somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ফ্যাক্স ও আমার স্যার এর কথা

২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা আমাকে ফ্যাক্স নাম ডাকতো । এই নামের একটা মহাত্ম আছে বৈকি । প্রায় একযুগেরও বেশি আগে আমি যখন ভার্সিটিতে প্রথম সেমিস্টার এর ছাত্র তখন এক এলাহী কান্ড করে বসি । ভার্সিটি প্রশাসনকে না জানিয়ে আমি একটা ফ্যাক্স করে বসি আমেরিকার একটা ইউনিভার্সিটিতে আমার ক্রেডিট ট্রান্সফার এর জন্য । সমস্যার শুরুটা হয় এই ফ্যাক্স নিয়ে । এই ফ্যাক্স এর জন্য আমাকে যে কি পরিমান যন্ত্রণাভোগ করতে হয়েছে তা আমি এখনো ভুলিনি । যন্ত্রণার কারণ আমার এক শিক্ষক এহসানুল আলম পারভেজ । যিনি বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক এর ডিরেক্টর আর আজকের সংবাদপত্রের শিরোনাম । আমার ফ্যাক্স এর কারণে আমেরিকার ওই ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক উড়াল দিয়ে দেশে আসেন সগোচরে আমার ইউনিভার্সিটির সব কিছু দেখার জন্য আর আমার সাথে কথা বলার জন্য । ভদ্রলোকের আকস্মিক এই ভ্রমণে যেমন আমি ছিলাম অপ্রস্তুত তেমনি আমাদের ডিন বা পারভেজ স্যার ছিলেন হতভাগ । কারণ নিউ হ্যাম্পশায়ার নামের ওই ইউনিভার্সিটির সাথে আমাদের ক্রেডিট ট্রান্সফার এগ্রিমেন্ট ছিল । কিন্তু কোনও এক অদ্ভুত কারণে পারভেজ স্যার এতটাই খেপেছিলেন আমার উপর আমি ভয়ে আমেরিকার ওই অধ্যাপকের সাথে দেখা করিনি । সেদিন হয়তো আমার আমেরিকা আসার স্বপ্ন ভেস্তে গিয়েছিলো ভয়ে । কিন্তু আজ এই লেখাটি আমেরিকা থেকেই লিখতে পেরে আমি খুশি ।

ব্যাপক ভাবে পরিচিত পারভেজ স্যার একধারে যেমন আলোচিত তেমনি সমালোচিত । উনার ব্যাক্তিগত ইমেজ আর বিত্তশালীতা বেশ চোখে পড়ার মতো । বেশ প্রতাপ আর প্রভাবশালী আমার এই স্যার এর সামনে আমি তেমন একটা যেতাম না । খুব সম্ভবত আমি নয় কেওই যেতে চাইতো না । শিক্ষক হিসাবে উনি কেমন তা একজন ছাত্র হিসেবে আলোচনার বিষয় বস্তু হতে পারে না । তবে দেশের সরকারি একটি ব্যাংকের পরিচালক পদে থাকায় কিছু বলা যেতেই পারে । আমার জানা মতে আমাদের দেশে যে কোনো সরকারি উচ্চ পদের আসনে বসার আগে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর চোখের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয় । অফিসিয়াল রেকর্ড আর রাজনৈতিক পরিচয় সুনিশ্চিত হবার পরই কেবল একজন এমন পদের জন্য মনোনীত হতে পারেন । পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই ধরণের নিয়ম । সুতরাং এটা মেনে নেয়া যেতেই পারে । কিন্তু নির্ধারিত ব্যাক্তির মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক ধ্যান ধারণা কেমন এ নিয়ে কোনো সরকারেরই মাথা ব্যথা থাকে না । ঠিক যে কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মানুষ আজকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ।

স্যারের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনেক মিল খুঁজে পাই আমি । প্রচন্ড বিত্তশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে যা হয় । স্যার একদিন ক্লাসে বলেছিলেন উনি "ক" আর "ছ" বর্গীয় গালি টাকা দিয়ে মানুষ থেকে শিখেছিলেন । স্যার বেশ ব্যাপকভাবে এই দুই বর্গের গালি সমানে সবাইকে প্রয়োগ করতেন । যাই হোক এটা হতেই পারে । তখন তো আর ফেসবুকের যুগ ছিল না । যে কিছু হলেই সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে যাবে ।

