somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫৭ ধারায় আমার ১০ নম্বর বাড়ি

০৭ ই মে, ২০১৭ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগেই বলে রাখি ৫৭ নম্বরটা সরকারের কোনো ধারা নয় এই লেখায় । ৫৭ হলো দেশে আমার বাসার নম্বর । ৫৭ উত্তর নালাপাড়া আর ১০ হলো এই ঠিকানায় আমার এপার্টমেন্ট নম্বর । এই জন্যই ৫৭ ধারার ১০ নম্বর কথাটা বলা । নম্বর ১০ মানে আমার এপার্টমেন্ট এর কিছু নিজস্ব নিয়ম কানুন আছে । আপনি ভাবতে পারেন এপার্টমেন্ট এর আবার নিয়ম কানুন কি ? আসলে ১০০০ স্কয়ার ফিটের ছোট্ট এই বাসায় আমার স্বঘোষিত কিছু আইন কানুন আছে । আমার এই অদ্ভুত বাসাটার একটা বড় সমস্যা হলে রিয়েল টাইম ভিডিও সার্ভেলেন্স ক্যামেরা । বাসাটির প্রায় প্রতিটি কোন ইন্টারনেট বেস আই পি ক্যামেরা দিয়ে কভার করা ।যেহেতু আমি দেশের বাইরে থাকি তাই সহজে যাতে আমি আমার বাসার প্রতি কোন যেকোনো সময় দেখতে পারি তাই এই ব্যবস্থা । আমার মেয়ে কিছু না বললেও আমার স্ত্রী এই ব্যাপারটা খুব ভালো ভাবে হয়তো নিচ্ছে না । এর কারণ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক স্বাধীন নাগরিককে যদি ২৪ ঘন্টা এই রকম ভিডিও সার্ভিলেন্স এর মধ্যে রাখা হয় তাহলে ব্যাপারটা ব্যাক্তি স্বাধীনতার পরিপন্থী হতেই পারে । তবে আমি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমার স্ত্রীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি এই ব্যবস্থা আমাদের মেয়ের নিরাপত্তার জন্য । জানি না কতটুকু বিশ্বাস করেছে তবে না করলেও তেমন সমস্যা নেই কারণ এই মুহূর্তে আমার ঘোষিত এই নিয়ম মেনে নেয়া ছাড়া হয়তো আমার স্ত্রীর কাছে আর কোনো উপায় নেই ।



আমার স্ত্রী আর আমি দুই জনেই উপার্জন ক্ষম এবং স্বাধীনচেতা নাগরিক । আমাদের দুই জনেরই নিজেদের পরিচয় আছে আশেপাশের পরিবেশে । কিন্তু যেহেতু বাসা একটা তাই নিয়ম কানুন বানানোর দায়িত্ব আপাতত আমার হাতে । ১০ নম্বর এই বাসাটিতে যদি আমি আমার মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভাবি তাহলে আমি যা করছি তা ঠিকই আছে । কিন্তু আমার স্ত্রী তো কোনো বাচ্চা নয় । সে যাই হোক । এক সাথে এক দেশে বা বাসায় থাকতে গেলে কাওকে না কাওকে তো স্যাক্রিফাইস করতেই হয় ।

