somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সীতার হনুমান বধ ও বিব্রত জাতি

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি তখন লন্ডনের একটা হাসপাতালের ডেলিভারি রুম এ আমার প্রথম সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।আর দেশে প্রথম শ্রেণীর একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি আমার বাসায় লিগাল নোটিস পাঠায় এক অসংলগ্ন অনাদায়ী আদায়ে । যেখানে একসময় বেশ সুনামের সাথে চাকরি করতাম আমি। সামান্য এই কয়েকটি পংক্তির মাঝে বসবাস আর এর সমাধান যে কত কঠিন হতে পারে তা সম্ভবত এই মুহূর্তে প্রধান বিচারপতি মহোদয় হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছেন ।প্লেন থেকে নেমে তিনি যখন জানতে পারবেন দেশে তার নামে মোকদ্দমা চলছে তখন ঠিক কিভাবে উনি এই পরিস্থিতির সামাল দিবেন তা তিনিও হয়তো ঠিক ভাবে জানেন না । কারণ উনাকে যদি এই মুহূর্তে জারিকৃত মোকদ্দমা চালাতে হয় তাহলে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ এম্বেসী তে নিযুক্ত ডিফেন্স সেক্রেটারি থেকে নিতে হবে ছাড়পত্র । মুহূর্তের মধ্যে নিজের দেশের সব ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন প্রধান বিচারপতি । দেশে ফিরতে হলে বুকে বেঁধে নিতে হবে আলাদা পেস মেকার । কারণ এয়ারপোর্ট থেকে উনি বাসায় না গিয়ে চলে যেতে পারেন শ্রীঘরে । একজন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সাধারণের পক্ষে এই রকম ফিরতি ফ্লাইট এর টিকেট কাটা এতো সহজ ব্যাপার না ।

নির্ধিদ্বায় বলা যায় প্রধান বিচারপতি পালিয়ে যাননি। কিন্তু উনি যে টেকনিক্যাল ভুলটি করেছেন তার মাশুল উনাকে দিতে হবে বেশ ভালো ভাবেই । যেটি খুব সম্ভবত আরেক জন দিচ্ছেন লন্ডন বসে। বেগম জিয়া । নিজের দেশে থেকে লড়াই করাটা বেশ নিরাপদ । নিজের আইন বা নিজের বানানো প্রজ্ঞাপনের মাঝে নিজেকে জড়িয়ে ফেলার আরো অসংখ্য উধাহরন আছে । যারা ব্যাংক বীমা বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন তারা জানেন এই রকম অসহায় পরিস্থিতির কারণে নিজের আর নিজের পরিবারের উপর দিয়ে কি যায় । যে দেশের মানুষের জন্য কথা বলে বিচারপতি আজকে বেশ হনুমান জি ধরণের ইমেজ ধারণ করছেন সেই মানুষ গুলু মুহূর্তের মধ্যে বদলে যাবে ।

খুব সম্ভবত বিচারপতি নিজের ইচ্ছেই এই স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছেন। কারণ সবার পক্ষে হনুমান হয়ে সীতার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া সহজ ব্যাপার হয়ে উঠে না। রামায়ণ বদলে গেছে এখন । বদলেছে রামায়ণের পাণ্ডুলিপি। নিজের লেজে আগুন দিয়ে লঙ্কা জয়ের মতো ঘটনা এখন খুব একটা সম্ভব না। মুহূর্তে চলে আসবে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি। লঙ্কা জয়ের পরিবর্তে নিজের লেজ পুড়ে ছাই হবার শঙ্কা থাকতেই পারে ।

কালো কোট পরা মেরুদন্ড সোজা করে চলা মানুষ গুলো অন্য রকম। আমাদের মতন না খুব একটা। চুপচাপ স্বভাবের এই মানুষ গুলোর মাথায় বিস্তর বুদ্ধী । যারা অনায়াসে নিয়ম নীতি দিয়ে অনিয়মকে নিয়মে বদল করে ফেলতে পারে। অতি সাধারণ মানুষের পক্ষে এই অসাধারণ মানুষগুলোর সাথে টিকে থাকা বেশ মুশকিল । প্রধান বিচারপতি ঠিক কি কারণে নিজে সাধারণ একজন মানুষ হয়ে এই অসাধারণ মানুষ গুলুর সাথে বিবাদে জড়াতে গেলেন আমার জানা নেই। নিজেকে অসাধারণ এক পরিস্থিতির মধ্যে অবতীর্ণ করে উনি রণে ভঙ্গ দিলেন। পাটকেল উনাকে খেতেই হবে । সীতা কুলক্ষণেও রামায়ণের পাতায় সীতাই থাকবে । হনুমান বা রাবন এর চরিত্র হয়তো বদলে যাবে । উনার এই ব্যাপারটা বোঝা উচিত ছিল ।

