somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার শিবির অভিজ্ঞতা

০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার কলেজ জীবনের একটি ছোট্ট ঘটনা আপনাদের জানানোর ইচ্ছে পোষণ করছি। যে ঘটনা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে, আমাকে আরো ভাবতে ও জানতে বাধ্য করেছে।
৯৫ সালে চট্টগ্রাম পাবলিক স্কুল থেকে পাস করা একপাল ভর্তি হলাম চট্টগাম কলেজে। সবাই সায়েন্স থেকে পাস করা, একমাত্র শাকিল ছাড়া বাকি সবাই কলেজের সায়েন্স গ্রুপে গেলাম। শাকিল গেল আর্টস গ্রুপে।
কলেজের প্রথম দিনে ভর্তির যাবতীয় ফর্মালিটিজ সেরে আমরা পাবলিক স্কুল গ্রুপ সামনের ক্যাম্পাসের গাছের নিচে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, আকাংখিত একটি দিন- কিছু আকাংখিত মুহুর্ত, এখন আর স্কুল স্টুডেন্ট নই- কলেজ স্টুডেন্ট। ঠিক তখনিই একজন এসে বলল বড়ভাই ডাকছেন আপনাদের। গেলাম দু তিনজন বড়ভাইয়ের কাছে। তিনি বললেন গাছের নিচে ওভাবে আড্ডা মারা যাবেনা। শাকিল মৃদু প্রতিবাদ করেছিল সাথে সাথে, বলেছিলো- আমরাতো কিছু করছিনা, শুধুই আড্ডা দিচ্ছি।
এভাবে কলেজ লাইফের শুরুতেই ধাক্কা খেলাম, পদে পদে শিবিরের বাড়াবাড়ি। উপায় নেই বলে মেনে নিলাম তাদের বাড়াবাড়িকে। সব সেকশনে থাকত নতুন শিবির সদস্যরা। তারা আবার প্রতিনিয়ত দাওয়াতে আসত আর ক্লাসের সাধারন ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যপারে গোপন রিপোর্ট করত। নিজেকে খুব অসহায় লাগত আমারই ঐসব ক্লাসমেটদের সামনে।
শাকিল আর্টস গ্রুপে যাওয়ায় তার অনেক মেয়ে বন্ধু, আর্টস গ্রুপের ৯০ ভাগই ছিল মেয়ে। শাকিল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও পরিপাটি ছেলে। সবসময় ওয়াকম্যানে ইংলিশ গান শুনত।
শিবিরের আয়োজনে নবীন বরন উতসব, আসবে পাঞ্জেরী গ্রুপ, শোনানো হবে হামদ-নাত, ইসলামী সংগীত। তাই আমরা ভাবলাম প্রোগ্রাম না দেখে বরং ঐ সময়টা ফয়'স লেকে বা অন্য কোথাও যাব। সবাই রেডী কিনতু হঠাত শাকিল উধাও, অপেক্ষা করছিলাম তার জন্য, ভাবছিলাম হয়তো টয়লেটে। তারপরই একজন দৌড়ে এসে জানাল যে, কয়েকজন শাকিলকে শেরেবাংলা হলে ধরে নিয়ে গিয়েছে। আমরা বুঝতে পারলাম কি হতে চলছে। সাথে সাথেই ফোন দিলাম বন্ধু রনিকে। তার বাবা পুলিশ অফিসার। কিন্তু না তার বাবা অন্য জেলায় জরুরী কাজে। অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে গেলাম শিবিরের এক বড় ভাইয়ের কাছে। অনুনয় করলাম, তিনি বল্লেন 'দেখছি আমি'। আমরা হলের বাইরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি সেই ৩ তলার রুমের পর্দা ফেলানো জানালার দিকে। কিছুক্ষন পর বড় ভাই আসলেন এবং বললেন 'তার বিরুদ্ধে কিছু ডিসিপ্লিনারী অভিযোগ আছে সম্ভবত। তাই তার বন্ধুরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, তোমরা অপেক্ষা কর। সে চলে আসবে। তিনি চলে গেলেন তার কাজে। বুঝতে পারলাম কি হচ্ছে। পাঞ্জেরীর ইসলামী সংগীত শুনতে পাচ্ছিলাম কিন্তু শুনতে পাচ্ছিলামনা আমার বন্ধুর চিতকার। একসময় সে বেরিয়ে আসল, কলেজের ইউনিফর্ম সাদা শার্ট ছেড়া, চুল আলুথালু, চোখ, নাক, মুখ ফুলে লাল। বেরিয়ে এসে শুধু বল্ল আমাকে একটা বেবীট্যাক্সি যোগাড় করে দে, বাসায় যাব, খুব ক্লান্ত। লজ্জায়,ক্ষোভে,দুঃখে সে সেদিন কিছুই বলতে পারেনি। পরে শুনেছি তাকে জেরা করেছে বড় ভাইরা কিন্তু মেরেছে তারই ক্লাসমেটরা ...ইচ্ছেমত। ব্যাগ খুজে পেয়েছিল কইয়েকটি ইংলিশ গানের ক্যাসেট। ওয়াকম্যান আর ক্যাসেটগুলো পাড়িয়ে ভেংগে তারপর ফেরত দিয়েছে। আরো বলেছে এরপর থেকে যদি আর কোন মেয়ের সাথে তাকে দেখে তাহলে তার কপালে দুঃখ আছে। তারা কৌতুক করে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল কোন মেয়েটাকে সে বিয়ে করতে চায়, এত মেয়ে বন্ধু কেন, কয়টা বিয়ে সে করতে চায় ইত্যাদি। আমি আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাই এ কারনে যে সেদিন আমার বন্ধু শাকিল ফেরত এসেছিল, অনেকে ফেরত আসেনি।

(বিঃ দ্রঃ নিপুপাওয়ারফুলের ০৪ ঠা জানুয়ারির একটা পোস্টে জিজ্ঞেস করেছিলাম সেদিন যদি আমার বন্ধু মরে যেত সেকি শহীদ হত? উত্তর পাইনি। )
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০০৮ দুপুর ১:২৪
১৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×