প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিষ্ঠা লগ্নে ১৯৯৯ সালের দিকে আব্দুল গাফফার চৌধুরী 'একুশ শতকের বটতলায়' নামে প্রথম আলোতে কলাম লিখতেন। তসলিমা নাসরিনকে দেশান্তরি হবার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে খুবই ভদ্রভাষায় লিখেছিলেন,
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় ইসলামী শরীয়তের একটা যুগোপযোগী পরিবর্তন দরকার।
আওয়ামী মনারা কখনই সাহস করে বলেনা
ইসলাম এ যুগে অচল, সেটা বাতিল, নিষিদ্ধ করতে হবে। অথবা রক্ত, যুদ্ধ, সন্ত্রাসের ধর্ম ইসলামকে নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
তারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভিন্নভাবে জানায় তাদের রাগ-ক্ষোভের কথা গুলো যাতে সাপ মরে লাঠিও ভাঙ্গেনা। তারা ইসলাম ভালোবাসেন আবার এই ইসলামের কারণেই বিব্রতবোধ করেন । সাঈদ খোকনরা মসজিদে গিয়ে মসজিদের মোল্লাকে ভাড়া করে মসজিদে মুসল্লিদের দিয়ে মুনাজাতে ভোটও দাবি করেন ।
যদি বলি তাদের পবিত্র কোরআনে লেখা আছে ব্যভিচার করলে সপাং সপাং চাবুক মারার কথা--এরা তখনই জিব কেটে ছি ছি করে অস্বীকার করবে। পিতৃপুরুষের ধর্ম কলঙ্ক রেখে ঢেকে রাখার চেষ্টা করবে।
তাদের নিজেদের রাজনৈতিক, জাগতিক, জাতীয়তাবাদী স্বার্থ-সুবিধামত ধর্মের বিভিন্ন ব্যাখ্যা-বিবৃতি দাড় করানোর প্রবল চেষ্টা দেখা যায়।
১. ব্যাঙ্কের সুদ হারাম নয়। হারাম সুদ হলো ডক্টর ইউনুসের চক্রবৃদ্ধি সুদ। ইসলামি চিন্তাবিদরা এ বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেন। হারাম হলো রিবা, সুদ আর রিবা এক নয়। বরং সুদকে হারাম ঘোষণা করে ইসলামী ব্যাংকিং এর মত জঘন্য ধরনের ধর্ম ব্যবসা গজিয়ে উঠেছে। মোল্লারা সঠিক ইসলাম জানেনা, তারা ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেনা, শুধু ব্যবসা করে । আমরাই সঠিক ইসলাম জানি এবং মানি ।
২. ঘুষ নেয়া অবৈধ কিছুনা । কাজের গতি বাড়ানোর জন্য এধরনের স্পিড মানির দরকার আছে। প্রশাসনের কাজে গতি আনতে ঘুষ থাকবে । কালো টাকা অবৈধ কিছুনা, এটি অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে, অবদান রাখছে।
৩. যাকাত বলে কিছু নেই। আওয়ামী অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাতের মতে যাকাত হলো জঘন্য ধরণের মৌলবাদী অর্থনীতি। জনগণ সরকারকে যে ট্যাক্স দেয় সেটিই যাকাত । কাজেই বাড়তি হিসেব করে যাকাত দেবার কোন প্রয়োজন নেই ।
৪. কোনটা হালাল-হারাম সেটা নির্ধারণ করবে আদালত । আদালত যেটা সঠিক মনে করবে সেটাই মানতে ও পালন করতে হবে । এর বাইরে ফতোয়া বলে কিছু নেই। মুফতি বলে কিছু নেই। ইসলামী শরীয়ত বলে কিছু নেই। ওগুলো সব ধর্ম ব্যবসায়ীদের বানোয়াট এবং ব্যবসা।
৫. সব অালেম-মাওলানা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দেয় । মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মের নামে উগ্রতার চাষাবাদ হয়, জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে । নামায পড়ানো, মিলাদের জন্য, কুরবানির জন্য মাওলানা মাদ্রাসার করকার নাই । ওটা যে কেও করতে পারে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি বা ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপককে দিয়েও এসব করানো যায়। হুজুররা হলো দেশের বোঝা, অনুৎপাদনশীল জঙ্গল, জঙ্গিবাদ আর মৌলবাদ ছাড়া জাতিকে কিছু দেয়না ।আধুনিক-বিজ্ঞানসম্মতভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইসলাম নিয়ে গবেষণা করেনা্ । ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা কেউ দেয়না। সঠিক ব্যাখ্যা জানারও দরকার নাই । কারণ
