somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হজ্জ্ব দুর্ঘটনার দিনে লতিফ সিদ্দিকিকে মনে পড়ে

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলামের মৌলবাদী পরিভাষায় 'তাকদির' বা ভাগ্য বলে একটা ব্যাপারে বিশ্বাস স্থাপনটাকে খুবই জরুরি ধরা হয়। বিজ্ঞানীরাও আবার কিছুদিন আগে অসহায়ভাবে বললেন

"ক্যান্সার হওয়াটা অনেকটা দুভার্গ্য।"

খোদ আমেরিকার মত 'সভ্যতম' দেশে সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুর ২য় তম প্রধান কারণ । তো আমেরিকাতে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়লে সেটাকে দুর্ভাগ্য বলেই জ্ঞান করবেন । যদিও চালক মদ্যপ ছিল । পশ্চিমের সভ্য দেশগুলোর বাইরে কোথাও দুর্ঘটনা হলে আমরা বলি সেটা হত্যাকান্ড । ক্ষোভবশত, আবেগ বশত । পথচারী যদি জীবনের ঝুকি নিয়ে দৌড়ে মহাসড়ক পার হতে গিয়ে মারা যায়, সেটাও কিন্তু চালকের দোষ । লাশ দেখলে ফাঁসি দেবার জন্য আমরা হিসহিসিয়ে উঠি । অসহায় চালকের বদলে আমরা বলিনা

"নগর পিতা নগরের পথচারীদের পারাপারের নিরাপদ ব্যবস্থা রাখেননি বলেই এই মৃত্যু, নগর পিতার বিচার চাই।"

পুলিশ যখন দাঙ্গা রুখতে/মিছিল ঠেকাতে/বিনা উস্কানিতে ফার্গুসনে বা টাঙ্গাইলে গুলি করে মানুষ মারে, কিংবা ক্রস ফায়ার করে, আমরা তাকে হত্যাকান্ড বলতে কেউ কেউ দ্বিধান্বিত হই । ২০০৬ এর পর ২০১৫, বেশ অনেক বছরের ব্যবধানে মক্কায় দুর্ঘটনা হলো। নিন্দুকেরা বিভিন্নভাবে সরব হলেন, ব্যঙ্গ, ধিক্কার জানালেন।

১. অদৃশ্য শয়তারকে পাথর মারতে গিয়ে মানুষের মৃত্যু
২. সৌদীদের কুকর্মের কারণে মৃত্যু
৩. সৌদীদের অব্যবস্থাপনার কারণে মৃত্যু


নিন্দুকেরা হাজিদের মানুষ হিসেবে করুণা করেন, কিন্তু হজ্জ্ব প্রথার ব্যাপারে তাদের গুরুতর আপত্তি আছে ।তাই কোনভাবেই এটাকে দুর্ভাগ্য বলা যাবেনা। এটা হত্যাকান্ড । অথবা মানুষের মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে যারা নেয় তারা বরং অসুস্থ । ঠিক আমেরিকাতে সড়ক দুর্ঘটনায় সপরিবারে নিহত হবার মত দুর্ঘটনা না এটা । এত ঘৃণার চাষ-বাস করে ওহাবীদের দেশে গিয়ে ইনু-মেননের হজ্জ্ব করে আসাটা আমার কাছে বিশাল বিস্ময়।

ষ্ট্যাম্পিডে কি মানুষ মরেনা? স্ট্যাপিডের জন্য জনতার বিবেক, ধৈর্য্যের কী কোন দায় নেই?


