো। হাটতে হাটতে গল্প করছিলাম আড্ডা দিচ্ছিলাম ঠিকই, কিন্তু আমার ভেতরটা বারবার ঘেমে যাচ্ছিলো। রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতে যত তার বাসার কাছাকাছি আসছি, ততই মনে হচ্ছে আমার চোখ গরম হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। একটু পরেই গলে বেরিয়ে যাবে। আর কখনোই তাকে দেখা হবেনা..

তার বাসার সামনে একটি মসজিদ ছিল। একদম বাসার সাথেই। তার ঘর থেকে দু পা ফেললেই মসজিদটা। তার বাসায় যখন গিয়ে পৌছুলাম, দেখলাম মসজিদের সামনের খালি জায়গাটায় কিছু দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। বেশ কিছু মানুষ সেখানে বসে মোনাজাত করছে। এক দুজন নতুন যারা আসছে তারাও যোগ দিচ্ছে সে মোনাজাতে। আমরাও যোগ দিলাম। আমার বন্ধুবান্ধবসহ আমি বসে গেলাম।

মোনাজাত ধরার জন্য হাত তুলেছি ঠিকই। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কোন মোনাজাত করা হয়নি আমার। হাত দুটো শুধু মুখের সামনে ধরে রেখেছি আর ভাবছি, কি দোয়া করব? সে ভাল থাকুক? কোথায় ভাল থাকবে? আরেকজনের বিছানায়? সেখানে তো সে যেতে চায় নি। তাহলে এসব দোয়া করে লাভটা কি হচ্ছে? কি হবে?

বিয়ের আগে তার সাথে আমার মাত্র একদিনের জন্যে দেখা হয়েছিলো। তাও তার ইচ্ছেতেই। আমার খুব বিদঘুটে চেহারার কারনে কখনোই চাইনি তার সাথে দেখা করতে। কিন্তু সে দেখা করেই ছেড়েছিলো। নাছোড়বান্দা হয়ে জেকে ধরেছিলো সে। ভেবেছিলাম এরপরে হয়তো আমার প্রতি তার আগ্রহ হারিয়ে যাবে। হয়েছিলো উল্টোটা।

বিয়ের দিনও আমি তাকে ভালমত দেখতে পারিনি।রাস্তা থেকে গাড়ির গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখার সুযোগ হয়েছিলো অল্প কিছুক্ষনের জন্যে।সে এমনিতেও সুন্দর। বিয়ের সাজগোজে আরো অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো তাকে। তবে এই সৌন্দর্যটা আমাকে সেদিন মুগ্ধ করতে পারেনি। তার পাশে নতুন যে লোকটা বসে আছে, তাকে মুগ্ধ করতে পেরেছে।

সেদিন যখন বাসায় ফিরেছি ওইদিন প্রায় চার ঘন্টার মত ঘরের দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে দিয়ে ঝড়ের মত কেঁদেছি। আমার ফোনের পাসওয়ার্ড ছিল তার নামে। কি যে কষ্ট হয়েছিলো সেটা চেঞ্জ করতে! তার দেয়া ম্যাসেজগুলো ডিলিট করতে গিয়ে মনে হয়েছে শরীর থেকে একটি একটি করে রগ কেটে ফেলছি।

সে আরেকজনের বিছানায় আছে এখন, এটি ভাবলেই মনে হচ্ছিলো কেউ আমার হৃদপিন্ডটা ধরে চিবিয়ে খাচ্ছে। কি যে কষ্ট হয়েছিলো সেদিন! কতটা যে কষ্ট হচ্ছিলো!! সেটা বোঝানোর মত কোন ভাষা পৃথিবীতে আসেনি কখনো।

প্রথম প্রেম ছিলো। সেজন্যেই হয়তো অমন হয়েছে। এই প্রেমটার পর থেকে আমি কোন মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারিনি। সম্পর্কে জড়াতে পারিনি বললে ভুল হবে, কোন মেয়েকেই আমি সেভাবে ফিল করতে পারিনি। ফলস্বরুপ সম্পর্কগুলো টেকেনি।

কারো উপড় আসলে খুব বেশীমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়া ঠিক না। আপনি যখন অন্য কারো চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখবেন, তার হাত দিয়ে ভেজা কবুতর ছুয়ে দেখতে চাইবেন, আপনি পারবেন। এই সময়টুকু আপনার অসম্ভব ভালো কাটবে। মনে হবে সৃষ্টিকর্তা বুঝি জান্নাতের একটি ভাঙ্গা টুকরো আপনাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। এতটা ভাল কাটবে যে , রাতের বেলায় সে আপনার সাথে কথা বলতে বলতে যখন ফোন না কেটে দিয়েই ঘুমিয়ে যাবে, সেটি টের পেয়েও আপনি ফোন কেটে দেবেন না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিশ্বাস যে নিচ্ছে সেটি শুনেও আপনি আরো ঘন্টাখানেক পার করে ফেলবেন।

নিজের ইচ্ছেতেই হোক,কিংবা প্রকৃতির খামখেয়ালীপনার কারনেই হোক, কোন কারনে যখন মানুষটা হারিয়ে যাবে ,তখন সে নিজে হারানোর পাশাপাশি আপনার ভেতর থেকে আপনাকে নিয়ে যাবে। সেদিন আপনি ঝড়ের মত করে কাঁদবেন। পুরো দুনিয়াশুদ্ধ তখন ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে হবে।তার ফোন নম্বরটা আর ছবিগুলো ডিলিট করতে গিয়ে মনে হবে কাটাচামচ দিয়ে নিজের হাত খুচিয়ে রক্তাক্ত করছেন। সে অন্য কারো বিছানায় আছে ভাবলেই মনে হবে এক সেকেন্ডের মধ্যে কেন মারা যাচ্ছিনা!! হৃদপিন্ডে কামড় বসার কষ্ট খুব ভয়াবহ!

পৃথিবীতে যারা পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে ভালবেসেছে, এদের বেশীরভাগই বিজয়ী হতে পারেনি। তারা হেরে গিয়েছে। ঝড়ের মত করে কাঁদতে কাঁদতেই তাদের জীবন থেকে অনেকগুলো শীত বসন্ত বিয়োগ হয়ে গিয়েছে। সেই সাথে পরিবার বন্ধুবান্ধবদের মধ্য থেকেও তাদের জীবন থেকে বিয়োগ হয়েছে । এক পর্যায়ে কোথাও আর থাকেনা কেউ...

চার্লি চ্যাপলিন ঠিকই বলেছিলেন, আপনি যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদবেন, সে কখনো তা দেখে হাসবে না। আপনার সাথে সাথে সেও কাঁদবে।

আমরা আসলে একাই আসি পৃথিবীতে। একাই থাকি। মাঝখানে যাদের সাথে আমাদের দেখা হয়, তারাও একা। কেউ বোঝে আর কেউ বুঝতে পারেনা।

যারা বুঝতে পারেনা, এরা মাথার চুল ঠিকঠাক আছে কিনা দেখার জন্যেই প্রতিবার আয়নার সামনে দাড়িয়েছে। কান্না করার সময় কখনো দাঁড়ায়নি...

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৫২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×