সন্ত্রাসের দল হামাস । ধর্মের নামে সন্ত্রাস করে--বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে। এরাও তো নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি। কথা গুলো শেখ হাসিনার ভাষণের সাথে বেশ মিলে। কিন্তু ওবামা কিংবা শেখ হাসিনা মুখে যা কিছু বলেন--সেটা ক্ষমতার লোভে। তাদের ভিতরে ভিন্ন মানুষ বাস করেন। বুশ কিংবা নেতানিয়াহুর মত মুখোশহীন নেতা তারা নন ।
কথাগুলো সাম্রাজ্যবাদী বুশের পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক হাসান-উল-হক ইনুর মুখে বেশ মানায়। আফগান প্রেক্ষাপট থেকেই সমাজতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু ইসলামি জঙ্গিবাদ।আমেরিকার কারণে নয়, বরং সোভিয়েত-কমিউনিস্টদের আগ্রাসন ঠেকাতেই আফগান জঙ্গিদের উদ্ভব। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই, পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সেমিনার শুরু হয় ইনুর জঙ্গি-সন্ত্রাস বিষয়ক আলাপন দিয়ে--অথবা নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মুখ "আল্লাহর ওয়াস্তে" বন্ধ করতে চায় সেই জঙ্গিবাদের অজুহাত তুলে। বাংলার মানুষ ভালোবেসে বিপুল ভোটেই নির্বাচিত করেছেন ইনুকে--নাকি?
আমরা মুখোশধারী সমাজ পতিতাবৃত্তির নিন্দা করি, আত্মহননের নিন্দা করি । এখানেই আমাদের কর্তব্যের ইতি ঘটে। এর বাইরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গবেষক সমাজ এর পিছনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, মনস্ত্বাত্বিক প্রেক্ষাপট ও কারণ সন্ধান করেন । কারণ মানুষ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। শহীদ জননীর ছেলে রুমি কেন যুদ্ধে গিয়ে প্রকারন্তে আত্মহননের পথ বেছে নেয়, ক্ষুদিরাম কেন নিরাপরাধ ব্রিটিশকে হত্যা করে, কিংবা একটা "যৌক্তিক" প্রতিশোধ স্পৃহা থেকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি কেন বিহারী নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিলেন--সেগুলোর পাল্টা ন্যারেটিভগুলো জাতীয়তাবাদের কারণে কঠোরভাবে অনুপস্থিত ।
সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসী জাতীয় শব্দমালা নিয়ে একটা মোহ, আকর্ষণ, বা নেশার মাঝে থাকেন --তারা মূলত পশ্চিমের কাছ থেকেই ধারাবিবরণী শোনেন ।
কারণ পশ্চিমারা সভ্য--তাদের কথা বা শত্রু জ্ঞান করার মাঝে একটা বৈজ্ঞানিক বৈধতা আছে। এর পিছে মূল আসামী ইসলাম ধর্ম। আমেরিকার বিপুল জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে ৯/১১ ঘটেছিল কারণ সন্ত্রাসীরা আমেরিকাতে ইসলামি শরীয়া প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল "বোমা মেরে"। অথচ কি অদ্ভুত, আজ থেকে ৪০ বছর আগেও কেউ "মুসলিম" আর "সন্ত্রাসী" শব্দ দুটো গুলিয়ে ফেলতো না--যদিও তারা ১৫০০ বছর ধরে আছে।
ইজরায়েলিরা যতনা ধার্মিক, তার চাইতে বেশি জাতীয়তাবাদী। ইজরায়েল যতনা ধর্ম তাড়িত হয়ে মানুষ হত্যা করে, তার চাইতে শত্রু জ্ঞান করে মানুষ হত্যা করে। সেখানে সমাজতন্ত্রের প্রকাশ্য শত্রু হলো ধর্ম ও পুঁজিবাদ । কিন্তু জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত ইনু ইফতার মাহফিলে দোয়া করে, মিলাদে যায়, জুম্মার নামাযে গিয়ে খুতবাও দেয়। আওয়ামীলীগের এককালের শত্রু জাসদ এখন বন্ধু --কারণ তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার সাধারণ অস্ত্র হিসেবে "জঙ্গিবাদকে" আবিষ্কার করতে পেরেছেন--যেটা তাদের দু'দলের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিকে বাস্তবায়ন করতে্।
এই ভাষ্যমতে সরকারের বাইরে যারা আছে তারা সবাই কোন না কোন ভাবে জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক--যেটাকে রুখতে হলে মূলত ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। বিসমিল্লা জাতীয় শব্দ মুছতে হবে। এই জন্য সমাজতান্ত্রিক (যদিও উচু গলায় দাবি করা হয় অরাজনৈতিক) ছাত্রজনতাকে (লাকি আকতার) ডেকে আনা হয়েছিল শাহবাগে। যুদ্ধাপরাধ যখন ধর্মের ভিত্তিতে হয়, তখন ধর্ম ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আদর্শিকভাবে লড়াই করার জন্য সমাজতান্ত্রিক কমরেড সেনাদের খুব কার্যকরভাবে সেখানে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে ভোটাধিকার শুধু মাত্র ভারত সরকারের--ভারত সরকারের ভোটেই ৫ ফেব্রুয়ারি একটা সমাজতান্ত্রিক-সেক্যুলার ব্যবস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। যদিও ভারতে নিজের জনগণের পথভ্রষ্টতা বিষয়ে --মোদিকে নির্বাচিত করা বিষয়ে নিন্দার চাইতে প্রশংসার ঢেউ উঠছে। মোদি এখন মুসলিমদের ঈদ ফ্যাশন ।
যারা বাংলার মাটিতে মুসলিম নামধারী ডাকাত, খুনে, টাউট বাটপারের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন--তারা হয়তো আজ ইজরায়েলকেই সমর্থন দিচ্ছেন। আরব-ইসলাম-মুসলিমকে সভ্যতার জন্য বিপজ্জনক-হুমকি মনে করা অগণিত মানুষ বাংলাদেশে আছেন--যারা ভুক্তভোগী হয়ে তুমুল ঘৃণার চাষ করেন । সে সুবাদে তারাও চাইছেন গাজার সন্ত্রাসীরা নির্মূল হোক। জয়তু গণতান্ত্রিক, আধুনিক ইজরায়েল! আমরা ভারতবর্ষ থেকে মুসলিম সন্ত্রাসী কীটদের সরাতে পারেনি--তোমরা পেরেছো।
আমি শুধু বিস্মিত হয়ে দেখলাম সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ১৪ দল হামাসের ধর্ম ভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদের বদলে তাদের সাথে সংহতি জানাচ্ছে। গাজায় সাধারণ মানুষ মরছে সেটার দায় তো যুদ্ধবাজ সন্ত্রাসী দল হামাসের --তারা ইজরায়েলি হানাদার বাহিনীর সাথে শান্তি কমিটি গঠন করলে এতগুলো নারী-শিশুকে মরতে হতোনা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫১