somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেটফ্লিক্স জেনারেশন ও আমরা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সপ্তাহের ছুটির দিনের প্রথম কাজ মেয়ের সাথে মুভি দেখা। বারো হাজার মাইলের দিন রাত দুরুত্বের এই মুভি দেখা বেশ জামেলার। আমার মেয়ের জন্য মুভি নাইট আর আমার জন্য মর্নিং মুভি। যেভাবেই হোক চেষ্টা করি এক সাথে বসে একটা কিছু দেখার। মেয়ের ইন্টারেস্ট জানাটা মুখ্যু বিষয়। ধীরে ধীর বড় হচ্ছে মেয়ে আমার। দেখতে দেখতে ওর মুভির প্রতি ইন্টারেস্টও বদলে যাচ্ছে । যে মেয়ে এক সময় হরর মুভি দেখে রাতে ঘুমাতে পারতো না সে এখন বমির সাথে সাপ বের হয় এমন সিরিয়াল দেখে। ভয়াবহ অবস্থা।

নেয়া হলো নেটফ্লিক্স ।দেশের অনেক বাসাতেই এখন নেটফ্লিক্স চলছে । এর সুবিধা হলো আমি নিউইয়র্ক থেকে বসে বুজতে পারি আমার মেয়ে কি ধরণের মুভি বা সিরিয়েল দেখছে। বাধা দেবার কোনো উপায় নেই। অথবা চেষ্টাও করি না । হাই স্পিড ইন্টারনেটের যুগে বাধা দিয়েও কোনো লাভ নেই। বমি করা সাপের সিরিয়াল ও দেখবেই। সুতরাং বাধা না দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি মেয়েকে। নিজে দেখলাম সিরিয়ালটা। নাম স্ট্রেঞ্জ থিং। ভয়াবহ অবস্থা। আমি নিজে এই হরর দেখলে অন্তত সপ্তাহ খানেক ঘুমাতে পারতাম না। যাই হোক। বুজলাম মেয়ের হৃদয় আস্তে আস্তে শক্ত হচ্ছে । এটা ভালো একটা জিনিস । একসময় বমির সাথে হৃৎপিণ্ড বের হতে দেখলেও ফেলফেল করে হাসবে। খারাপ না।

বেশির ভাগ আমরা ছেলে মেয়েদের জন্য সর্বোচ্চ করি। টাকা পয়সা দিয়ে। না চাইতেই সব কিছু। এটা সব বাবা মাই করে। একজন দিনমুজুর বাবাও নিজে না খেয়ে পারলে ছেলেকে প্লে স্টেশন কিনে দিতে চায়। কিন্তু কজন আমরা এই প্লে স্টেশনে ছেলের সাথে বসে একটা গেম খেলি। বা বোঝার চেষ্টা করি কি ধরণের গেম খেলছে ছেলেটা ? দূর থেকে ছেলেকে প্লে স্টেশন খেলতে দেখলেই বিশাল এক প্রাপ্তিতে মন জুড়িয়ে যায়। আর বড় হয়ে আমিন জুয়েলার্স এর ছেলের মতো প্লে বয় হয়ে যায় ছেলেটা। প্লে স্টেশন বা নেটফ্লিক্স কোনোটাই খারাপ না। খারাপ হচ্ছি আমরা বাবা মায়েরা । যাদের সামর্থ আছে তারা সন্তানদের হাতে প্লে স্টেশন আর নেটফ্লিক্স তুলে দিয়ে একটা স্বস্তির ঢেকুর তুলি আর বেশির ভাগ আমরা কঠিন একটা চড় দিয়ে সন্তানদের বুজিয়ে দেই ওই সব প্রচন্ড খারাপ জিনিস। চড় থাপ্পড় খাওয়া সন্তানরা অন্যথায় বিত্তশালী বন্ধুর বাসায় ইচ্ছে পূরণ করে । সুতরাং চড় থাপ্পড় যে সমাধান নয় তা বোঝাই যায়। বাকি রইলো সামর্থবান বাবা মায়েরা। এরা কোনো ভাবেই একবেলা বের করে সন্তানদের সাথে প্লে স্টেশন খেলা বা মুভি দেখা কোনোটাই করতে রাজি না। কারণ এই বয়সে আবার এই সব নতুন করে শেখাটা কঠিন ব্যাপার ।

ফলাফল জেনারেশন গ্যাপ। সন্তানগুলু আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় নেটফ্লিক্সের দুনিয়ায়। আর আমরা দেখতে থাকি ওদের এই পরিবর্তন। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও এক সময় হারিয়ে যাওয়া ওদের আর ফিরে পাওয়া যায় না। ইচ্ছে করলেই তখন কষে একটা চড় লাগিয়ে দেয়া যায় না । কারণ নেটফ্লিক্স বা প্লে স্টেশন কোনোটাই সন্তানের ইচ্ছেতে হয়নি। আমরা বাবা মায়েরাই কিনে দিয়েছিলাম ওই সব। সুতরাং বমি করা সাপ সহ্য করতেই হবে ।

এই ধরণের সমস্যা লন্ডন নিউ ইয়র্কে আরো জটিল। এখানে চড় থাপ্পড় ভয়াবহ অপরাধ। আর নেটফ্লিক্স না দেখতে দেয়া আরো ভয়াবহ ব্যাপার। যেকোনো ইমিগ্র্যান্ট পরিবারে প্রথম প্রথম সন্তানদের সাথে বাবা মা ইংরেজি কপচায় বা কপচানো চেষ্টা করে । নিজের ছেলে মেয়েকে ফটফট করে ইংরেজি বলতে কার না ভালো লাগে ? কিন্তু বছর খানে না ঘুরতেই সন্তানের ইংরেজি না বুজতে পারায় কষে চড় লাগাতে ইচ্ছে করে। তখন ওদের বাধ্য করা হয় বাসায় বাংলা বলার জন্য। ফলাফল এরা সবাই বোবা কালা হয়ে যায়। সোজা ভাষায় এদের বলা হয় কনফিউসড দেশি । তবু ভালো বিদেশের মাটিতে কনফিউসড দেশি। কিন্তু দেশের মাটিতে সন্তানরা কনফিউসড হলে সমস্যা।

সব শেষ বাবা মায়ের এক্সপেরিমেন্ট হলো দীন শিক্ষা। এই একটিমাত্র পথ বাবা মা রা সন্তানদের উপর প্রয়োগ করে যখন বুজতে পারে আর কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। হটাৎ করে নিজেরা সুফী সেজে সন্তানদের নামাজ কলমার দিকে তাড়িয়ে বেড়ায়। বোঝার চেষ্টা করে না কনফিউসড সন্তানগুলু এতে আরো কনফিউসড হয়ে পরতে পারে। হা করে তাকিয়ে থাকে বাবা মায়ের দিকে । যারা একসময় নিজের হাতে প্লে স্টেশন আর নেটফ্লিক্স কিনে দিলো তারা এখন বলছে হারাম হালাল এর কথা । জন্ম নেয় অন্য রকম এক জেনারেশন এর ।

জেনারেশন এর সাথে চলা বাবা মা গুলু একটু অন্য রকম। এরা ইচ্ছে না করলেও সময় বের করে সময়টুকু সন্তানদের দেয়। কিছু শেখার চেষ্টা করে নিজের সন্তান থেকে। মন্দটুকু রেখে ভালোটুকুন তুলে রাখে ওদের জন্য।একটু কষ্ট হলেও এটাই একমাত্র পথ । আসুন সবাই মিলে একসাথে মুভি দেখি। আপনার ভালো নাও লাগতে পারে। কিন্তু আপনার সন্তানের ভালো লাগছে এটা ভেবেই ভালো থাকুন । নাহলে ওদের পেছনে পুরো ইনভেস্টমেনটাই একসময় জলে যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:০৮
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইরান ইসরাইলের আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ আর আমাদের সুন্নী-শিয়া মুমিন, অ-মুমিন কড়চা।

লিখেছেন আফলাতুন হায়দার চৌধুরী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩০

(ছবি: © আল জাযীরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক)

শ্রদ্ধেয় ব্লগার সামিউল ইসলাম বাবু'র স্বাগতম ইরান পোষ্টটিতে কয়েকটি কমেন্ট দেখে এই পোষ্ট টি লিখতে বাধ্য হলাম।
আমি গরীব মানুষ, লেখতে পারিনা। তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯




আমরা পৃথিবীর একমাত্র জাতী যারা নিজেদের স্বাধীনতার জন্য, নিজস্ব ভাষায় কথা বলার জন্য প্রাণ দিয়েছি। এখানে মুসলিম হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান চাকমা মারমা তথা উপজাতীরা সুখে শান্তিতে বসবাস করে। উপমহাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্যা লাস্ট ডিফেন্ডারস অফ পলিগ্যামি

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০


পুরুষদের ক্ষেত্রে পলিগ্যামি স্বাভাবিক এবং পুরুষরা একাধিক যৌনসঙ্গী ডিজার্ভ করে, এই মতবাদের পক্ষে ইদানিং বেশ শোর উঠেছে। খুবই ভালো একটা প্রস্তাব। পুরুষের না কি ৫০ এও ভরা যৌবন থাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রিয় কাকুর দেশে (ছবি ব্লগ) :#gt

লিখেছেন জুন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৩



অনেক অনেক দিন পর ব্লগ লিখতে বসলাম। গতকাল আমার প্রিয় কাকুর দেশে এসে পৌছালাম। এখন আছি নিউইয়র্কে। এরপরের গন্তব্য ন্যাশভিল তারপর টরেন্টো তারপর সাস্কাচুয়ান, তারপর ইনশাআল্লাহ ঢাকা। এত লম্বা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেরত

লিখেছেন রাসেল রুশো, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬

এবারও তো হবে ইদ তোমাদের ছাড়া
অথচ আমার কানে বাজছে না নসিহত
কীভাবে কোন পথে গেলে নমাজ হবে পরিপাটি
কোন পায়ে বের হলে ফেরেশতা করবে সালাম
আমার নামতার খাতায় লিখে রেখেছি পুরোনো তালিম
দেখে দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×