somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটক সিনেমার এপার ওপার

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মাস খানেক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হলাম কলকাতার এক তরুণ ডিরেক্টরের সাথে । অল্প বয়স তার উপর টাকা পয়সা নেই ছবি বানানোর । গল্প রেডি । কিন্তু গল্পে পর্যাপ্ত বয়সের নারী চরিত্র না থাকায় প্রোডিউসার পাচ্ছে না বেচারা । আশ্চর্য এক কাজ করে বসলো এই তরুণ ডিরেক্টর । ক্রাউড ফান্ডিং শুরু করলো নিজের ছবির বাজেট এর জন্য । মানে সবার থেকে অনলাইন এ চাদা তোলা শুরু করলো । ৪৭ লক্ষ্য রুপির এই ছবির জন্য আসতে আসতে টাকা জমা শুরু হলো । কিছু টাকা জমে আর কিছু শুটিং হয় ।ও এভাবে আজও চলছে ধার্মিক নামের এই ছবির কাজ । সত্যজিৎ রায়ের পথে পাঁচালী যদি পাঁচ বছরে শেষ হয় । এই ছবি শেষ না হলেও কিছু যায় আসে না । শুরুটা যে ভালো এদের । এটাই অনেক । একটা ছবি বানানো এতো সহজ কথা না । কত কিছু লাগে । স্ক্রিপ্ট , থিম , ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক আরো কত কি ?

কাজল শাহরুখ এর ডি ডি এল জি ছবিটা দেখার পর আমার আসে পাশের সবাইকে কাজল মনে হতো । নিজেকে যতটা সম্ভব শাহরুখ খানের মতো ভাবার চেষ্টা করতাম । আমাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই । তখনকার সময় অন্তত বেশির ভাগ সবাই এই জ্বরে আক্রান্ত ছিল । জ্বরের প্রকোপ এতটাই বেশি ছিল যে আমি বিলেত যাওয়ার সময় ডি ডি এল জি এর একটা ডিভিডি সাথে করে নিয়ে গেলাম । ইচ্ছে ছিল লন্ডনের শুটিং স্পট গুলো নিজের চোখে দেখা ।বেছে বেছে প্রায় সব শুটিং স্পটে গেলাম । ভিক্টোরিয়া স্টেশন, ইস্ট লন্ডন প্রায় সব খানে । কিন্তু কোথাও ডি ডি এল জি র ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের শব্দ পেলাম না । এমনকি আমার ডি ভি ডি টা পর্যন্ত আমি একবার দেখতে পারলাম না । কারণ লন্ডনে আমার জানা মোতে তখন ডি ভি ডি প্লেয়ার অত জনপ্রিয় ছিল না । ওরা ভি এইস এস ক্যাসেট এ ছবি দেখতে অভস্থ । যাই হোক একেক দেশের এক এক নিয়ম হতেই পারে । কিন্তু ভিক্টোরিয়া স্টেশন এ যাবার পর একটা ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক অন্তত আমার শোনা উচিত ছিল । মাইন্ড দা গ্যাপ এই শব্দটি ছাড়া আর কিছুই তেমন মনে করতে পারছিলাম না । আসলে বাস্তব জীবনে ফিল্মের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক তেমন একটা হয় না । হলে খুব মন্দ হতো না ।

সব জায়গায় যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক হয় না তা কিন্তু না । যেমন ধরেন আপনি যখন কোনো বড় সুপার স্টোরে যান তখন দেখবেন হালকা একটা ব্যাকগ্রউন্ড মিউসিক বাজছে স্টোরে । অথবা কোনো রেস্টুরেন্টে যান পাবেন ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক । এই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের অনেক ক্ষমতা । আপনি হয়তো একটা টুথ পেস্ট কিনতে গেলেন কোন বড় সুপারস্টোরে । দেখবেন বের হবেন হাজার টাকার বাজার করে । কখন যে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের হারিয়ে গেলেন আপনি টের পাননি । নাটক সিনেমা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করবে এটাই হয়তো স্বাভাবিক । হয়তো বললাম এই কারণে যে আমরা যেভাবে নাটক সিনেমা দ্বারা প্রভাবিত হই এমন পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয় কিনা আমার জানা নেই । তবে ভারত বর্ষের কথা আলাদা । ব্যাকগ্রাউন্ড গানের জন্মদাতা এই দেশে আমার ধারণা রাস্তার মোড়ে মোড়ে শাহরুখ খান দু হাত মেলে দাঁড়িয়ে থাকে ।

