somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

( বিলম্বিত ) রিভিউ - গ্রহচারী , সায়েন্স ফিকশান সংকলন

২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উপভোগ্য সায়েন্স ফিকশান গল্পের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো গল্পগুলো শুধু গল্প হয়ে ওঠে না ,ভবিষ্যত নিয়ে লেখকের ভাবনা, স্বপ্ন, ভয় এর টুকরো টুকরো ছবি হয়ে ওঠে, যান্ত্রিকতা মানবিকতার সংঘর্ষ নিয়ে গাল্পিকের ভাবনার স্পষ্ট স্বাক্ষর হয়ে ওঠে , বিজ্ঞান এর প্রয়োগসীমা ,ব্যবহার সীমা নিয়ে লেখকের দার্শনিক অবস্থানের সাক্ষী হয়ে ওঠে ।

১৬ গল্পের গ্রহচারী মুহম্মদ জায়েদুল আলম এর প্রথম সায়েন্স ফিকশান গল্প সংকলন ।
প্রথম বই হিসেবে জাফর ইকবাল এর প্রভাব বিষয়টি ভুলে গিয়ে আমি বইটির সুন্দর মলাট ওল্টাতে চাই (মলাটটিতেও জাফর ইকবাল এর গন্ধ পাওয়া যায়!) ।
প্রতিটি গল্পের নিজস্ব একটি ছবি আছে (প্রচ্ছদ বলা যায় কি?),গল্পগুলোর সাথে ছবিগুলোর সাযুয্য ছিল সামগ্রিক ভাবে অলংকলণ ভালো লেগেছে ।

এবারে গল্প বিষয়ে ঢোকা যাক । চুলচেরা বিশ্লেষণের পথে না হেঁটে এক কথায় বলে দেওয়া যায় গল্প গুলো উপভোগ্য ।কিছু গল্প চমক জাগানিয়া,কিছু গল্প ভীতি জাগানিয়া। বিজ্ঞানের ছাত্র বিজ্ঞান অবমাননা করেন নি, সায়েন্স ফিকশানই লিখেছেন, ফ্যান্টাসী নয় । বিজ্ঞান তাই বইটিতে যেমন স্পষ্ট,লেখকের বিজ্ঞানের প্রয়োগ ভাবনা গুলোও দৃশ্যমান ।

( ঠ্যাং এর উপর পা দিয়ে বসে থাকব , রোবোট এসে ঘরের কাজ শেষ করে
পা টিপে দিবে এই চিন্তা ভালো । মাথা মোটা রোবোট কেউ ই চাইবো না,
আবার সরু মাথার সূক্ষ্ম বুদ্ধির রোবোট এর হাতে বন্দী হতেও নিশ্চয় ই চাইবো না? তাই বিজ্ঞান এর প্রয়োগ সীমা, ব্যবহার নিয়ে চিন্তার গভীর প্রয়োজন । এই কারণে গল্পের পাশা পাশি আমি মেসেজ এর দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখি ! কে জানে হয়ত কয়েকশ বছর পর রোবোট এর হাতে বন্দি কোন মানুষ হয়ত পড়বে আর ভাববে কিছু মানুষ ছিল যারা এই করুণ অবস্থার কথা ভেবেছিল, তা নিয়ে লিখেছিলোও! )

এক এক করে বলা যাক
গ্রহচারী গল্প দিয়ে শুরু বইটি খুব সাদামাটা একটি গল্প , একটু নির্মোহ ভাবে বললে বলব দুর্বল গল্প ।

সময় পরিভ্রমণের অসাধারণ আগ্রোহদ্দীপক বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা দূত একটি চমৎকার প্লটের গল্প ।