৬. ইসলাম মানে শান্তি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম থাকবে মনের মাঝে, মসজিদ-মন্দিরের কোঠায়। ইসলাম শুড রেস্ট ইন পিস । ইসলাম কোন প্রকার হত্যাকান্ড সমর্থন করেনা, ইসলাম কোন যুদ্ধ সমর্থন করেনা। ইসলাম বলে এক গালে চড় দিলে আরেক গাল পেতে দিতে। কোরআনে লেখা আছে ধৈর্য ধরতে, যুদ্ধ না করতে ।কারো গায়ে ফুল টোকা দেয়া ইসলাম সমর্থন করেনা । ইসলাম পবিত্র জিনিস, ঘরের বাইরে আনলে সেটা অপবিত্র হয়ে যাবে।
৭. ইসলাম একটি ধর্ম নিরপেক্ষ ধর্ম। সব ধর্ম সমান । ভাল কাজ করলে সবাই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলিম স্বর্গে যাবে ।তাই ধর্ম একটা পালন করলেই হলো, আল্লাহ, গড, ভগবান একজনকে ডাকলেই হলো। কোরআনে আছে লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়াদিন । তোমার ধর্ম তোমার কাছে, আমার বাপের শেখানো ধর্ম আমার কাছে। যার যার মত, তার তার ধর্ম পালন করাটাই ইসলামের মূল শিক্ষা।
৮. সকল মুসলিম ভাই-ভাই একটি অযৌক্তিক ও সাম্প্রদায়িক ধারণা। এর পরিবর্তে হবে পুব-পশ্চিম বাঙালি আমরা ভাই-ভাই । পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী দেশ তার, কারণ তারা মুসলিম । পাকিস্তানের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা খারাপ নয়, শুধু মুসলিমরাই খারাপ, ভারত বিদ্বেষী, বাংলাদেশ বিদ্বেষী, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিদ্বেষী। পৃথিবীর সকল রক্তপাত আর যুদ্ধের জন্য মুসলিমরাই দায়ী, ধর্মের নামে মুসলিমরাই মানুষ হত্যা করে । মুসলিমরাই পশ্চিমাদের ইসলাম সম্পর্কে বাজে কথা লেখা সুযোগ করে দিচ্ছে । মুসলিমদের পাপেই পশ্চিমারা ইরাকে হামলা করে, ইরানে অবরোধ দেয়, আফগানিস্তানে বোমা ফেলে মানুষ হত্যা করার সুযোগ পায় । মুসলিমরাই উগ্র, পবিত্র ধর্ম ইসলাম নিয়ে ব্যবসা-বাড়াবাড়ি করার কারণেই মুসলিমদের আজকে এ দুর্দশা ।
৯. ধর্ম কোনভাবেই রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারবেনা, কিন্তু ধর্ম বা জাতীয় উপাসনালয় গুলো চলবে সেক্যুলার রাজনীতির প্রভাব ও হুকুমদারিতে । হুজুরদের দিয়ে মসজিদে আওয়ামী নেতাদের জন্য ভোট চাওয়া যাবে, মুনাজাত করা যাবে । ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার । ইসলাম একটি ক্ষতিকর, সাম্প্রদায়িক ধর্ম বলেই ইসলামের উপস্থিতি অমুসলিমদের জন্য বৈষম্যমূলক ও ক্ষতিকর হবে --সেটা পাকিস্তান ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ই দেখা গিয়েছে। কাজেই রাষ্ট্র যন্ত্রে কোনভাবেই ইসলাম সহ্য করা হবেনা, কারণ ইসলামের অপবিত্র স্পর্শে বাংলাদেশ পাকিস্তান বা জঙ্গি রাষ্ট্র হয়ে যায়।
১০. জামায়াত-শিবিরের সবাই কাফের-মুরতাদ, তাদের পিছনে নামায পড়া যাবেনা, বরং কাদিয়ানীরাই আসল মুসলিম। কাদিয়ানীদের ধর্মে জিহাদ নিষিদ্ধ, তারাই শান্তি প্রিয় মুসলিম । কে মুসলিম আর কে অমুসলিম সেটা আল্লাহ নির্ধারণ করবে । এটি নিয়ে কথা বলা মানেই আল্লাহর কাজে হাত দেয়া । কেউ ভুল/অন্যায় করলে তার বিচার আল্লাহ করবে, সেই বিচার বা শাস্তি আমরা দিতে পারিনা। অন্যায়ের শাস্তি এ দুনিয়াতে দিতে পারিনা। বিচার সব ঔ দুনিয়াতে হবে।