somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পানি শূন্য লেখকের "মিথস্ক্রিয়া"

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ভোর ৪.১০ এ ঘুম ভাঙতেই গলা শুকিয়ে এলো । আজকে বই বের হবার কথা মেলায়। জানি না বের হবে কিনা। এই সময়টায় মানুষ পাঞ্জাবি পরে কাঁধে ঝোলা ঝুলিয়ে মেলায় যাবে। প্রকাশনা উৎসবে মুচকি হেসে ইন্টারভিউ দেবে। এটাই স্বাভাবিক। আমি যাবো ব্রুকলিন থেকে ম্যানহাটন। সারাদিন এ নিয়ে কারো সাথে কোনো কথা হবে না। বিকালে এসে ঘুমিয়ে পরবো। প্রায় সব দিনই একই রকম। মেনে নেয়া কষ্টের।

প্রকাশককে ফোন করলাম। ধরলো না। টেক্সট করলাম। কোনোভাবেই যেন আমার বইটা মেলায় তোলা না হয়। প্রকাশক অত্যন্ত পরিণত আচরণ করলেন। আমার কোনো টেক্সট এরই উত্তর দিলেন না। এই ধরণের ট্রমা আমার বেশ পুরোনো।এদেশে বেশির ভাগ মানুষ এই ট্রমায় আক্রান্ত। হটাৎ করে অস্থির হওয়া। শরীরের পানি শুকিয়ে যাওয়া। এরা প্রায় সবাই সাথে করে পানির বোতল নিয়ে ঘুরে সব সময়। শরীরে এলকোহলের মাত্রা বেশি হলে এই রকম হয়। কিন্তু আমার শরীর কেন পানি শূন্য বুজলাম না ? এলকোহল নেই শরীরে। প্রতিদিন সকাল ৪.১০ এ উঠা মানুষের শরীরে এলকোহল বিক্রিয়া করে না।

ঘন্টা খানেক পর প্রকাশক বইটার ছবি তুলে পাঠালেন। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর ছবি। অনেকগুলো বইয়ের মাঝে আমার বইটা। ফাল্গুনের রঙের সাথে মিলিয়ে হলুদ রঙের বইটা দেখে মন কিছুটা শান্ত হলো। শরীরে পানি এলো। বুজলাম শরীরের পানির মাত্রার নিয়ন্ত্রক মন।

সকালের আচরণ আর এখনকার আচরণের পার্থক্য কতটা পানি জাতীয় বোঝা দরকার। মন খারাপ হলেই পানি খাওয়ার কোনো বিধি নিষেদ নেই। ঢকঢক করে কিছুটা পানি গলায় ঢালার পর বুজলাম চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আশ্চর্য ব্যাপার। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো অদ্ভুত আচরণ করছে। কিছুটা ভয় লাগলো। আমার যে ইন্সুরেন্স আছে তাতে এই জাতীয় সমস্যা ডাক্তাররা ফ্রিতে দেখবেন কিনা কে জানে। আমেরিকায় অর্ধেক রোগী ইন্সুরেন্সের কথা চিন্তা করে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। উপায়ন্তুর আমিও হলাম।

সমস্যাটা বই না আমার বোঝা দরকার। ফ্ল্যাশ ব্যাকে গেলাম। ১৬ পাতার ১ ফর্মা মনে করার চেষ্টা করলাম। কিছুই মনে আসলো না। বই প্রকাশের এই অংশটা প্রকাশক আর প্রুফ রিডারের। প্রচ্ছদের কথা চিন্তা করলাম। ঐটাও আমি একটা অনলাইন ডিসাইন ফার্ম দিয়ে করিয়ে নিয়েছি। অল্প কিছু ডলার খরচ করলেই এই রকম প্রচ্ছদ অনলাইনে পাওয়া যায়। তাহলে আমি করলাম কি ? লেখা কিছুই মনে আসছে না। প্রুফ রিডিং আমার না। সিলেকশন আমার না। বুজলাম সকালের আচরণ বেশ যৌক্তিক ছিল। বেলা বাড়ার সাথের আচরণটা বরং অযৌক্তিক।

আয়োজনের কমতি ছিলোনা বই নিয়ে। টি-শার্ট বানালাম প্রচ্ছদের সাথে মিল রেখে। ইচ্ছে প্রথম দিকের পাঠকরা ফ্রি পাবে টি-শার্ট। বেচা বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা। লেখক স্বত্ব আমার। কিন্তু যে বইয়ের ১৬ পাতার ১ ফর্মাই মনে করতে পারছি না তার তো পাঠক স্বত্ব হবার কথা। আর বইয়ের সাথে টি-শার্ট না দিয়ে পানির বোতল দিলেই তো ভালো ছিল। পাঠকরা বই পড়তে পড়তে পানি শূন্যতায় ভুগতে পারে। পরের বার হয়তো প্রকাশককে পাঠক স্বত্ব আর পানির ব্যাপারটা বলা যেতে পারে।

বুজলাম পানি শূন্য সকাল বেলার মন বেশ পরিপক্ক ছিল। এই জন্যই হয়তো সকাল বেলার স্বপ্নকে সবার এতো ভয়। লেখক হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।পানি শূন্য মনের লেখা স্বাভাবিক মনে নাও ধরতে পারে । মন গুলুর আচরণ বেশ অদ্ভুত। মনকে কোনো ভাবেই পানি শূন্য হতে দেয়া যাবে না। লেখক আর পাঠকের মাঝে পানি শূন্য মনের এই পার্থক্য বুজতে পুরো একটা দিন লেগে গেলো আমার।

পানি শূন্য অবস্থায় লেখা বইটার নাম মিথস্ক্রিয়া। পাওয়া যাবে এক রঙা এক ঘুড়ির স্টলে। সরওয়ার্দী উদ্দ্যনের আসে পাশে। ষ্টল ৬৫৪। অবাক ব্যাপার বই এর দাম কত তাও মনে করতে পারছি না। লেখক হওয়া আসলেই অনেক কঠিন ব্যাপার। অন্তত যদি ঝোলা ঝুলিয়ে মেলায় যেতে না পারা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:০৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×