আরবের নবীর যুগে মনে হয় দিনপঞ্জি ছিলনা । মধ্যযুগ, মধ্যপ্রাচ্য । এখন মানুষ আধুনিক হয়েছে, দিন তারিখের হিসেব ভালো রাখতে পারে । প্রয়োজন, পরিপ্রেক্ষিত ও বাস্তবতা বদলিয়েছে। জন্ম দিন তারিখের হিসেব রাখে, পালন করে । জিলাপি, গোলাপজল, আগরবাতির তাই রমরমা ধর্ম ব্যবসা । ধর্ম নগদ পয়সা আনে, পয়সা ছড়ায় । ভক্তির বিনিময়ে পয়সা, লাল সালুর বিনিময়ে পয়সা ।
বাঙালির ভক্তিটা এককালে চরম ছিল । প্রণাম করতে গিয়ে 'তোমার পরে ঠেকাই মাথা' থেকে শুরু করে পা ছুয়ে ভক্তি দেখানোর যুগ মাত্র পার হয়ে এসেছে। এখন বেশ আধুনিক, তাই ভক্তি প্রকাশের আমূল পরিবর্তন এসেছে। ভগবান বুদ্ধ, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ, ভগবান যীশুর জন্মদিবসের মত পর্যাপ্ত ভক্তিরস পেতে ব্যর্থ হচ্ছে মধ্যযুগের আরব থেকে উঠে আসা বাঙালি মুসলিম।তাদের দরকার নিরক্ষর মানুষ মুহম্মদের জন্মদিবস পালন ।
ইস নবীর যদি একটা ছবি থাকতো ? মিলাদ ব্যবসায়ীদের আবেগ দেখলে মনে হয় সাক্ষাতে নবীকে পেলে ভক্তিতে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে দিত। ইমাম হাসানের শাহাদাত দিবসের স্মরণে চাবকে নিজের পিঠের ছাল না তুলতে পারলে কীসের ভক্তি? কেউ বলেনা, এসব হলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি । ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি বলতে একালে ভি্ন্ন কিছু বুঝায়। যীশু চিরকুমার ছিলেন বলে সেই ভক্তিতে লাখ লাখ ফাদার-নান নিজের উপর অত্যাচার করে কৌমার্যব্রত পালন করেন আর তাদের অনুসারীরা ব্যভিচারের সাগরে ভেসে যায়।
ধর্মকে বদলাতেই হবে । আমি ধার্মিক, কিন্তু অন্যের পছন্দমত নিজের ধর্মের সংস্কার-সার্বজনীনতা চাই। তখন আবার সূরা কাফেরুনের যুক্তি খাটেনা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অন্যদের দেখাতে চাই দেখ আমার ধর্ম কত উদার, ডাকাতি করলে কিছু বলেনা, ড্রোন থেকে বোমা মারলে কিছু বলেনা, প্রকৃত ধার্মিকরা গেরিলা যুদ্ধ করেনা, দেশ-জমি লুটে নিলে কিছুই করতে বলেনা। শান্তির ধর্ম। যীশু তো যুদ্ধ করেননি, এক গালে চড় খেয়ে আরেক গাল পেতে দিয়েছেন। কিন্তু তার হয়ে ক্রুসেডার মিলিটারি যুদ্ধ-দাঙ্গা-গণগত্যা চালিয়ে যাচ্ছে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ।
নিজের ধর্মকে 'সাম্প্রদায়িকতার' কলঙ্ক থেকে বাচাতে ঘটা করে আর সবার মতন জন্ম-ঈদ করতে হবে ।এরপর বলবে নবীর ছবি আকা হোক, পুজা না করলেই হলো । শান্তির ধর্ম শিল্প-সংস্কৃতি প্রসারের পক্ষে । নজরুলের ইসলামি গান গুলো মসজিদে হারমোনিয়াম, তবলা যোগেই শুরু করুন, জলসা, কাওয়ালি জনপ্রিয় করুন ।প্রতিটি ধর্মেই সঙ্গীত অপরিহার্য, পবিত্র। আপনাকে প্রমাণ করতেই হবে আপনার ধর্ম সভ্যতার পক্ষে, আর দশটা ধর্মের মতই ধর্ম । ধর্ম মানুষের সৃষ্টি, মানুষের জন্য ধর্ম বলেই মানুষের স্বার্থ-সুবিধা মত ধর্মকে সংস্কার করতে হয়।ধর্মের জন্য মানুষ হলে, ধর্ম ঠিক থাকে, বরং মানুষ ধর্মের দাবি অনুযায়ী বদলায়।
জন্ম-ঈদের রিচ্যুয়ালটা সার্বজনীন করা দরকার । মিলাদ পড়তে পড়তে কাল্পনিক নবীর ছবির সামনে সবাই ভক্তি নিয়ে উঠে দাড়াবে। ধর্মের ষোল কলা পূর্ণ হবে । কথিত জন্ম ঈদে লোকজ সংস্কতি মেনে সেমাই করবেন, ঈদের মাঠে নবীর কথা ভেবে দু'রাকাত সু্ন্নত পড়বেন । খুব বর্বরতা না ভাবলে এই দিনে ভেড়া, ছাগলও জবাই করে কাঙালি ভোজ দিতে পারেন ।
মাগরিবের নামায কমিয়ে তিন রাকাত না পড়ে, চার রাকাতই পড়া ভালো দেখায় । এক রাকাত বেশি পড়াতে পূণ্যও বেশি হলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