(শিরোনাম কৃতজ্ঞতা: মানস চৌধুরী)
এ যে ফেইক প্রোফাইল। 'ফেইক'ই তো ! মুখের ছবি নেই । গাছ-পালা লতা পাতা আর ফুল পাখি দিয়ে আড়াল করে থাকা অসত কেউ হয়তো । নামটাও অদ্ভুতুড়ে ধরনের ফেইক, এমন নাম বাঙালির হতে পারেনা । মুখধারী জনতা সতর্কভাবে মুখোশধারী এড়িয়ে চলে । কেউ কেউ ফেইক বোতামে চেপে দিয়ে নালিশ করে ফেইসবুকের কাছে । ফলে আমার ৯ বছরের পুরনো ফেইসবুক প্রোফাইল একদিন উধাও হয়ে যায়। হারিয়ে যায় হাজার মুখবিহীন নিরীহ ছবি ।
বহু চেষ্টা করে প্রোফাইল ফিরিয়ে আনি, উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ।হাতে গোণা পুরনো বন্ধুরা সব নিস্ক্রিয় । আমার ফেইসবুকের দেয়াল জুড়ে এখন সব অপরিচিত মানুষের মুখ, তাদের সুখ-দুঃখের গল্প ।অনাগ্রহ নিয়ে দেখি। পুরনো ফিল্মের নেগেটিভ থেকে প্রিন্ট করে যেন আমার মুখের সামনে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ভিন্ন মানুষের মুখ যতসব অপ্রত্যাশিত মুখ। নিজের মুখ মানুষকে দেখিয়ে যদি কখনও বিরক্তি উতপাদন হয়, তাই ভাবি তা না দেখানোই ভালো । ভীষণ রকম একটা অস্বস্তি থেকে বেচে যাওয়া যায় ।
অনেকটা জোর করেই যেন মানুষ চিতকার করে বলে "দেখো আমার মুখ, দেখো আমায়, আমার মুখভঙ্গী"। নারী, পুরুষ বা যুগলবন্দী ছবি । বাধ্য করে । অথবা একদম একই দশা-কাল-স্থানের ছবি দশবার করে তোলা, সব বিনা সম্পাদনায় চলে যাচ্ছে ফেইসবুকের পাতায়। একই মানুষের মুখ দেখে দেখে কী ক্লান্তি লাগে? আমার দশ বছর বয়সে একটা ছবি আছে । তারপর কেটে যায় ১৫ টি বছর ।মাঝে কোন ছবি নেই, স্মৃতি নেই আমার ।
কথিত ফটোগ্রাফি তার সমস্ত বৈচিত্র্য হারিয়ে যেন সেলফির মত অদ্ভুত তারকাটায় আটকে অনন্তকাল ঝুলছে । মুখ সর্বস্ব ছবিই এখন বেশ উপজীব্য । বাকিংহ্যাম প্যালেসের সামনে দাড়ালে কেউ দৌড়ে এসে হাসিমুখে ছবি তুলে দিলো । সেটা স্মৃতি মনে করে কাগজের এলবামেই তুলে রাখা আছে । কখনও মনে হয়নি পরিচিতি-অপরিচিত জনতার সামনে ছবি গুলো তুলে ধরতে পারতাম । প্রযুক্তিই প্রয়োজন, সংস্কার তৈরি করে, অনেকটা বাধ্যও করে আর সবাইকে তাদের মত করেই জীবন যাপন করতে ।
মাঝে মাঝে শখ হয় । আহা আমার যদি একটা অবিতর্কিত, বন্ধুসুলভ, পছন্দনীয় মুখ থাকতো, মুখোশ খুলে মুখটা দেখিয়ে হাফ ছেড়ে বলতাম "আমি ফেইক নই", তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত একজন । অথবা শুধু অস্তিত্বটুকু জানান দিতে বহুদূর থেকে ড্রোন দিয়ে তোলা ছবি । আমি বাস্তব, সত্য, আসল মানুষ তোমাদের মতই । মুখের ছবি নেই বলে আমায় অবাস্তব ভেবোনা ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৪৮