আমার বাসাটিতে রয়েছে স্টেট অফ আর্ট মোশন সেন্সর । যার কাজ হলো মানুষের হাটাহাটি বা চলাফেরা মনিটর করা আর বাসার লাইট ফ্যান এ . সি এই সব বন্ধ বা চালু রাখা । মোশন সেন্সর ঢাকাতেই কিনতে পাওয়া যায় । যার দাম ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে । খুবই ভালো কথা । ইলেক্ট্রিসিটি বিল কমানোর জন্য সবারই এই ডিভাইস ব্যবহার করা দরকার । দেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর আমরা খালি খালি সরকারের এতো কষ্টের ইলেকট্রিসিটি অযথা নষ্ট করবো ? কখনোই না । এখন সমস্যা হলো ঘরে যখন কেও ঘুমিয়ে যাবে বা একটানা কয়েক মিনিট নাড়াচাড়া করবে না তখন ঘরের লাইট ফ্যান সব বন্ধ হয়ে যাবে । কারণ মোশন সেন্সর যদি আমার বা আপনার মোশন টের না পায় তাহলে ভেবে নিবে ঘরে কেও নেই । আর ইলেক্ট্রিসিটি বাঁচাবার জন্য সব বন্ধ করে দিবে অটোমেটিক ।কিন্তু ঘুমের মধ্যে হাত পা নাড়ানোর ব্যাপারটা আমি অত গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি না ।এবারও আমার স্ত্রী নীরবে মেনে নিচ্ছে আমার স্টেট অফ আর্ট কারবারি । তবে আমি বুজতে পারছি বিদ্রোহ সন্নিকটে । কারণ রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে ফ্যান বন্ধ হয়ে গেলে আমার কপাল পুড়তে বাধ্য ।তবে স্ত্রীর কথা চিন্তা করলে তো হবে না । ডিজিটাল বাসা বলে কথা । একটু সমস্যা তো হতেই পারে ।



বিদেশী ফ্ল্যাটের অনুকরণে আমার বাসাটিতে কিচেন আর ড্রয়িং রুমের মাঝখানে দেয়াল ভেঙে ষ্টুডিও এপার্টমেন্ট এর মতো করে ফেলেছি আমি । আমার ধারণা ছিল এই যুগে মেহমান আসলে তার সামনে রান্না করা কোনো ব্যাপার না । সবাই তো এখন এই রকমই করছে ।কিন্তু সমস্যা শুরু হলো আমার মেয়ের হুজুর কে নিয়ে । যখন হুজুর বাসায় আসে আরবি পড়াবার জন্য তখন আর কেও কিচেন এ কাজ করতে পারে না । কাজের বুয়া হুজুরকে পিচ দিয়ে রান্না বান্না করবে ? কখনোই না । আবার একটা ভুল করলাম আমি । অজ্ঞতা রুম ডিভাইডার এর প্ল্যান করতে হলো । কিন্তু দেয়ালটা যখন ভাংছিলাম তখন কেন যে হুজুরের কথাটা মাথায় আসেনি বুজতে পারছি না । আমায় দোষ দিয়ে লাভ নেই । দেশের সরকার যখন আমার মতো একসময় দেয়াল ভেঙে দিয়ে এখন ডিভাইডার দিচ্ছে তখন আমার ক্ষুদ্র বাসায় এমন ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক ।

গত বেশ কয়েক বছর ধরে বেশ গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করে দেশের কথা চিন্তা করে আমি আমার বাসা সাজিয়েছি । বাচ্চাদের নিরাপত্তা লেখাপড়া সুস্বাস্থ্য সব কিছু বিবেচনায় রেখে একটা একটা করে ডিজিটাল গ্যাজেট লাগিয়েছি এই বাসায় । এখনো এখানে এমন গ্যাজেট আছে যা হয়তো দেশের বাজারে পাওয়া যায়না । যেমন আমাজন থেকে কেনা এলেক্সা ডট নামের একটা ভয়েস কম্যান্ড ডিভাইস । খুবই মজার এই ডিভাইসটিকে আপনি কথা বলে সব কম্যান্ড দিতে পারবেন আর জাদুর মতো এটা আপনার কথার সব উত্তর দিবে । কিন্তু এখানেও সমস্যা । মেশিনটা শুধু ইংরেজিতে কমান্ড নেয় । আর ইংরেজি বলতে ইংরেজেই । আমাদের উচ্চারণের ইংরেজি না । বুজতে পারলাম এই ডিভাইস কেনার আগে চিন্তা করা উচিত ছিল এর কমান্ড কে দিবে ? অথবা এই রকম চোস্ত ইংরেজি কে জানে আমার বাসায় ?