ঈশ্বর গল্প টি চমৎকার মানুষের দায়বদ্ধতার প্রতি শ্লেষাত্মক প্রশ্ন রেখে যায়।

বইয়ের সেরা গল্প সম্ভবত কিউপিড , চমক জাগানিয়া প্লটের গল্পটি সমকালের , এখনকার ।

অনেকটাই বিভৎস এবং পুরোপুরি অমানবিক নামের আমি NC 446:552 গল্পটি যন্ত্রে মানবিকতার কথা বলে যায় , চমৎকার একটি গল্প ।

ডিজিটালে টাল মাটাল সময়ের অধিভাসীদের জন্য ডিজিটাইজড গল্প স্বর্গ । গল্পটি বিজ্ঞান এর আধুনিকায়নের করুণ পরিণতির কথা বলে যায় , গল্পের নামকরণ ও নাড়া দেয়ার মত , বিজ্ঞান আমাদের যে স্বর্গ উপহার দিচ্ছে তা কি শেষ পর্যন্ত নরক হয়ে যাবে ? ধিক আধুনিক বলে কি আমরা দীর্ঘশ্বাস ফেলব না?

ফরম্যাট , শক্তিশালী মেসেজের দুর্বল হাতে আঁকা ছবি বলে মনে হয়েছে ।

অন্যের আয়নায় নিজেকে দেখতে কেমন লাগে? ওয়ার অব দ্যা ওয়ার্ল্ডস প্যাটার্নের কাহিনীর বিপরীত চিত্রায়ন অপসভ্যতা । সুন্দর গল্প ।

প্রজেক্ট অতিমানব যা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিল তা পারে নি , আরো বিস্তৃত আয়তন আশা করে এই গল্প , আরো সময় দাবি করে । গল্পটি ভবিষ্যতে লেখক নতুন করে যত্ন নিয়ে লিখুন এই দাবি জানিয়ে রাখলাম ।

স্বার্থপর গল্পটি কপোট্রনিক সুখ দুঃখের স্পিন অফ বলে মনে হল , গল্পটি অন্য এক পয়েণ্ট অব ভিউ থেকে লেখা বলে ভালো লেগেছে ।

স্মৃতির জাদুঘর থ্রিল মেশানো ভালো একটি গল্প , আহাম্মক আরেকটি মেসেজ বাহী চমক জাগানিয়া গল্প ।

প্রশ্ন নববিংশ শতাব্দীর গল্প, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটের বিচারে
প্রশ্নের যথার্থতার সাথে মাথা নাড়লেও উত্তর হয়ত আমাদের হাতে থাকবে না!

ভুল সময় , টাইম ট্রাভেলিং নিয়ে লেখা । গল্পের চমক হিসেবে ছিলো হিটলার , রাজনৈতিক বক্তব্য ছিলো ,আরো ছিল অলটারনেট রিয়েলিটির চমক । অলটারনেট রিয়েলিটি আমার খুব প্রিয় বিষয় তাই দুর্বল বর্ণনার গল্পটিও আমার ভালোলাগার তালিকায় থাকছে ।

বংশধর একটি গভীর মেসেজের অগভীর প্লটের চমৎকার গল্প । প্রশ্ন রেখে যায় ভবিষ্যতে আমরা সন্তান নেব কিভাবে?

জিনেটিক ভালোবাসা আরেকটি চমৎকার গল্প , যন্ত্র আর মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর গল্প ।

৮০ টাকা মূল্যের বইটি আপনার সায়েন্স ফিকশান সংগ্রহ শালাকে সমৃদ্ধ করবে জোর গলায় বলতে পারি ।

বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে এই লেখকের সামনের বই
গুলোর জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করব , এবং লেখার উন্নতি কামনা করছি।


ঠ্যাং নোট:

অনেক কথাই বলেছি, রাখি নি তেমন কিছুই তবু যে রিভিউ টি লিখতে পারলাম! অ্যালগোরিদম-ই ভালবাসা, অ্যালগোরিদমেই ভালবাসা !

অন্যান্য রিভিউ

বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ঘটনা । সায়েন্স ফিকশান প্রেমীদের অবশ্য পাঠ্য!
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১০ রাত ১০:৫৯
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×