somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপ্রিম কোর্ট ও অপু বিশ্বাসের মূর্তি

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানব মূর্তি বা হিউমান স্ক্যাপচার খুব সম্ভবত ফ্রাঞ্চের প্যারিস এ । আর এর বেশির ভাগই এতটা নন্দনীয়ভাবে সাজানো যে সপরিবারে উপভোগ অনেকটাই বিব্রতকর । আপনি যে সমাজের মানুষেই হন না কেন এসব মূর্তির সামনে খুব বেশিক্ষন আপনি দাঁড়িয়ে থাকলে হয়তো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন । হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখার তো প্রশ্নই উঠে না । একবার লন্ডনে একটা মূর্তির সামনে ছবি তোলার পর দেখি মূর্তির অবস্থা বেশ ভয়াবহ । আমার পেছনে থাকায় আমি খেয়াল করতে পারিনি । যাই হোক আমার আপনার তাকিয়ে থাকতে সমস্যা হলেও কেও না কেও এইসব মূর্তি পরম আদরে নিজের হাত দিয়েই বানিয়েছেন । ভাবুন একবার ।

অন্য সবার মতো আমি দেশে থাকার সময় ছোট খাটো শর্টস বা হাফ প্যান্ট পরে ঘুরতাম । ব্যাপারটা যতটা না প্রয়োজনীয় ছিল তার থেকে বেশি ছিল দেখানোর । আর ভাবতাম একদিন লন্ডন আমেরিকায় গেলে এইরকম শর্টস পরে ঘুরবো । ছেড়া জিন্স পড়বো । প্রথম আশাটি আমার পূরণ হলেও লন্ডন বা আমেরিকায় নিয়মিত শর্টস পরে রাস্তায় হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি । এর কারণ হয়তো বেশির ভাগ সময়ের ঠান্ডা অথবা আমি আমার রোমশ পা দুটি এই সমাজে দেখতে চাই না তাই । আমার কাছে দ্বিতীয় কারণটি যোক্তিক মনে হয় অনেক । কারণ আমি কাকে কি দেখাবো ? যেখানে নিজেই হা হয়ে বেশির ভাগ সময় তাকিয়ে থাকি । আমার এই রোমশ পা দুটি দেখলে হয়তো এখানকার বাচ্চারা ভয় পেয়ে যেতে পারে। কয়েকবার এই অনাকাঙ্খিত রোম গুলো তুলে ফেলার চিন্তাও করেছিলাম ।অগত্যা আমি লুঙ্গি বা প্যান্ট পরেই নিজের পা দুটো ঢাকি । তবে এ নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই । মাইকেল মোদসূদন দত্ত ও এই রকম চেয়েছিলেন আর উনিও উনার ভুল বুজতে পেরেছেন শেষ বয়সে । আমি তো উনার অনেক আগেই বুজতে পারছি ।

ফিরে আশা যাক মূর্তি রহস্যে । নানান দেশের নানান রকমের মূর্তি । যেমন ধরুন রোম মিলান বা প্যারিসের অনেক মানব মূর্তি পুরুষের । পুরুষের দেহের নানান অঙ্গভঙ্গী অথবা মাংস পেশী আর ভারতে গেলে দেখতে পাবেন নারী মূর্তির অবয়ব । ঠিক কি কারণে রোমান বা পারস্যে পুরুষদের দেহ মূর্তি বানানোর আদর্শ হলো জানা নেই । তবে ভারতের আগ্রহটা সবার জানা । যদি তাই হয় তবে বুজতে একটা মূর্তি একটা সমাজের কিছু আগ্রহের ছবি তুলে ধরে । এইসব পরিচিত মূর্তি গুলো দেখলেই বুজতে পারা যায় । ধরুন ভারতীয় একটা মূর্তি আর গ্রিক একটা মূর্তির পার্থক্য কচি কাচার ছেলে মেয়েরাও বলে দিতে পারবে । এর জন্য যে এদের মূর্তি বিষয়ক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হয়েছে তা কিন্তু নয় । আসে পাশে চারপাশ থেকে দেখে ঠিক বুজে নিতে পারে কোনটা ভারতীয় নারীর অবয়ব অথবা কোনটা গ্রিক নারীর । এখানেই মূর্তি শিল্পীর সার্থকতা ।

তবে আমাদের সুপ্রিম কোর্টের সামনের মূর্তি গ্রিক না দেশি বোঝার উপায় নেই । আর কোন শিল্পী তার পরম মমতাময়ী হাতের ছোয়ায় এই অদ্ভুতুড়ে মূর্তির অবয়ব বানিয়েছেন আমার জানা নেই । আপনি কোনো কচি কাঁচা এক বাচ্চাকে এর সামনে নিলে নির্ঘাত প্রথমে ভয় পাবে । কারণ চোখ বাধা শাড়ি পড়া এই নারী কিভাবে গ্রিক হয় আমার জানা নেই । নগ্ন পা খোলা চুল চোখ বাধা এক নারী আমাদের দেশে ভীতিকর পরিবেশের ইঙ্গিত দেয় । আর অবাক ভাবে এই মূর্তিটির শরীরের বিভিন্ন অংশের আংশিক অনুপাত প্রচন্ড রকমের বেখাপ্পা । শিল্প একটা নৈন্দনিক ব্যাপার । যেটা পরিবেশের উপর নির্ভরশীল । বাংলা সিনেমার পোস্টার যেমন আপনার ঘরের ড্রইং রুমে আপনি বাধাই করে রাখবেন না ঠিক তেমনি একটি বিষয় এটি । হটাৎ করে বাঙালি এক নারীর চোখ বেঁধে হাতে দাঁড়িপাল্লা ঝুলিয়ে দিলেই গ্রিক মূর্তি হয়ে গেলো ? এই মূর্তি শিল্পী ঠিক কি বোজাতে চেয়েছেন আমি জানি না । উনার অবশ্যই লুকায়িত কিছু বিষয় আছে এই মূর্তিতে । যে দেশে এই ধরণের চোখ বাধা নারীর মূর্তি বলতে নির্যাতিতা বোঝায় সেখানে এই মূর্তি কিভাবে ন্যায় পালের ভূমিকা পালন করবে ?

ঠিক যে কারণে আমি আমার রোমশ পা দেখতে কুন্ঠা বোধ করি হয়তো ঠিক সেই কারণে আমাদের সর্বোচ্চ আদালত আসল গ্রিক নারীর মূর্তি রাখতে সাহস করেননি। কিন্তু পরিবেশের কথা ভাবতে গিয়ে উনারা যা করেছেন তার রুচি নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে । পরিবেশন একটা বিশাল বড় ব্যাপার । নিতান্তই পরিবেশনের কারণে এই মূর্তি নিয়ে এতো বিতর্ক । যে কোনো জিনিস সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করলে তার পক্ষে জনমত থাকবেই । যত বাজে জিনিসই হোক না কেন ।

ব্যাপারটা প্রধানমন্ত্রী বা তেতুল হুজুরের নয় । ব্যাপারটা রুচির । হয় সত্যিকারের গ্রিক নারীর মূর্তি রাখুন নইলে অপু বিশ্বাস এর মতো এমন এক নারীর মূর্তি রাখুন যাকে দেখে সবাই ন্যায় বিচার চাইবে । দেখবেন প্রধানমন্ত্রী বা তেতুল হুজুর কেওই কিছু বলবে না । কারণ ব্যাপারটা সঠিক সময়ে সঠিক পরিবেশে ঠিক জিনিসটি পরিবেশনের ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৬:২৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×