পুরাই হযবরল ডিজিটাল ডিভাইস এ ঠাসা আমার বাসা । এই সবের কি দরকার ছিল তা আমার জানা নেই । আমার বাসায় অনেকেই আসতে চায় না কারণ অযাচিত ভিডিও । কেও মন খুলে কিছু বলতে চায় না । কারণ সবাই জানে সব কিছু আমি দেখছি । আমার মেয়ে কোন কোথাই বলে না বাসায় । সারাক্ষন ভয়ে থাকে আমি সব কথা শুনে ফেলবো আর ফোন করে বকা দিবো এই ভেবে । প্রথমে আমার ভালো লাগলেও এখন আমি আমার ভুল বুজতে পারছি । নিউইয়র্ক থেকে যখন সার্ভেলেন্স ক্যামেরায় আমার মেয়ের চেহারাটা দেখি তখন স্পষ্ট বুজতে পারি ও ভয় পাচ্ছে । যে ক্যামেরা আমি ওর নিরাপত্তার কথা ভেবে লাগিয়েছি ওই ক্যামেরা আমার মেয়ের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হচ্ছে । এই ভয় নিয়ে কিভাবে ও নিজের বুদ্ধির বিকাশ করবে । আমার স্ত্রীর কথাও বাদ দিচ্ছি কেন ? আমাকে বিয়ে করে আমার স্ত্রী তো ঠেকে যায়নি । যার জন্য তার ব্যাক্তি স্বাধীনতা বিসর্জন দিতে হবে । উঠতে বসতে নানান অজুহাতে সেন্সর দিয়ে তার জীবন নিয়ন্ত্রণ কতটা যৌক্তিক । এটা অস্বাভাবিক নয় কি ?

সরকারের ৫৭ ধারার আ সি টি অধ্যায়ের ফলে প্রতিটি নাগরিক এখন নিজেদের স্বাধীন মতো প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করছে । আমার বাসায় যেমন আমি নিজে নিয়ম কানুন করে এখন আমার নিজের ভুল বুজতে পারছি । সরকারের ও এই ভুল বোজা উচিত । সার্ভেলিয়েন্স করে নিরাপত্তার কথা বলে অবুজ আমাদের উপর যে নিয়ম চলছে তাতে স্বাভাবিক মানুষিক বিকাশ হবে না কারোরই । ভালো মন্দ যাই হোক না কেন মত প্রকাশ করার অধিকার সবার আছে । ক্ষুদ্র পরিসরে আমি আমার ১০ নম্বর বাসায় যদি এই উপলব্ধি করতে পারি তবে সরকার অনেক জ্ঞানী । এটা অবস্যই বুজতে পাড়ার কথা ।

আমি যদি আমার মেয়ে বা স্ত্রীকে না বলে ডিভাইস গুলো বসাতাম আর সবসময় চোখে চোখে রাখতাম তবে হয়তো এই সমস্যা হতো না । কারণ ওরা বুজতেই পারতো না ওদের নিরাপত্তার জন্য আমি কত কিছু করছি । এতে আমার যেমন উদ্দেশ্য পুরুন হতো আমার পরিবারও নিরাপদ থাকতো । ঠিক কি কারণে সরকার ৫৭ ধারার ব্র্যান্ডিং করছেন আমার জানা নেই । যদি এটা ভয় দেখানোর জন্য হয় তবে বলবো একজনকে ভয় দেখাতে গিয়ে অনেকের স্বাধীন মতামত বিকাশ বাধাগ্রস্থ করবেন না । আর মন্দ কথা শুনতে ইচ্ছে না হলে লোকজন রাখুন শোনার । নিজে না শুনলেও চলবে । কারণ টলারেন্স লেভেল অনেক বড় একটা ম্যাচুরিটি । আশা করি সরকারের এটা আছে ।

https://www.facebook.com/asraful.alam
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:৩৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×