আমাদের দেশের বিশ্যবিদ্যালয় গুলোর বেশির ভাগ অধ্যাপক বাইরের দেশ থেকে পি এইস ডি বা ওই মাপের ডিগ্রি প্রাপ্ত । তবে এর ব্যাতিক্রম যে হয় না তা কিন্তু না । হতেই পারে । কেবল পুঁথিগত শিক্ষা তো আর শিক্ষা নয় । অনেক সময় পারিবারিক আর্থিক ব্যাপারটাও লক্ষ্য রাখার মতো কিছু একটা হয়তো । সে যাই হোক স্যার এর সাথে বর্তমানে ফেসবুকে যোগাযোগ হয় । স্যার এখনো মাঝে মধ্যে নিউ ইয়র্ক আসলে কথা হয় । টিভিতে টক্ শোতে দেখি । ভালোই লাগে । বলতে পারি সবাইকে আমি ভদ্রলোককে চিনি । উনি আমার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন ।

http://bdnews24.com/business/2017/05/11/islami-bank-vice-chairman-ahsanul-alam-parvez-threatened-asked-to-step-down

আজকের প্রথম আলো পরে বেশ খারাপ লাগলো । দুর্দান্ত প্রতাপের আমার এই শিক্ষককে নাকি ইসলামী ব্যাংক এর পরিচালক পদ থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে । অথবা উনি নিজেই নাকি এই পদ ছেড়ে দেবেন এই রকম বলেছেন । যারা স্যার কে ব্যাক্তিগত ভাবে জানেন তারা সবাই জানেন স্যার একটা পদে এর আগে সর্বোচ্চ কতদিন থেকেছেন । ডি জি এফ এই বা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা গুলো উচ্চ পর্যায়ে ঠিক কি রিপোর্ট দিচ্ছেন আমার জানা নেই । প্রধানমন্ত্রী ও নাকি বেশ নাখোশ স্যার এর উপর উনার অর্বাচীন কথা বার্তা নিয়ে । স্যার কি যেন কি উলটা পাল্টা বলছেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে । কিন্তু আজ এতো দিন বাদে সবার মনে হলো উনি উল্টা পাল্টা বলছেন । আমার জানা মতে উনি কখনোই রাখ ঢাক করে কথা বলেন না । এটা উনার বিশেষ গুনের পর্যায়ে পরে ।

একজন শিক্ষক হলেই যে উনি সব কিছু জানবেন তার কোন মানে নেই । একজন শিক্ষক হলেই যে উনি মানসিক ভাবে স্থির হবে তারও কোন গ্যারেন্টি নেই । পেশা আর ব্যাক্তিগত আচরণের মাঝে যোগসাজন আছে । আমরা সেদিন তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম আমাদের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে । প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি হওয়াতে আমরা পেরেছিলাম স্যার কে বিদায় জানাতে আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে । কিন্তু সরকার চাইলেই পারছেন না পিছু হটে আসতে । ইসলামী ব্যাংকের মহা পরিচালক আর পরিচালকের দ্বন্দে হয়তো প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত এই আলোচনা এগিয়ে গেছে । পারত পক্ষে এই ধরণের ঘটনা হরহামেশা হচ্ছে আমাদের মাঝে । ব্যাংক বীমা বা ইউনিভার্সিটি এই ধরণের কর্পোরেট স্থানগুলোতে কি মানসিক স্বাস্থ পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে পারে না ? টাকা আর বাহুবলে অসুস্থ বিকারের লোকজন সমানে মিথ্যে বলে যাবে আর আমরাদেরকে তা বিশ্যাস করতে হবে ? কিছু কি বলাও যাবে না ?

আজকে অনেক মনে পড়ছে আমার ফ্যাক্স এর কথা । ওই দিন আমি হয়তো ফ্যাক্স টা করে অনেক জটিলতা তৈরী করেছিলাম আমার জীবনে । আজকে আমার শিক্ষক ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দিয়ে একই পরিস্থিতির শিকার । ভাবতে খুব ভালো না লাগলেও খুব একটা যে খারাপ লাগছে তাও কিন্তু না ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:৩১
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×