হলিউডের বেশির ভাগ ব্লকবাস্টার ছবি ফিক্শন । এরমানে সুপারম্যান বা আইরন ম্যান টাইপের ছবি । এই ধরণের ফিকশন ছবি গুলু দেখতে ছানা বুড়ো সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে । কারণ এরা সারা সপ্তাহ প্রচন্ড নন ফিকশন জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নিজেকে সুপারম্যান ভাবতে ভালোবাসে । অথবা ধরতে পারেন ওয়াল্ট ডিজনির কোনো এনিমেটেড ছবি । ছবি মুক্তির আগেই হিট । ঠিক কি কারণে বাচ্চাদের এই এনিমেটেড ছবিগুলো বুড়োরা দেখে আমার জানা নেই । তবে আমি নিচ্চিত এদের জীবনে শাহরুখ খানের মতো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউসিক বাজে না ।

আমাদের দেশেও ফিকশন আর নন ফিকশন ছবি বানানোর হিরিক দেখা যা্য় ইদানিং । কিন্তু ফিকশন আর নন ফিকশন এর মানে সঠিক ভাবে আমরা জানি কিনা তা নিয়ে আমার দ্বিমত । আমার ধারণা বেশির ভাগ আমাদের ধারণা ফিকশন মানে বাস্তব আর নন ফিকশন মানে অবাস্তব। বাস্তবে এর মানেটা উল্টো । প্রচন্ড অবাস্তব একটা দিন কাটানোর পর বাসায় ফিরে টিভিতে বাস্তবমুখী একটা ছবি দেখে যদি আপনার তৃপ্তি লাগে তবে বুজতে হবে আমার আপনার রুচিবোধের সাথে কিছুটা তারতম্ম আছে পশ্চিমের ওদের সাথে । ছবি ফিকশন বা নন ফিকশন যাই হোক না কেন ভালো ছবি নিয়ে কথা । ভালোর মতো একটা আপেক্ষিক আচরণ এদেশের পরিচালকরা কিভাবে নির্ধারণ করে আমার জানা নেই । হলিউডের বেশির ভাগ ছবির প্রোডিউসাররা আগে এই আচরণ এনালাইসিস করে এরপর ছবি বানান । তবে প্রচন্ড কার্বোহাইড্রেট যুক্ত আমাদের শরীর যে "বড় ছেলে" এর মতো নাটকে আবেগী হবে এটা জানতে এনালাইসিস এর দরকার হয় না । এর মানে আবার এই না যে মধ্যবিত্ত পরিবারের কাহিনী নির্ভর বড় ছেলে দেখে সব ধনীরা ফিকশন ভেবে মজা পাচ্ছেন । এটা আমাদের শরীরে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট এর বহিঃপ্রকাশ ।

প্রচন্ড অনুকরণীয় আমরা ফেলু মিত্তিরকে ঢাকায় এনে শার্লক হোমসের সাথে মিশিয়ে জেমস বন্ড বানিয়ে ঢাকার রাস্তায় দিলাম ।সত্যজিৎ বাবুর ছেলের মাথায় হাত । যারা ইদানিং ছবি বানান তাদের ক্রিয়েটিভিটির পরিমান এতো বেশি যে এদের বেশির ভাগের বেশির ভাগ সময় মাথা কিছু একটা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে হয় । মৌলিক গল্প নিয়ে কিছু একটা বানানোর মতো সৎ সাহস কালে ভাদ্রে হয় । আর হলেও দেখা যায় ওই ছবি বাজারে চলে না । কারণ সবাই ব্লেন্ডিং পছন্দ করে । পাশের দেশ ভারত বর্ষের ফলে অনুকরণটা বেশি দূর যেতে হয় না । ওদের বাতিল বা না চলা ব্লেনডেড নায়ক নায়িকা দিয়ে আমাদের বেশ ভালো চলে যাচ্ছে । শোনা যাচ্ছে সানি লিওনি আমাদের দেশের ছবিতে নাচবেন । বেশ ভালো । ফিকশন বলে কথা । সুপারম্যান তো আর বানাতে হবে না ।

ছবির বাজার আর বাজেট নিয়ে অনেকে কথা বলেন । কথা সত্য । দুই ঈদের নাটক গুলু ছাড়া সারা বছর আর তেমন কিছুই দেখার থাকে না । কারণ এই দুই ঈদ এ পরিচালকরা বেশ মোটা অংকের বাজেট পান নাটক সিনেমা বানাতে । সুতরাং ঈদ পূজা পার্বন আরো বেশি হলে নাটক সিনেমার মান ও ভালো হবে এটা আশা করা যেতেই পারে ।

কিন্তু আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড কলকাতার ঐ তরুণ ডিরেক্টর যদি তার সিনেমায় একটা প্রাপ্ত বয়স্ক নায়িকা নিয়ে নিতো তাহলে হয়তো এতো জামেলা হতো না । এমনিতেই প্রোডিউসার পেয়ে যেত । তা না করে সত্যজিৎ রায় হবার আশায় পাঁচ বছর লাগবে বাচ্চাদের নিয়ে এই ছবি করতে । এটা কি মেনে নেয়া যায় ? ধরে নিন মানলাম না । তাহলে আরেকটা পথে পাঁচালী কিভাবে আশা করবো ? বলতে পারেন ? ?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ৭:৩৩
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×