আমার বেলায় আমি লন্ডনের বাংলাদেশ এম্বেসীর ডিফেন্স সেক্রেটারি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ফিরে যাই দেশে । লন্ডন থেকে ঢাকার ওই ফ্লাইটটি ছিল আমার জীবনের দীর্ঘতম ফ্লাইট। নিজের প্রথম সন্তান আর সহধর্মিনী নিয়ে নিজের দেশের মাটিতে যেতে কেও যে এতো ভয় পাবে এটা আমার জানা ছিল না । নিজের আসে পাশের মানুষগুলো মুহূর্তের মধ্যে রামায়ণের অংশ হয়ে যায় । মধ্যবৃত্ত পরিবারের সাধারণ একজন মানুষের পক্ষে নিজের সন্মান আর আত্ম মর্যাদা বিসর্জন দিয়ে অনেক কিছুই করা অসম্ভব । সবাই তো আর ডোনাল্ড ট্রাম্প না । সুতরাং আবার রণে অবতীর্ণ হওয়া। কারণ যুদ্ধে যখন একবার নেমে যাবেন তখন যুদ্ধ ক্ষেত্র ত্যাগ মোটেই সুপুরুষের লক্ষণ নয় । আমার প্রায় আরো পাঁচ বছর লেগেছিলো এই যুদ্ধ শেষ করতে। আরো কয়েক বছর লেগেছিলো কালো কোট পড়া লোক গুলুকে একে একে বধ করতে ।

প্রধান বিচারপতি নিদেন আবেগের বশবর্তী হয়ে সীতার সাথে রণে নেমে পড়লেন । নিজেকে হুনুমান জি প্রমানে ব্যর্থ হয়ে রাবনে পরিণত করলেন । উড়াল দিলেন অস্ট্রেলিয়া দ্বীপে । এতো বড় অস্ট্রেলিয়া দ্বীপ কি কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসতে পারবেন ? নাকি যে মহৌষুধের জন্য উনি ওই দ্বীপে গেলেন সেখানেই আটকা পড়বেন ? এটর্নি জেনেরাল এর কথা থেকে বোঝা যায় বিচারপতির জন্য এয়ারপোর্টে বিশেষ আয়োজন করা আছে । সুতরাং দেখার বিষয় অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকার ফ্লাইটটি কতটা লম্বা হয় প্রধান বিচারপতির জন্য ।

আমার বেলায় আমার এক ভার্সিটির শিক্ষক যিনি আমার কোম্পানির সি ই ও ছিলেন আমাকে বেশ সাহায্য করেছেন। কর্পোরেট বিশ্বের নামকরা এই মানুষটির হৃদয়ে বেশ ভালোবাসা ছিল । যদিও উনি কালো কোট পড়তেন কিন্তু বেশ হৃদয়বান মানুষ ছিলেন । নিজের বিশেষ ক্ষমতা খাটিয়ে উনি আমার সাথে ছিলেন ওই যুদ্ধে । একা কখনো যুদ্ধে যেতা যায় না । কাওকে না কাওকে সঙ্গে লাগে । রাষ্ট্রপতি কালো কোট পড়লেও বেশ হৃদয়বান একজন মানুষ । বিচারপতির শেষ ভরসা এই মানুষটি । সীতার ক্ষমা হবে না বিচারপতি জানেন । কারণ সীতা কালো কোট পড়েন না । তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা হয়তো উনাকে আবার দেশে ফিরিয়ে আনতে পারে ।

আমার বোনের এক ছেলেকে নিয়ে বাবা মা বেশ উৎফলিত । কারণ ও নাকি স্কুলে বাজে ছেলেদের সাথে একেবারেই মেলা মেশা করে না । স্বাভাবিক কারণেই বাবা মা এর ধারণা আমার ভাতিজা বেশ ভালো করবে ভবিষ্যতে । আবার একটা অতি সাধারণ মানুষ বানানোর পক্রিয়ায় আমার বোন আর দুলাভাই । তাদের ছেলে অতি সাধারণ একজন মানুষ হয়ে অসাধারণ এক পরিবেশে কিভাবে টিকে থাকবে তা নিয়ে বাবা মা কেওই উদ্বিগ্ন না । কারণ ভালো ছেলের সংজ্ঞা অনেকটা এই রকম । একসময় হয়তো এই ছেলেটি বড় হয়ে কালো কোট পড়বে । বাবা মা খুশি হবে অনেক । এরপর যুদ্ধ শুরু হবে অন্য সব কালো কোট পড়া মানুষ গুলুর সাথে । ও কি পারবে টিকে থাকতে ? একবার ভাবুন ।

আশা করি প্রধান বিচারপতি আবার দেশে ফিরবেন । আবারো কালো কোট পড়বেন । রণে যোগ দিবেন । খুঁজে বের করবেন কালো কোট পড়া হৃদয়বান মানুষ গুলোকে । আপাতত সীতার সাথে রণে ফেরার চেয়ে ভালো কোন পথ আছে বলে মনে হয় না । সময়ের সাথে উনিও হয়তো সীতা বধ করতে পারবেন একদিন । সাথ খন্ড রামায়ণ পড়ার মতো সময় কারো নেই এখন ।সবাই যুদ্ধের শেষ অংশ টুকু দেখতে চায় ।

https://www.facebook.com/asrafulalam
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৩০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×