somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রঙের দুনিয়ায় রঙবাজি

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আচ্ছা আপনি বাবলগাম বা ক্লোভার অথবা মোস এই ধরণের রঙের নাম কি শুনেছেন ? খুব সম্ভবত না । আশ্চর্য হলেও সত্যি যে আপনি না শুনলেও আপনার সহধর্মিনী অথবা বেশীর ভাগ মেয়েরা এই সব রঙের সাথে বেশ ভালো ভাবে পরিচিত । যেখানে আপনি সর্বোচ্চ ছয় থেকে সাতটি রঙের নাম বলতে পারবেন সেখানে একজন নারী প্রায় ত্রিশটির উপরে রঙের নাম বলতে পারবেন । বিজ্ঞানীদের মতে নারীদের এই অসাধারণ ক্ষমতা তাদের চোখের আলাদা গড়নের আইরিশের জন্য । ক্ষমতা না অক্ষমতা সেটা বলা মুশকিল হলেও আপনার আর আপনার স্ত্রীর রঙ নিয়ে মতভেদের কারণ অবশ্যই এটা । এটা অন্তত নিশ্চিত করে বলা যায় ।


আমাদের চারপাশের নানা ধরণের রঙ আর ব্যবহার নিয়ে আমরা খুব একটা চিন্তা করি না । করার খুব একটা কারণও যে আছে ঠিক তা না । তবে ভাবতে পারেন । আসুন দেখি আশেপাশের এই রঙিন দুনিয়াতে আপনি কিভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন ।
কর্পোরেট ব্র্যান্ডিং বা প্রচার এর ক্ষেত্রে রঙ একটা বিশাল ব্যাপার । আপনি যখন রাস্তায় হাটতে হাটতে দূরে কোন একটা বিলবোর্ডে নীল রঙের একটা ফুলের পাপড়ি দেখেন বুজতে পারেন এটা গ্রামীনফোন । আপনাকে এই সামান্য বোঝানোর জন্য গ্রামীণফোনকে কি পরিমান ব্র্যান্ড মার্কেটিং এ পয়সা ঢালতে হয়েছে তা যদি একবার জানতেন । এটা শুধু গ্রামীনফোনের ক্ষেত্রে নয় আপনি যখন কমলা রঙ দেখেন ভাবতে থাকেন বাংলালিংক বা কটকটে লাল মানে রবি । আসলে আপনার মনে রঙের খেলাটা আপনাকে বলে দেয় কোনটা কোন ব্র্যান্ড । এইবার একবার আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুনতো । দেখবেন প্রায় সব কটি রঙ কোন না কোন ব্র্যান্ড দখল করে রেখেছে । আপনি কখনোই কমলা বা লাল রঙের কিছু দেখবেন না গ্রামীনফোনের কোন প্রচার মাধ্যমে । ঠিক তেমনটি অন্যদের ক্ষেত্রেও । এর মানে এরা নিজেদের মধ্যে রঙ নিয়ে এক অন্যরকম যুদ্ধে মেতে আছে । আর কর্পোরেট ভাষায় এর নাম কালার ব্র্যান্ডিং ।


আপনি আরো আশ্চর্য হবেন এই জেনে যে আপনার মনের ভাব পর্যন্ত এই রঙ বদলে দিতে পারে । বিশ্বাস হচ্ছে না ? পিঙ্ক রঙটা যখন আপানি কল্পনা করেন তখন প্রথম আপনার মনে কি ভেসে উঠে ? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী বিষয়ক কিছু একটা । আপনি খুব কম পুরুষ মানুষকে দেখবেন পিঙ্ক রঙের শার্ট পড়তে । তবে ব্যাতিক্রম যে নেই তা নয় । তবে সেই বাতিক্রমের ভিন্ন কারণ থাকতে পারে । আপনি যখন সবুজ রঙের কিছু দেখেন ভেবে নেন পরিবেশের কথা বা কেমন যেন সফল একটা ব্যাপার আপনার মনের মাঝে কাজ করে । হালকা নীল রঙের কিছু দেখলেই আপনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন । লাল রঙের যে কোন কিছুকে রক্তের নাম দিয়ে দেন । কি আশ্চর্য ভাবে আমরা আমাদের পতাকার দুটি রঙকে দুই রকম মানে করে দিলাম । সবুজকে বাংলাদেশ আর লালকে সূর্য বা শক্তির প্রতীক । এখন বলুন আপনি কোনোভাবে সবুজ রঙকে কি শক্তির প্রতীক ভাবতে পারবেন ? তাহলে বুজতেই পারছেন প্রত্যেকটা রঙ আলাদাভাবে আপনার মাথার ভেতর আলাদা সংঘা তৈরী করে রেখেছে ।


আমি জানি না ঠিক কি কারণে শান্তির রঙ সাদা । কোন ভাবেই শান্তির প্রতীক কালো বা অন্য কোন রঙের হবে এটা আশা করা মুশকিল । যেখানে খুব ছোটবেলা থেকেই আপনাকে সাদা বা শুভ্র সাদা মানে পরিষ্কার বা পরিচ্ছন্ন শিখানো হয়েছে সেখানে আপনাকে যদি কালো রঙের ভাত পরিবেশন করা হয় তবে আপনি তা খুব সম্ভবত ভালো ভাবে নেবেন না । আমাদের বেশীর ভাগ খাবার- দাবারই কালো রঙটা এড়িয়ে চলে । শুধুমাত্র রঙের কারণে অনেক বড় বড় কোম্পানি এখনো টিকে আছে । একটা গবেষণায় দেখা যায় পুরুষ আর মহিলাদের পছন্দের রঙের তালিকায় হালকা নীল রঙ বেশ জনপ্রিয় । আর ঠিক এই কারণেই আপনি অনেক ক্ষেত্রে কোন কিছু বিবেচনা না করেই এই রঙের যে কোন পণ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন ।


