ভোর ৪.১০ এ ঘুম ভাঙতেই গলা শুকিয়ে এলো । আজকে বই বের হবার কথা মেলায়। জানি না বের হবে কিনা। এই সময়টায় মানুষ পাঞ্জাবি পরে কাঁধে ঝোলা ঝুলিয়ে মেলায় যাবে। প্রকাশনা উৎসবে মুচকি হেসে ইন্টারভিউ দেবে। এটাই স্বাভাবিক। আমি যাবো ব্রুকলিন থেকে ম্যানহাটন। সারাদিন এ নিয়ে কারো সাথে কোনো কথা হবে না। বিকালে এসে ঘুমিয়ে পরবো। প্রায় সব দিনই একই রকম। মেনে নেয়া কষ্টের।
প্রকাশককে ফোন করলাম। ধরলো না। টেক্সট করলাম। কোনোভাবেই যেন আমার বইটা মেলায় তোলা না হয়। প্রকাশক অত্যন্ত পরিণত আচরণ করলেন। আমার কোনো টেক্সট এরই উত্তর দিলেন না। এই ধরণের ট্রমা আমার বেশ পুরোনো।এদেশে বেশির ভাগ মানুষ এই ট্রমায় আক্রান্ত। হটাৎ করে অস্থির হওয়া। শরীরের পানি শুকিয়ে যাওয়া। এরা প্রায় সবাই সাথে করে পানির বোতল নিয়ে ঘুরে সব সময়। শরীরে এলকোহলের মাত্রা বেশি হলে এই রকম হয়। কিন্তু আমার শরীর কেন পানি শূন্য বুজলাম না ? এলকোহল নেই শরীরে। প্রতিদিন সকাল ৪.১০ এ উঠা মানুষের শরীরে এলকোহল বিক্রিয়া করে না।
ঘন্টা খানেক পর প্রকাশক বইটার ছবি তুলে পাঠালেন। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ছবি। অনেকগুলো বইয়ের মাঝে আমার বইটা। ফাল্গুনের রঙের সাথে মিলিয়ে হলুদ রঙের বইটা দেখে মন কিছুটা শান্ত হলো। শরীরে পানি এলো। বুজলাম শরীরের পানির মাত্রার নিয়ন্ত্রক মন।
সকালের আচরণ আর এখনকার আচরণের পার্থক্য কতটা পানি জাতীয় বোঝা দরকার। মন খারাপ হলেই পানি খাওয়ার কোনো বিধি নিষেদ নেই। ঢকঢক করে কিছুটা পানি গলায় ঢালার পর বুজলাম চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আশ্চর্য ব্যাপার। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো অদ্ভুত আচরণ করছে। কিছুটা ভয় লাগলো। আমার যে ইন্সুরেন্স আছে তাতে এই জাতীয় সমস্যা ডাক্তাররা ফ্রিতে দেখবেন কিনা কে জানে। আমেরিকায় অর্ধেক রোগী ইন্সুরেন্সের কথা চিন্তা করে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। উপায়ন্তুর আমিও হলাম।
সমস্যাটা বই না আমার বোঝা দরকার। ফ্ল্যাশ ব্যাকে গেলাম। ১৬ পাতার ১ ফর্মা মনে করার চেষ্টা করলাম। কিছুই মনে আসলো না। বই প্রকাশের এই অংশটা প্রকাশক আর প্রুফ রিডারের। প্রচ্ছদের কথা চিন্তা করলাম। ঐটাও আমি একটা অনলাইন ডিসাইন ফার্ম দিয়ে করিয়ে নিয়েছি। অল্প কিছু ডলার খরচ করলেই এই রকম প্রচ্ছদ অনলাইনে পাওয়া যায়। তাহলে আমি করলাম কি ? লেখা কিছুই মনে আসছে না। প্রুফ রিডিং আমার না। সিলেকশন আমার না। বুজলাম সকালের আচরণ বেশ যৌক্তিক ছিল। বেলা বাড়ার সাথের আচরণটা বরং অযৌক্তিক।
আয়োজনের কমতি ছিলোনা বই নিয়ে। টি-শার্ট বানালাম প্রচ্ছদের সাথে মিল রেখে। ইচ্ছে প্রথম দিকের পাঠকরা ফ্রি পাবে টি-শার্ট। বেচা বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা। লেখক স্বত্ব আমার। কিন্তু যে বইয়ের ১৬ পাতার ১ ফর্মাই মনে করতে পারছি না তার তো পাঠক স্বত্ব হবার কথা। আর বইয়ের সাথে টি-শার্ট না দিয়ে পানির বোতল দিলেই তো ভালো ছিল। পাঠকরা বই পড়তে পড়তে পানি শূন্যতায় ভুগতে পারে। পরের বার হয়তো প্রকাশককে পাঠক স্বত্ব আর পানির ব্যাপারটা বলা যেতে পারে।
বুজলাম পানি শূন্য সকাল বেলার মন বেশ পরিপক্ক ছিল। এই জন্যই হয়তো সকাল বেলার স্বপ্নকে সবার এতো ভয়। লেখক হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।পানি শূন্য মনের লেখা স্বাভাবিক মনে নাও ধরতে পারে । মন গুলুর আচরণ বেশ অদ্ভুত। মনকে কোনো ভাবেই পানি শূন্য হতে দেয়া যাবে না। লেখক আর পাঠকের মাঝে পানি শূন্য মনের এই পার্থক্য বুজতে পুরো একটা দিন লেগে গেলো আমার।
পানি শূন্য অবস্থায় লেখা বইটার নাম মিথস্ক্রিয়া। পাওয়া যাবে এক রঙা এক ঘুড়ির স্টলে। সরওয়ার্দী উদ্দ্যনের আসে পাশে। ষ্টল ৬৫৪। অবাক ব্যাপার বই এর দাম কত তাও মনে করতে পারছি না। লেখক হওয়া আসলেই অনেক কঠিন ব্যাপার। অন্তত যদি ঝোলা ঝুলিয়ে মেলায় যেতে না পারা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:০৯