জাকাত নিতে গিয়ে মানুষেরা নিজেদের মাঝে মারামারি, হুড়োহুড়ি করে মরলে, তার দোষটা পড়ে যাকাতদাতার । আমাদের বিবেকটা এমনি । ভিন্নভাবেও দেখা যায়।

কসাই খানাতে, থ্যাঙ্কস গিভিং এ, বিয়ের দাওয়াতে পশু জবাই করা মানবিক-স্বাভাবিক, কিন্তু উতসবের নামে পশু জবাই বর্ববরতা।



আপনার মনের গভীরে সৌদী বিদ্বেষের ডালপালা গুলো খুব 'নায্যভাবে' বেড়ে, পুষ্ঠ হয়ে পশু জবাইকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আপনি কল্পনাতে পশু জবাইকারীদের মানুষ জবাইকারী হিসেবে দেখতে শুরু করেন । শয়তানকে পাথর মারা আপনাকে সেই মধ্যযুগীয় বর্বরতার কথা, তালেবানদের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আপনি তবুও জোরে সোরে নিজেকে 'সাচ্চা' মুসলিম দাবি করতে থাকেন। আপনাকে মুরতাদ বললে 'রাজাকার' গালি শোনার মত তড়িতাহত হন । আপনি তবুও বিশ্বাসী ।

ভাল মন্দের মাপকাঠি হয়ে উঠে আপনার নিজের বিবেক । আপনি কুরআন, পুরান, ইসলামকে সরিয়ে রেখে অথবা তুলনা করে ন্যায়-ন্যায় নির্ধারণ করেন। তারপরেও আপনার টুপি পরাটা জরুরি, মিলাদের গোলাপজল ছিটা উপভোগ করেন, গো হত্যা করে মাংসে তৃপ্তির কামড় বসান, ঈদ মোবারক বলে মানুষদে জড়িয়েও ধরেন ।

সাত বছরের বাচ্চাটি যখন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেল, তখন

আপনি হয়তো চিতকার করে সৃষ্টাকে গালি দিয়েছিলেন, আপনি কল্পিত সৃষ্টায় ঠেকায় পড়ে বিশ্বাস করেন বলেই হয়তো এই অনুযোগ দেখানোর অধিকার চর্চা করেন । মৌলবাদের ধর্ম ইসলাম বলে পৃথিবীটা ক্ষুদ্র, তুচ্ছ, খুবই ক্ষণস্থায়ী। মানুষের জীবন-মৃত্যু লিখিত। এটা বিশ্বাসীদের একটা গোষ্ঠীকে ভীষণ ব্যথিত করে । তারা পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায়না।

মৌলবাদ বিষয়ে আপনার ক্ষোভগুলো জমতে থাকে, একসময় নিজেকে মুসলিম ভেবে লজ্জিতবোধ করতে শুরু করেন । নিজেকে ধর্মাচার থেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন। আপনি হয়ে পড়েন ঈদ মোবারক সর্বস্ব বিশ্বাসী।

ইনু-মেননের মত ভন্ডামিটা লতিফ সিদ্দিকি করেননি, করতে পারেননি বলে তাকে রোষানলে পুড়তে হয়েছে। ২০ লাখ হাজির মাঝে বিভিন্ন লেভেলের পাপী আছে, মোনাফেকও আছে। তারা পাপমুক্তির জন্য যায়, হজ্জ্বে গিয়ে যদি কারো হজ্জ্ব কবুল না হয় তার হজ্জ্বের মূল্য কী? কিংবা বৃদ্ধ বয়সে যিনি শারীরিকভাবে সক্ষম নন, তার উপর তো হজ্জ্ব ফরয থাকেনা।

সৌদিরা যদি তাদের বন্ধু আমেরিকানদের ডেকে এনেও হজ্জ্ব ব্যবস্থাপনা করায়, তাও ২০ লাখ লোক সামলানো যাবে আমি বিশ্বাস করিনা । এটা এক মহাযজ্ঞ। আমেরিকা প্রযুক্তি আপনাকে বেঁচে থাকার গেরান্টি দিবেনা, দিতে পারেও না। মৌলবাদীরা মনে করে এহরাম বাধা অবস্থায় মরলে হয়তো সে সেই অবস্থায় পরকালে উঠবে।পাপমুক্তির এর চাইতে কী ভাল পন্থা হতে পারে।

আমরা বরং সেই ধর্মানুভূতিকে ধিক্কার দেই । আমরা মৃত্যুকে ভয় পাই, ঘৃণা করি ।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৫০
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×