যেহেতু আমি আগেই বলেছি চোখের আইরিশের পার্থককের কারণে আমাদের রঙ নিয়ে এই মতভেদ । আরো মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের নিজেদের শরীরের রঙের পার্থক্য আমাদের নিজেদের পছন্দ অপছন্দ নির্ধারণ করে । বিশ্বাস হচ্ছে না । আসুন তাহলে জানি কিভাবে ?
আমাদের শরীরের রঙের কারণ মেলানিন নামের একজাতীয় পদার্থ যা আমাদের চামড়ার নিচে থাকে । এই মেলানিনের কারণেই আমরা কেউ ফর্সা কেউবা শ্যামলা । আপনি খেয়াল করলে দেখবেন শ্যামলা বা শ্যাম বর্ণের মানুষজন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কটকটে রঙের জিনিস পত্র বা কাপড় চোপড় পছন্দ করে । আর যাদের ত্বক তুলনামূলক ফর্সা তারা প্রায়ই হালকা রঙের জিনিস পত্র পছন্দ করে থাকে । এর কারণ ত্বকের মেলানিনের পার্থককের কারণে রঙ চেনার ধরনও ভিন্ন আমাদের মাঝে । আপনি যেটা নীল ভাবছেন অন্য কেও সেটাকে নীল নাও ভাবতে পারে । আর তার পছন্দের নীল আপনার কাছে পুরোপুরি নীল নাও হতে পারে ।


রাজনীতির মাঠেও রঙের তুলি সমানে চলে । পৃথিবীর বেশীর ভাগ রাজনৈতিক দলের রঙ নীল আর লালের মধ্যে সীমাবদ্ধ । নীল সাধারণত ডেমোক্র্যাট বা লিবারেল জাতীয় দলের রঙ আর কংসারভেটিভ বা কট্টর পন্থী দলের রঙ লাল । আপনি বাইরের দেশ গুলোতে গ্রীন পার্টি বা সবুজ রঙের কোন দল দেখবেন না বা দেখলেও এরা সফল কোন দল হয়ে উঠতে পারিনি । এবং এটা শুধুমাত্র রঙের কারণে । কারণ সবুজ রঙ পরিবেশবাদীদের রঙ হতে পারে কিন্তু বিশ্বাস এর রঙ হয়তো নীল । একটা জিনিস কি লক্ষ্য করেছেন ? ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের পরিচিত মুজিব কোটের রঙ ইদানিং হালকা নীল হয়ে যাচ্ছে । প্রধানমন্ত্রী পুত্র থেকে শুরু করে অনেক মন্ত্রী আমলারা এখন হালকা নীল রঙের মুজিব কোট পড়েন । দেখতে ভালোই লাগে । অন্তত কালো রঙের চেয়ে ভালো ।


এবার আসুন একটা বাস্তব নিরীক্ষা করি । আপনার টিভিতে আপনি যেকোন একটা রঙ কমিয়ে দিন । ধরুন নীল রঙটা বেশ খানিকটা কমিয়ে দিলেন । এরপর কাওকে না বলে অপেক্ষা করুন । দেখবেন আপনার স্ত্রী বা কন্যা খুব সহজে এই পার্থক্য ধরে ফেলবে। আপনি বা আপনার ছেলে কেউই কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য টের পাবেন না । এটা আপনার বা আমার দোষ না । আমরা সবাই এভাবেই তৈরী ।আমাদের চোখের রেটিনার গড়নের কারণে এমনটা হয় । যেমন ধরুন পুরুষদের চোখের রেটিনা বা আইরিশ এমন ভাবে তৈরী যাতে দূরের খুব দ্রুত কোন কিছু সহজে দেখতে পারে । আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যা কাছের খুব ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাতি কোন কিছু দেখার মতো বিষয় । এবার আপনি নিশ্চয় বুজতে পারছেন কেন আপনার স্ত্রী আপনার ছোট খাটো ভুল গুলো খুব সহজে বের করে ফেলতে পারে । আর আপনি কেন অনেক দূরের জিনিস অনেকটা না দেখেও আন্দাজ করে ফেলতে পারেন । আশা করি বুজতে পারছেন । আর বুজতে পারলে বোঝাতেও পারবেন । জীবনটা অনেক সহজ হবে হয়তো এতে

আশেপাশের রঙকে অবজ্ঞা করার কোন কারণ নেই । কারণ এখন আপনি জানেন এই রঙের কারণেই আপনার দিনের বেশির ভাগ সীদ্ধান্ত হয়ে থাকে । মনোবিজ্ঞানীদের মতে আপনার শোবার ঘরের রঙ যদি কটকটে লাল হয় আর আপনি যদি বেশির ভাগ সময় এই ঘরে কাটান আপনার মস্তিস্ক বিকৃতির সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত । তাই বদলে ফেলুন নিজের চারপাশের রঙ । অন্তত বাসার দেয়ালের রঙটা তো নিজের মতো করে বদলাতে পারেন । ঘুম থেকে উঠে নিজের মনের মতো একটা রঙ দেখলে দিনটা আপনার ভালোই যাবে । চলুন বদলে ফেলি চারপাশে রঙ । নিজের মতো করে । । ।


রেফারেন্স, ছবি ও প্রয়োজনীয় লিংক সমূহ

view this link
view this link
view this link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×